somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃম্মরীর কাছে চিঠি

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় মৃম্মরী,
যে সময়টাতে তোমাকে লিখতে বসলাম। সন্ধ্যায় বৃষ্টি হয়েছিল, কিছুক্ষন আগে বাজার থেকে পিয়ন কাকার মত সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরেছি। সদ্য ভেঁজা পিচঢালা পথ বায়না ধরেছে পাড়াগাঁর লাজে মরে যাওয়া নবধূর মত! দুপাশের দেবদারু গাছগুলো যেনো বিমুগ্ধ নাগরিক স্ট্যাচুর মত নির্জন সাক্ষী। এখনো অবশ্য চারদিকে বিজলী চমকাচ্ছে অহরহ। বাড়ান্দায় বসে বাহিরের আদ্র পরিবেশ টা দেখছি আর তোমাকে লিখছি। আকাশের মেঘ ভাঙা আলোর রশ্মি বিনা অনুমতিতে প্রায়ই আমার ঘরে প্রবেশ করে জ্বলজ্বলিয়ে উঠে। জানো? আমারো না ভয় লাগে! কখন আবার বজ্রের ধমকে সিগারেটের মত নিভে যায় জীবনের আলোটা। কংক্রিটের পাকা উঠানে যখন আসমানি শুভ্রনিল আলোর রেখা সূর্য কিরণের মত লম্বভাবে সরল রেখা বরাবর পরে তখন তার রিপ্লেকশন এসে ধাক্কা খায় আমার চশমার গ্লাসে। জানিনা তোমার মন আজ কেনো মেঘের মত বিষণ্ণ? কি বা তার কারণ? মেঘের সাথে আমার প্রায় কথা হয়। মেঘপরীদের একজন তো তুমিও।

মিম, বাবা বাসায় নেই। আম্মু আজ চারদিন হল বড় আপুর বাড়ি বেড়তে গেছে। ঠান্ডা লাগছে। ঘরের বড় বধূ আকাশ কে বলেছি এক মগ কফি বানিয়ে দিতে। খুব মিস করছি তোমায়। দেখো আমি কেমন গর্দভ! কেমন আছো সেটাই জানা হল না। ভালো আছো নিশ্চয়? এই বেজার জীবনে না পাচ্ছি চাকরী আর না পাচ্ছি তোমায়। জীবনানন্দের মত হাটছি পথে পথে।

আচ্ছা মিম তোমার কি আমার দুস্ত আশিষের কথা মনে আছে? বড় ফ্রেমের চশমা পড়া ছেলেটা। গত সপ্তাহে তার ছোট বোন চিত্রার বিয়ে গেলো। আশিষ কেবল আমায় নিমন্ত্রণ করেনি তারসাথে বিয়ের অনেক কাজের দায়িত্ব ও আমার উপরে চাপিয়ে দিয়েছি। ঐ বিয়েতে তরুন উপন্যাসিক সাদাতের সাথে দেখা। বেচারা খুব ভাল মানুষ। কলকাতায় থাকেন। আমায় কার্ড দিয়ে বলেছেন সেখানে গেলে উনার সাথে যেনো অবশ্যই দেখা করি। আলাপের এক ফাঁকে তোমার কথা বললাম উনাকে। বায়না ধরে বলেছে তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেনো উনার মস্ত বড় দালান বাড়িটায় দুরাতের জন্য হলেও বেড়াতে যাই। বেচারা এত করেই যখন বলল ভাবছি একবার নাহয় দুরাত কাটিয়ে'ই আসবো। অন্য কোন কারণে না হলেও আমাদের মধুচন্দ্রিমার রাতটা তো কাটানো যায়। কি বল? আজ সন্ধ্যায় পুকুর পাড়ে গিয়েছিলাম, ঠিক যেখানটায় তুমি আঁচল বিছিয়ে বসতে সেখানে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে মৃদু আলোয় ছলছল শব্দ করা পানির দিকে তাঁকিয়েছিলাম। এছারা আর কি করবো বল? পানির উপরিভাগে একটা হাসের ছানা ভাসছে, ঠিক আমার মতই একা মনে হল তাকে। সঙ্গীহীন জীবন হয়তো তার ক্ষেত্রে ও বহমান। মনে মনে নিজের সাথে করেছি কথোপকথন। আর বলেছি,
"প্রতিদিন স্নানে নেমে এসো সলাজ পুকুরে
চুল থেকে ঝরাও মুক্তোদানা
আমিতো সেই কবেই বেছে নিয়েছি হাসের জীবন।"

আরেকটা কথা শোন, আমার বড় বোনের মেয়ে রোদেলা তোমার কথা জানতে চেয়েছে। আমি বলেছি বেশ ভাল আছো। তোমার আমার সম্পর্কের কথাটা রোদেলা বেশ ভাল ভাবেই জানে। এছাড়া আর কেউ না। আরো বলেছে তার মামিকে খুব মিস করছে মেয়েটা। সে এবার মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে তাই তাকে উপহার স্বরুপ আমি একটি হাত ঘড়ি কিনে দিয়েছি। তুমি আগামী তে রোদেলাকেও একটা চিঠি লিখো। মেয়েটা বেশ খুশি হবে। জানো? তুমি পাশে নেই বলে তোমার ছোট বোন লিমা আমায় ক্ষুদে চিরকুট পাঠায়। বেশ ফাজিল হয়ে গেছে ও আজকাল। চিরকুটে দুয়েক লাইন ছন্দ সাজিয়ে কবিতাও লিখে। আর তা কেমন হয়েছে তার মন্তব্য করতে বাধ্য করে আমায়। মেয়েটা আড়ালে খুব ভালবাসে বোধয়! কিন্তু জানেনা আমিযে তোমার খোঁপায় জীবন বেঁধেছি মরন বেঁধেছি।

ইতি,
তোমার মুদ্রা।
আমাকে তুমি মুদ্রা বলে ডাকতে। অবশ্য গভর্নরের সাক্ষরের নিচে কাগজে ক্ষুদ্রাংশ কে যা আমরা অর্থের পরিমাপ তত্ত্বের ভিত্তিতে লেনদেন করি সে নামটা কেনো দিয়েছো তার কারন আজো খুঁজে পাইনি। কে যানে! হয়তো দু-দন্ড শান্তির লেনদেনের তাগিদেই এই নামটা দিয়েছিলে।

কুমিল্লা, ২৭শে ভাদ্র ১৪২৩
সন্ধ্যা ০৮.৩৯।


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×