রিকশাওয়ালা রিকশা টানে
ক্রিং ক্রিং ক্রিং;
বেল বাজিয়ে, পা চালিয়ে
ঘুরিয়ে প্যাডেল রিং।
খুব সকালে, খুব বিকেলে
সন্ধ্যা নামি নামি;
ঘুরিয়ে চাকা, স্বপ্নালূ তার
দৃষ্টি অনুগামী।
তীব্র রোদে ঘাম ঝড়িয়ে
ঘুরায় সে তিন চাকা,
বিনিময়ে সামান্য পায়
পরিশ্রমের টাকা।
ঘাম বিকোবে, যাত্রী খোঁজে
এদিক সেদিক চায়,
খুব যতনে পকেট ভরে
যখন সে যা পায়।
মাঝে মাঝে হেথায় সেথায়
মুছতে গায়ের ঘাম,
টং দোকানে চায়ের কাপে
সাময়িক বিশ্রাম।
আসন গেঁড়ে, পা ছড়িয়ে
গুনগুন গুন গান;
ক্লান্তি জমাট সিগারেটে
প্রচন্ড সুখটান।
ঝরঝর ঝর বৃষ্টি যখন
রাস্তা জুড়ে ঢল,
ঘুরছে ক্রমশঃ তিন চাকা তার
লুকিয়ে চোখের জল।
চিন্তা মনে কেমনে তবে
শোধবে জমার টাকা?
যাত্রীবিহীন সংকটে তার
ঘুরছে গাড়ির চাকা।
মালিক কি আর বুঝবে এসব
চাইবে সে তার জমা,
বৃষ্টি-বাদল কি যায় আসে
করবে না তো ক্ষমা।
ঘুরছে চাকা, জমছে মনে
দুঃখ অবিরাম;
কে আর দেবে রিকশাওয়ালার
চোখের পানির দাম!
কেমন মানুষ আমরা, যখন
ওড়াই হাজার টাকা;
আড্ডাবাজী, ডেটিং, প্রেমে
পকেট করি ফাকা।
রিকশাওয়ালা বাড়তি ভাড়া
চায় যদি পাঁচ টাকা,
আমরা তখন খুব হিসেবী
প্রচন্ড একরোখা।
নীতি কথা, কটু কথা,
শোনাই নানান গালি;
এসব দেখে সুশিল সমাজ
হাসে, বাজায় তালি।
''বেশ করেছেন, বেটা একটা
আস্ত বেয়াদব,
দুই গালে দুই থাবড় দিলে
শিখতো সে আদব!''
পাঁচটা টাকায় রিকশাওয়ালার
চরিত্র খায় মার,
আড্ডা, প্রেমে হাজার টাকা
কেবলই আবদার।
রিকশাওয়ালা রিকশা টানে
সেওতো মানুষ,
জাগ্রত হোক মনুষ্যত্ব
জাগুক সবার হুশ।
সবার মত সেওতো চায়
এতটুকু সম্মান,
দেশ গঠনে রয়েছে তার
অনন্য অবদান।
গ্যাস বাঁচিয়ে, তেল বাঁচিয়ে
কেবল গায়ের জোড়ে,
ঘুরায় সে তার তিনটি চাকা
নিজের মতন করে।
রিকশাওয়ালা রিকশা টানে
স্বপ্নালূ তার দৃষ্টি,
তীব্র রোদে কিংবা যখন
আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে
বেঁচে গায়ের ঘাম,
যাত্রীদেরও উচিৎ দেওয়া
ঘামের সঠিক দাম।।
রচনাকালঃ ২৫-০৮-২০১৪…