_ও বুবু, কিনি দিবি এইবার আমারে লাল জাম্পার? ও বুবু..
_কানের কাছে ঘ্যান্নর ঘ্যান্নরকরিচ্ছা চ্যই। হর ইয়ানতুন।
_আগে কও না দিবা, হিয়ার আগের শীতেও দিবা কইছিলা, আবার শীত আ্যাই গেছে, এবার কিনি দিবানি কও।। কও না....
_হাইত্তান্ন। যা, হার অ ইয়ানতুন। রাইতকা কিয়া খাইবি হেই চিন্তা কর।নবাব আইছে আংগো।
কথা শেষ হতেই বকুল চুলার আগুন কমিয়ে মলিচার শাক কাটতে কাটতে লক্ষ্য করল, আসলেই শীত বাড়ছে। নিজে এক ভাবে চালিয়ে নিতে পারবে, কিন্তু আট বছরের ভাইটার একটা সোয়েটার আসলেই দরকার। দুবেলা ভাতের যোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। সোয়েটার তো পরের ব্যপার। নাহ! এবারো মনেহয় পারবেনা ভাইকে লাল রঙের সোয়েটারে সাজাতে।।
কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়ল বাকের। মাথার উপর নারকেল গাছের পাতার ফাঁকে কি সুন্দর একটা চাঁদ দেখা যাচ্ছে। খুব ভাল লাগার কথা। কিন্তু সে ভাল লাগাতেতে পারছে না, ক্ষুধায় তার পেট জ্বলছে।পিন পিন করে আসা বাতাসে লেগে থাকা শীতে সে কাঁপছে।। দারিদ্রতাকে একপাশে ঠেলে সে ভাবছে, লাল সোয়েটার পরে কলিমুদ্দিন,সাদেকুর, সুজন, রশিদুলদের সাথে মাঠে গোল্লাছুট খেলছে, খেলার ফাঁকে সুজন আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে তার গায়ের লাল সোয়েটার, কলিমুদ্দিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিজেকে তার অনেক বড়লোক মনহচ্ছে। সে চিৎকার করে বলছে আমার কোন শীত নাই.......
শাকভাজি নামিয়ে বকুল দৌড়ে এসে বাকের কে ডাকতে লাগল,,
_বাকের....বাকের.....খাই ল চাইরগা।। বাকের....বাকুরে...
বাকের কে ঘুম থেকে আর না জাগিয়ে বকুল বাকেরের পাশে শুয়ে পড়ল। বাকেরের জন্মের সময় মা মারা গেলেও বাবা তো সেই কবেই ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিল তার হিসেব বকুল নিজেও জানেনা। বাকেরের যেমন এই একটা বোন ছাড়া কেউ নাই, বকুলের ও তেমনি এই পৃথিবীতে একটা মাত্র ভাই। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বকুলেরচোখে ঘুম এসে গেল। রাত অন্ধকার, তারচেয়ে বেশি অন্ধকার বকুলের চোখে।।
দুপুর বেলায় রেললাইনের পাড় দিয়ে হাটার সময় বাকের দেখল কয়েকজন লোক জড় হয়ে চেচাঁচ্ছে। কে যেন মসজিদের টাকা চুরি করে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে। কাছে যেতেই বাকের চিৎকার করে বলে উঠল- "আন্নের আঁর বুইজা রে ছাড়ি দেন, ও আফা,, আফারে... আঁর লালা জাম্পার লাইগদো ন। এজ্ঞো আন্নেগো ঠ্যাং এ হড়ি, আঁর আফারে ছাড়ি দেন।।"
ওরা ততক্ষনে ছেড়ে দিয়েছে বকুলকে। বকুল ও ততক্ষনে চলে গিয়েছে পৃথিবীর সকল স্বপ্ন,আবেগ,ভালোবাসা, উদ্দেশ্য, আশা, হতাশার ও উর্দ্ধে।।