মার্কিনিদের তথা পশ্চিমা বিশ্বের অবিশ্বস্ততা রাশিয়া ও চীনের তুলনায় অনেক বেশী। সাম্প্রতিক ঘটনা পর্যেবেক্ষন করলে দেখা যাবে সিরিয়া ও ইরানের এবং ভারত পাকিস্তানের ক্ষেত্রে চীন রাশিয়া ও মার্কিন পশ্চিমাদের ভূমিকা কি ছিলো।
মূল্যবোধ : মার্কিনিরা তথা পশ্চিমারা গণতন্ত্রের কথা বললেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তিকে তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। হয় সামরিক / বেসামরিক স্বৈরাচার বা তাদের পা চাটা নাম গণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসলে তখন তারা নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের কথা বলে তাদের সমর্থন যোগায়। ফিলিপাইনের মার্কোস ইরানের শাহ রেজা পাহলভী পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খান জিয়াউল হক , উপসাগরীয় রাজা বাদশারা সবই মার্কিনিদের পশ্চিমাদের মদদ প্রাপ্ত ছিলো আছে , পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র কে পুরাটাই ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় মার্কিনিরা সামরিক জান্তাদের লাই দিয়ে , শত কোটি ডলার পিছেন থেকে ঢেলে। এখানে তারা নিরাপত্তার কথা বলে। আবার বার্মার শাসক গোষ্ঠী যখন ভাগের পেয়ালা চীনের দিকে রাখছিল তখন বার্মার জন্য গণতন্ত্রের ও মানবতার পীর সাহেব বোনে যায় মার্কিনি ও পশ্চিমারা , আর এখন চীনের ভাগের বাটি নিজেদের মধ্যে নিয়ে যখন চুক চুক করে ঢোক গিলছে এখন আর মানবতা গণতন্ত্র ছবকের দরকার নাই , ইচ্ছেমতো ওরা মারতে থাকুক রোহিঙ্গা ও কারেনদের। মিশরের তরতাজা একটি গণপ্রতিনিধত্বশীল রাষ্ট্রপতিকে উৎখাত করলো স্বৈরশাসক সি সি , আর গণতন্ত্রের সোল্ এজেন্টরা তবলা বাজাচ্ছে।পেলেস্টাইনে হামাস ও আলজেরিয়ায় গণরায়ে যেসব দল বিজয়ী হল কিন্তু মার্কিনি ও পশ্চিমারা তা মানতে নারাজ কেননা এরা তাদের তল্পিবাহক হবে না। যেসব উপসাগরীয় রাজা বাদশারা এতদিন আম্রিকি ব্রিটিনি করে মুখে ফেনা তুলতো , তাদের বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে মার্কিনি পশ্চিমারা ইরানের সাথে চুক্তি করে তাতে সৌদি বাদশাদের মতো মার্কিনি পশ্চিমা বন্ধুদের আপত্তি সত্ত্বেও। অথচ সিরিয়া পাকিস্তানের দিকে থাকলে দেখা যাবে , সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়া একটি বিশ্বস্ত বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ন হয় , পাকিস্তানের ক্ষেত্রে চীন তো ভারত মার্কিনেরদের টুটি চেপে ধরেছে।
একবিংশ শতকের দুইয়ের দশকে এসে বিশ্বের একটা বিশেষ মেরুকরণ শুরু হয়েছে। চির বন্ধু রাশিয়াকে ছেড়ে ভারত মার্কিনিদের বেছে নিয়েছে কৌশলগত বন্ধু হিসাবে। আবার রাশিয়া বেছে নিচ্ছে পাকিস্তানকে , চীনও পাকিস্তানের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত বন্ধু , মার্কিনিরা যেমন পাকিস্তান তুরস্ক ও উপসাগরীয় দেশের মত বিশ্বস্ত সহযোগী হারাচ্ছে ( বাংলাদেশও হারাতে বসেছে , আরেকদিন এটা নিয়ে লেখবো ) তেমনি ভারত ইরানের মতো অবিশ্বস্তদের বন্ধু হিসাবে কাছে ঠানার কসরত করছে।
২০১৩ থেকে ২০১৬ তে এসে দেখা যাবে মার্কিনিরা এশিয়াতে ও মধ্যপ্রাচে তাদের অবস্থান হারাচ্ছে যেখানে রাশিয়া সামরিক ও চীন অর্থনৈতিক কৌশলে মার্কিনিদের ঝুলি খালি করছে। সিরিয়া আগেও ছিল না , ইরান আগে মার্কিন বিরোধী হলেও এখন দোঁয়াশলা , কাতার ও নাইয়ের তালিকায় , ইরানের ভেজাল নিয়া উপসাগরীয়দের ক্ষোভের মধ্যে আছে মার্কিনিরা। পাকিস্তানকে লেবুর মতো চিপাইয়া তিতা বাহির করছিলো এতোদিন , এখন পাকি রা চীনাদের কোলে , চীনারা না রাশিয়ানরাও পাকিস্তানের পায়ের তলায় মাটি যোগাচ্ছে , সাম্প্রতিক ফিলিফাইনের মতো বংশবদও এখন বিগড়ে গেছে , ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া দোটানায় আর রইলো জাপান ও সিঙ্গাপুর, ক্যু ও গুলেন ইস্যু নিয়ে তুর্কীরাও চরম বিরক্ত , মার্কিনদের বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখায়ে রাশিয়া ইরানের সাথে সিরিয়া সংকট নিয়ে একটা মীমাংসায় পৌঁছানোর চেষ্টা , তুর্কিরা মার্কিনিদের খাঁচার বাইরে তারই ইঙ্গিত করে।
একটা কথা মনে পড়ল , গলির দ্বারে এক ভন্ড ফকির ভিক্ষা করত আর বলত গোলেমালে যাকরে দিল , একদিন এক ভদ্রলোক যাওয়ার সময় তার কাছে গিয়ে চুপি চুপি বললো , ভাই এইভাবে আর যাইবো রে কদিন ? তখন ভিক্ষুক বললো , এইভাবে আর যাই যতদিন।
মার্কিনি পশ্চিমাদের অবস্থাও এখন এইভাবে আর যায় যতদিন।
তবে ঠিক চীন ও রাশিয়া অনেকটা বিশ্বস্ত বন্ধু পশ্চিমাদের তুলনায়। আমার ধারণা পাকিস্তান ও তুর্কিরা মার্কিনিদের ঘাটছাড়া হওয়ার চেষ্টা সঠিক সিদ্ধান্ত যেমন , তেমনি ভারত রাশিয়া ছাইড়া মার্কিনিদের কোলে ওঠাও চরম একটি ভুল পদক্ষেপ , ভারতের মনে রাখা উচিত এই মার্কিনিরা , ভারতিয় কূটনীতিক দেবযানীর পেন্ট্রি খুলছিল , যা ইতিহাসের কোনো নজির নাই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যারা মার্কিন ও ভারতের খদম অনুসরণ করে চলছে তারা কি মার্কিনি বন্ধুত্ব নিয়ে আরেকবার চিন্তা করবে? চীন ই বাংলাদেশের বিশস্ত বন্ধু হতে পারে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে।