বর...অই.... ব......র......অই....
৫০টাকা কেজি....
আড়াই ফুট উচ্চতার নয় -দশ বছর বয়সী ছোট্ট ছেলেটা আমার সামনে এসে কোমল মুখে বলল,, "ভাই নেন না এক কেজি, ৫০ টাকা। মিষ্টি হইবো।"
আমি চেয়ে রইলাম...
পাশে বসা ভদ্রলোকটি ছেলেটাকে কাছে ডাকলেন।
খুশি হয়ে ছেলেটি বলল- "নেন ভাই পঁয়তাল্লিশ টাকা রাখমু। আট কেজি আনছি, ছয় কেজি শেষ, আর এই দুই কেজি আছে।। হঠাৎ আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে জানতে চাইলো কাল হরতাল আছে কি না!! হরতাল না থাকলে বেচা হয় বেশী।"
যে উচ্ছাস নিয়ে নিমিষেই এতগুলো কথা বলল, সেই উচ্ছাস আবার নিমিষেই ম্লান হয়ে গেল যখন ভদ্রলোকটি বলল বরই তো নিবো না!!
হঠাৎ, লোকটি ছেলেটির হাত ধরে ফেললেন।। আর একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরুও করলেন-
ভদ্রলোকঃ কেজিতে তোমার লাভ হয় কত?
ছেলেঃ ৫-১০ টাকা।
ভদ্রলোকঃ বরই কিনা কত?
ছেলেঃ কেজি পঁয়ত্রিশ।
ভদ্রলোকঃ সারাদিনে কত থাকে হাতে?
ছেলেঃ পঞ্চাশ-ষাট এর মত।
ভদ্রলোকঃ বাসায় কে কে আছে তোমার?
ছেলেঃ আম্মা, বইন আর আমরা ২ ভাই।
ভদ্রলোকঃ আব্বু নাই তোমার?
ছেলেঃ আছিলো, আব্বা বিয়া করছে; এখন ওইখানে থাকে।
তাদের কথপোকথনের এক পর্যায়ে বেশ বিরক্ত হলাম। অযথা মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোন মানে আছে বলে আমার মনে হচ্ছিলো না!
ভদ্রলোকঃ নাম কি তোমার?
ছেলেঃ জনি।
ভদ্রলোকঃ বাহ সুন্দর নাম তো! পড়ালেখা করনা তুমি?
ছেলেঃ নাহ..
মনে মনে লোকটাকে সহস্রবার বকা দিলাম। চোখ সরাতে না সরাতেই আমাকে অবাক করে দিয়ে লোকটি পরম স্নেহভরে জনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,, যত্নের সাথে শার্ট এর কলারের ভাঁজ ভেংগে দিলেন।। সাথে মানিব্যাগ থেকে একটা ১০০টাকার নোট বের করে জনির হাতের মুঠোয় গুঁজে দিলেন। আর বললেন- "কিছু খেও।"
মুহূর্তেই লোকটির সম্পর্কে আমার সকল ধারণা বদলে গেল! আরো অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করলাম এত মানুষের ভীড়ে জনির চোখে দু ফোটা জল দেখে।।
যেই লোকটাকে একটু আগে হাজারটা বকা দিলাম,,, তাকে এখন হাজারটা স্যালুট দিতে ইচ্ছে করছে।।।
আহংকার, হিংসা, প্রতিহিংসা, ঘৃণা, ষড়যন্ত্র, প্রতারণা আমাদের মাঝে প্রবল ভাবে বিরাজ করে। কিন্তু তখন লোকটিকে দেখে মনে হলো "মায়া" শব্দটা এখনো টিকে আছে বলেই আমরা টিকে আছি, নয়তো কবেই জ্বলে পুড়ে ভেসে যেতাম!!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:১৪