somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাত্রীর খোঁজে

২০ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৫ই মার্চ ৪বছর প্রবাস জিবন কাটিয়ে দেশে গিয়েছিলাম। বড়ভাই দেশে আসছে তার বিয়ে পাকাপাকি হয়ে আছে বছর খানেক আগে থেকেই। এবার বড় ভাই আসলেই বিয়ে হয়ে যাবে।
গেলাম দেশে,গিয়ে দেখি আমার জন্য পাত্রী দেখতে আগ্রহি সবাই। প্রথমে বাধা দিয়েছিলাম পরে মেঘে মেঘে বেলা কম হলনা ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।
শুরু হল পাত্রী দেখা। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম। বাবা মা যাকেই দেখেন তাকেই পছন্দ করে বসেন। কিন্তু আমার পছন্দের ধারে কাছেও কাওকে পাইনা। এভাবে বেশ কয়েকটা মেয়ে দেখার পর আমাদের বাড়ির সবার একটা মেয়েকে পছন্দ হল। এবার আমার দেখার পালা। আমার সাথে দুলাভাই ছোটভাই আর এক ভাবিকে নিয়ে একদিন গেলাম মেয়ের বাড়ি মেয়েকে দেখার জন্য।
এখানে বলে রাখা ভাল আমার বাড়ির লোকজন মেয়ের রুপ গুনের এত প্রশংসা করেছে যে আমি মেয়েটেকে পরী টাইপের কিছু ভেবে রেখে ছিলাম। কিন্তু মেয়েকে দেখে আমার ভুল ভাংল, তবে মেয়ের গায়ের রং খুব ফর্সা। খুব একটা অপছন্দও হয়নি। বাড়ির সবার পছন্দের কথা ভেবে হ্যা বলেদিলাম। আগের থেকেই খুজখবর নেয়া ছিল তাই একলাফে পাত্রী পক্ষ দিন তারিখ ঠিক করতে চাইল। আমাদেরও কোন আপত্তি ছিলনা। সপ্তাহ খানেক পর মেয়ে পক্ষ আমাদের বাড়ি আসবে বিয়ের তারিখ দেয়ার জন্য। এরই মাঝে আমার ছোট ভাইয়ের নাম্বারে মেয়ের (আমার হবু বউ) কল আসল, আমার সাথে কথা বলতেচায়। আমি আমার নাম্বার থেকে ফোন করলাম মেয়ের নাম্বারে।
আমি: হ্যালো আপনি আমাকে ফোন করতে বলেছিলেন?
সে: জ্বী, আপনি এখন কোথায়?
আমি: আমি ঢাকায় রিক্সায় বসে আছি।
সে: আপনি এখন আমার সাথে কথা বলতে পারবেন?
আমি: জরুরি কথা না হলে বলতে পারব।
সে: জরুরি কথা।
আমি: তাহলে সমস্যা হবে,আমি রাস্তায় লম্বা সময় নিয়ে কথা বলতে পারিনা।
সে: আচ্ছা বাসায় গিয়ে কল দিবেন।
আমি: আচ্ছা।
বাসায় আসতে আসতে রাত ৮টা হয়ে গেল। ৯টার দিকে কল দিলাম। বিয়ের আগে কয়েক দিন চুটিয়ে প্রেম করব তাই তার নাম্বারটা ছোটভাইকে দিয়ে এফ এন এফ করে নিলাম। প্রথম হাসি ঠাট্টার পর আমাকে যা বলল।
সে: আপনি আমাকে একটু সাহায্য করবেন?
আমি: কি সাহায্য?
সে: আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিনা, আপনি বিয়েটা ভেঙ্গেদেন।
আমি: বিয়ে করবেন না কেন?
সে: আমি আরো লেখা পড়া করব।
আমি: বিয়ের পর করবেন।
সে: না।
আমি: তাহলে বিয়েটা আপনি ভাঙ্গেন, আমি পারব না।
সে: আপনি আমার সাথে কাল দেখা করতে পারবেন?
আমি: পারব কিন্তু কোথায়।
সে: আমার স্কুলে(সে কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষিকা)।
আমি: স্কুলে পারবনা। তবে তার পাশেই আমার চাচাত বোনের বাড়ি সেখানে পারব।
সে: আচ্ছা।
আমার বিশ্বাষ হচ্ছিলনা। মেয়েটা বিয়ে আসলেই ভাঙ্গতে চায়।
আমি ভেবেছি আমার শাথে দেখা করতে চায় আমাকে ভাল করে দেখার জন্য।
পরদিন আমি সাজু গুজু করে আমার বোনের বাসায় হাজির। প্রায় ঘন্টা খানেক পর মেয়েটা হাজির হল। আমরা কথা বলছি। সেই একই কথা, মেয়েটা চাইছে বিয়ে ভাঙ্গতে আমি চাইছি গড়তে।
সব কথা মিলিয়ে মেয়েটার বক্তব্য
সে আরো লেখা পড়া করতে চায়। বিয়ের পর লেখা পড়া হয় না, আমাকে এখন বিয়ে করলে তার স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের বাড়ির লোক আমাকে এত পছন্দ করেছে যে, এখন সে বিয়ে ভাঙ্গতে পারবে না। এমন কথাতে সবাই ভাবতে পারে অন্য কারো সাথে তার সম্পর্ক আছে, কিন্তু এসব কিছুই নেই।
তার পরও আমি যদি তাকে বিয়ে করি তাহলে আমি তার চোখে অপরাধী হয়ে থাকব।
কি আর করা বিয়ে ভাংতেই হবে। আমি তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কোন লাভ হল না। আর জোরকরে বিয়েও করতে চাই না। রাতে বিয়ে ভাংগার খবর পেয়ে যাবেন। এই বলে আমি বাড়ি চলে আসি। এবং বাড়িতে এসে বলি।
আমি: মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি। আমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করব না।
মা: সেদিন যে বললি পছন্দ হয়েছে।
আমি: সেদিন ভাল করে দেখতে পাইনি। আজ ভাল করে দেখেছি।
মেয়ে পছন্দ না হলে এই বিয়ে হতে পারে না।এই বলে আমার বাবা বিয়ে ভেংগে দিলেন।
রাত ৯টার দিকে আমার মোবাইলে কল করে বিয়ে ভাংগার সংবাদ পেয়েছেন মেয়েটি আমাকে খুশীতে বাকবাকুম হয়ে খবরটা দিলেন।
রাতে ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরলাম সকালে ঘুমথেকে উঠে ফোন চালুকরেই দেখি সেই মেয়ের ৩২ টা মিসকল (আমার মিসকল এলার্ড চালু ছিল)। এবং ফোন অন করার ২ মিনিটের মাঝেই কল পেলাম। মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল।
কাল বিয়ে ভাংগার খবর পেয়ে তাদের বাড়ির সবাই আমাদের গোষ্টি উদ্ধার করছে। মাঝে মাঝে তকে সান্তনা দেবার জন্য নানান কথা বলছে, যেমন ছেলেটা ভাল না, ছেলেটার সাথে নিশ্চই কার সম্পর্ক আছে, এমন ছেলেকে বিয়ে করলে সারা জিবন কষ্ট পেতে হত। এবং সে গোমরা মুখকরে মন খারাপের অভিনয় করছে। আগামি ২ বছর সে বিনা ঝামেলায় পড়ার অনুমতি পেয়ে গেছে।

এভাবে প্রায়ই আমাদের কথা হত। কয়েক দিন পরের কথা আমার জন্য আবার মেয়ে দেখা শুরু হয়েছে। মেয়ে পছন্দ হচ্ছে না। এক দিন আবার সেই মেয়েটির কল। এবার মেয়েটি যা বলল তাতে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।
মেয়েটি নাকি আমাকে ভাল বেশে ফেলেছে ,আমাকে বিয়ে করতে চায়।
আমি: আপনার লেখা পড়া?
সে: আপনি না চাইলে করব না।
আমি: আগে বিয়ে ভাংলেন কেন?
সে: আপনার প্রতি ভাল লাগাটা তখন ছিল না।
আমি: কিন্তু আমি বাড়িতে বলেছি আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি।
সে: এখন সব খুলে বলুন।
আমি: আমার বাবা অনেক রাগি মানুষ, আমার জন্য একবার অপমানিত হয়েছে আবার কিছু বললে আমাকে মেরেই ফেলবে।
সে: আমি তার সাথে কথা বলি?
আমি: না। তাছারা আমারতো আপনার প্রতি ভালবাসা হয়নি।
আপনি এতদিন পর আমার মাঝে কি পেলেন?
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৫:১৫
২২টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×