“আল্লাহ পাক গণী বা ধনী। আর তোমরা ফকীর বা গরীব।” (সূরা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৩৮) এ আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক নিজের ‘গণী’ ছিফত বা গুণের বর্ণনা দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি সবকিছু থেকে বেনিয়াজ। কারো বা কোন কিছুর তিনি মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী নন। বরং সকলেই এবং সবকিছুই তাঁরই মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী। এ বর্ণনা উনার খালিক্ব বা স্রষ্টা হিসেবে। আর যিনি আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, উনাকে আল্লাহ পাক নিজের সকল গুণে গুনান্বিত করেই সৃষ্টি করেছেন। তাই তিনিও ধনী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক আপনাকে সৃষ্টির মধ্য থেকে ধনী হিসেবে কবুল করেছেন।” (সূরা দ্বোহা-৭) এ আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক উনার পিয়ারা হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে ‘গনী’ ছিফত বা গুণের বর্ণনা দিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ পাক খালিক্ব বা স্রষ্টা হিসেবে যেরূপ বেনিয়াজ অর্থাৎ কারো মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী নন। তদ্রুপ যিনি আল্লাহ পাক-উনার হাবীব মাখলুক বা সৃষ্টি হিসেবে তিনিও বিনিয়াজ অর্থাৎ তিনিও কোন মাখলুকাতের মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী নন। বরং সমস্ত মাখলুকাতই তাঁর মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা কি জানো, সর্বাধিক দানশীল কে? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই অধিক জ্ঞাত। তিনি বলেন, সর্বাধিক দাতা হচ্ছেন আল্লাহ পাক, অতঃপর বণী আদমের মধ্যে আমিই সর্বাধিক দাতা।” (বুখারী) আরো বর্ণিত রয়েছে যে, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দু’টি কোর্তা মুবারক ছিল যা ক্রয় করা হয়েছিলো ২৭টি উটের সমপরিমাণ মূল্য দিয়ে।” (সুবহানাল্লাহ) অনেকে বলে থাকে যে, ‘হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভাবী ছিলেন, নিঃস্ব ছিলেন, গরীব ছিলেন। যার কারণে তিনি না খেয়ে থেকেছেন, ক্ষুধার তাড়নায় পেটে পাথর বেঁধেছেন ইত্যাদি’- এ ধরণের আক্বীদা পোষণ করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মূলতঃ আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কাছে যা ছিল তা দান করে দেয়ার কারণে অনেক সময় তিনি না খেয়ে থেকেছেন। অভাবী, নিঃস্ব বা গরীব থাকার কারণে নয়। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি আমার নিকট উহুদ পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, তবে আমি তখনই সন্তুষ্ট হবো যখন তিন দিন অতিবাহিত হতে না হতেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়।” (বুখারী, মিশকাত) এছাড়াও তিনি যেহেতু উম্মতের জন্য আদর্শ, তাই যারা গরীব বা অভাবগ্রস্ত উম্মত তারা যেন অভাবের কারণে আল্লাহ পাক-এর নাফরমানী (চুরি-ডাকাতি) না করে। বরং ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ পাক-এর ফরমবরদারী করে। এ আদর্শ স্থাপনের জন্যেই তিনি না খেয়ে থেকেছেন, পেটে পাথর বেঁধেছেন, ক্ষুধা সহ্য করেছেন বা গরিবীকে অবলম্বন করেছেন। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি বন্টনকারী। আর আল্লাহ পাক দান করেন।” (বুখারী, মুসলিম) মূলতঃ সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মাখলুকাতের যা কিছু প্রয়োজন সবকিছুরই দাতা হলেন আল্লাহ পাক এবং তার বন্টনকারী আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতএব, ‘আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধনী ছিলেন এবং তাঁর উছীলাতেই বান্দা তথা উম্মত ধনী হওয়ার নিয়ামত লাভ করে থাকে’- এ আক্বীদা পোষণ করাই প্রত্যেক উম্মতের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ পাক আমাদের তাওফীক ইনায়েত করুন। (আমীন)
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ, পৃষ্ঠা: ১৬৫)