somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারের ‘ঘুমে’ বাড়ছে কান্না! নিমতলী থেকে চুড়িহাট্টা। কিভাবে শুরু হলো এই ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাত!!!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়ি।

~বাঁকা হয়ে যাওয়া দুটো চাকা আর একটা কাঠামো দেখে বোঝা যায়, এটা একটা পুড়ে যাওয়া রিকশা। তার ওপরে ভেজা সুতি কাপড় দিয়ে পুড়ে যাওয়া মানুষের দেহাবশেষ ঢেকে রেখেছেন স্থানীয় লোকজন। একজন জানালেন, রিকশাটিতে এক দম্পতি ও একটি শিশু ছিল। তিনজনই রিকশার সঙ্গে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছেন।

~চুড়িহাট্টার পুড়ে যাওয়া বাড়িটির সামনে ও পাশের সড়কটিতে এক নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ নিমতলীর কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০১০ সালের ৩ জুনের বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় রাসায়নিকের আগুনে জ্বলে উঠেছিল নিমতলী, যাতে প্রাণ হারান ১২৪ জন। মুহূর্তেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চারদিকে পড়ে ছিল লাশগুলো। ঘিঞ্জি অলিগলির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক ব্যবসা বা শিল্পকারখানা কতটা বিপজ্জনক, আট বছর আগে তা দেখেছে মানুষ। কিন্তু শিক্ষা হয়নি। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর তালিকা করে ৮০০ রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত কাজটি আর হয়নি।

~সেই নিমতলীর পুনরাবৃত্তি যেন চুড়িহাট্টায়। রাস্তাজুড়ে ১৫ থেকে ২০টি পুড়ে যাওয়া রিকশার কাঠামো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। দুটি পিকআপ ভ্যান, দুটি প্রাইভেট কার, কয়েকটি মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার কাঠামোও দেখা যায়। কোথাও কোথাও ধোঁয়া উঠছে। এগুলোর মধ্যেই মানবদেহের অবশিষ্টাংশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। স্থানীয় লোকজন আগেই কয়েকটি দেহাবশেষ দেখে মসজিদ থেকে সুতি কাপড় ভিজিয়ে এনে ঢেকে দিয়েছেন।

~এত মৃত্যু সবাইকে নির্বাক করে দিয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও বেঁচে থাকতে পেরে সৃষ্টিকর্তাকে বারে বারে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন বেঁচে যাওয়া লোকজন। রাত তখন শেষের পথে। তখন বিকট দুম দুম শব্দ করে বিস্ফোরণ ঘটছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানালেন, সুগন্ধির ক্যানিস্টারগুলো সশব্দে বিস্ফোরিত হচ্ছে। বাজছে পুলিশ আর ফায়ারকর্মীদের বাঁশি। ফায়ার ইঞ্জিনগুলোর ঘরঘর শব্দ চলছেই। সেসব ইঞ্জিনের পোড়া ডিজেল আর সদ্য পুড়ে যাওয়া জনপদের ধোঁয়ায় একাকার পুরো এলাকা।

~চকবাজারের এই এলাকাটি মূলত প্রসাধনী ও প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কাঁচামাল বেচাকেনার কেন্দ্র। এই এলাকায় প্রচুর নকল প্রসাধনী বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। সারা দেশ থেকেই ব্যবসায়ীরা এখানে পাইকারি দরে প্রসাধনী কিনতে আসেন।

পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডস্থল। রাজ্জাক ভবনে আগুন লাগে। সেখানে রাসায়নিক গোডাউন ছিল।
~চুড়িহাট্টা মসজিদের উল্টো দিকের বাড়িটির ভূগর্ভস্থ তলাসহ একতলা ও দোতলায় গড়ে তোলা হয়েছিল সুগন্ধির বিশাল মজুত। ওই বাড়ির সামনে এসে মিলেছে চারটি সরু গলি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন লাগার সময় ওই গলির মোড়টি ছিল মানুষ, গাড়ি, মোটরসাইকেল আর রিকশা দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। যানজটের কারণে থমকে ছিল সব। সুগন্ধির ক্যানভর্তি বাড়ি থেকে আগুনটা রাস্তায় ছড়িয়েছে, নাকি রাস্তার কোনো গাড়িতে লাগা আগুন ওই বাড়িকে গ্রাস করেছে, তা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।

~একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, একটি প্রাইভেট কারের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে দুটি গাড়ির একটির সিলিন্ডার অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। আরেকটি গাড়ি হাইব্রিড (টয়োটা অ্যাকুয়া), যেটাতে কোনো সিলিন্ডার ছিল না।

~চুড়িহাট্টা মসজিদ–লাগোয়া গলিতে প্লাস্টিকের গুটির দোকানদার রেজাউল করিম তখন দুই কর্মচারীকে নিয়ে দিনের বেচাকেনার হিসাব মেলাচ্ছিলেন। হঠাৎই বিকট বিস্ফোরণের শব্দে তাকিয়ে দেখেন থমকে থাকা রাস্তায় একটি গাড়িতে আগুন লেগে তা কয়েক ফুট শূন্যে উঠে গেছে। মুহূর্তেই আগুনের ঢেউ যেন গোটা রাস্তাকে গ্রাস করে। দুই কর্মচারীকে নিয়ে দৌড়ে বের হয়ে যান, দোকানের ঝাঁপ ফেলারও চিন্তা করেননি।

~আবার ওই পথ ধরে তখন মোটরসাইকেলে যাওয়া ফারুক হোসেন বলেন, চার গলির ওই মোড়ের দুটি বড় রেস্তোরাঁ। সেগুলোর চুলার গরমে জায়গাটা এমনিতেই একটু গরম হয়ে থাকে। রাতে যাওয়ার সময় তিনি ওখানে রেস্তোরাঁর খাবারের গন্ধ ছাড়াও সুগন্ধির গন্ধ পান। ৫০ গজ এগোতেই বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পান। পরে ঘুরে ওই বাড়ি থেকে আগুন জ্বলতে দেখেন।

রাজ্জাক ভবনে ছিল প্রসাধনীর কারখানাও।

~স্থানীয় লোকজন বলছেন, আগুন লাগার পর মুহূর্তের মধ্যেই তা ঢেউয়ের মতো করে চারপাশের রাস্তায় থাকা মানুষ ও যানবাহনগুলোকে গ্রাস করেছে। আশপাশে অনেক ভাসমান ফল বিক্রেতা, পান-সিগারেট বিক্রেতাও ছিলেন। আগুনে এই লোকগুলোর অনেকেই রাস্তার ওপরেই জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়েছেন।

~আগুন লাগার পরে পুড়ে যাওয়া এসব যানবাহনের কাঠামোগুলো রাস্তার ওপরই ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে ছিল। কোনো কোনোটির তলায় মানুষের দেহাবশেষ।

~এখানে এমন কোনো বাড়ি নেই, যার নিচতলায় দোকান বা কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়নি। দোকানগুলোর মধ্যে প্রসাধনী ছাড়াও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্লাস্টিকের গুটির (চিপস) দোকান। স্থানীয় লোকজন বলছেন, যে কয়টা বাড়িতে আগুন লেগেছে, তার মধ্যে দুটির নিচে গুটির দোকান ছিল। এগুলো দ্রুত জ্বলে আগুন বাড়িয়েছে।

~এত ব্যস্ত ব্যবসায়িক এলাকা হলেও এখানে ঢোকার সড়কগুলো একেবারেই সরু। কোনো সড়কেই দুটি গাড়ি পাশ কাটানোর জায়গা নেই। ফায়ার সার্ভিসের বড় পানিবাহী গাড়ি এখানে ঢুকতে না পারায় প্রচণ্ড সমস্যায় পড়তে হয়েছে। পাম্প দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের পুরোনো কারাগারের পুকুর থেকে পানি আনা হয়। যার কারণে পানির গতি ছিল কম। আর মানুষের পায়ের চাপে পাইপগুলো মাঝেমধ্যেই পানিশূন্য হয়ে পড়ছিল। ফায়ার সার্ভিসের লোকদের মাইক নিয়ে বারবারই বলতে হচ্ছিল, ‘পাইপগুলো পাড়াবেন না।’ এ ছাড়া চুড়িহাট্টা মসজিদ এবং আশপাশের কয়েকটি বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংক থেকেও পানি সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিস।

~চুড়িহাট্টা মসজিদের অজুখানায় বসে কাঁদছিলেন আবদুল আজিজ ও তাঁর মেয়ে। আজিজ জানান, তাঁর ১৮ বছরের ছেলে ইয়াসিন রনি এখানে ছিলেন। আগুন লাগার পর থেকে ইয়াসিনের ফোন বন্ধ, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে লাশের সারি।
~মো. রায়হান খুঁজছেন তাঁর বোন সোনিয়া, দুলাভাই মিঠু ও দুই বছরের ভাগনে শাহীদকে। আগুন লাগার সময় ওই পরিবার এই রাস্তা দিয়ে রিকশায় করে যাচ্ছিল।

~ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ছবি মোবাইলে বের করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাইনুল হোসেন। পুরে যাওয়া বাড়িটির উল্টো দিকে হায়দার মেডিকো বলে একটি ওষুধের দোকান চালাতেন আনোয়ার। ঘটনার সময় সেখানে আনোয়ারের তিন বন্ধু নাসির, হীরা ও আরেক আনোয়ার ছিলেন। এঁদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

~দিবাগত রাত তিনটার পর থেকে ঘটনাস্থলে পাওয়া মৃতদেহগুলো একের পর এক ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি মো. ইউসুফসহ কয়েকজন লাশ উদ্ধারের কাজ করছিলেন। হাত দুটো দেখিয়ে ইউসুফ বলেন, ‘দেখছেন, লাশ তুলতে তুলতে কেমন হয়ে গেছে।’

~সকাল আটটা নাগাদ ঢাকা মেডিকেলে জমা হয়ে গেছে ৬৫টি লাশ। নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে হাসপাতাল চত্বরে জমা হয়েছেন হাজারো মানুষ। কিন্তু অঙ্গার হয়ে যাওয়া এ লাশ তাঁরা চিনবেন কী করে? লাশ দেখে অসহায় মানুষগুলো কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ারও কেউ নেই।

তথ্যসূত্রঃ সরকারের ‘ঘুমে’ বাড়ছে কান্না

~সকল আপডেট পাওয়া যাবে এখানে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×