somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাকাত ও এন্টারটেইনমেন্ট!

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে মারা যাওয়া এখন আর নতুন কোন খবর নয় আমাদের কাছে। প্রতি রমজানেই এই ঘটনা একাধিক জায়গায় ঘটে থাকে। আমাদের বিত্তশালীদের জন্য যাকাতের কাপড় বিতরণ করা একটা বেশ ভাল এন্টারটেইনমেন্ট। অনেক মানুষ জড়ো হয়, কাপড় বিতরণকারী ফ্যামিলি ব্যাল্কনিতে দাঁড়িয়ে ভিড়ের মধ্যে কাপড় ছুঁড়ে দেয় আর সেই ভুখা নাঙ্গা সব লোক প্রাচীন রোমের গ্লাডিয়েটরদের মত ঝাপিয়ে পড়ে একে অন্যের উপর। যেকোন ভাবে সেই কাপড় পেতে হবে। এই দৃশ্য অবশ্যই এন্টারটেইনিং, মানুষ সব যুগেই এই ধরনের এন্টারটেইনমেন্ট এর ব্যবস্থা করে এসেছে। দুইজন বা দুইদল মানুষ একে অন্যকে মারার এন্টারটেইনমেন্ট সব যুগেই ছিল। প্রাচীন কালে রোম, দাসপ্রথার সময় শক্তিশালী দাসদের দিয়ে মারামারি করানো- সেখানেও একজন মারা যাওয়া পর্যন্ত লড়াই চলত। যার দাস লড়াইয়ে জিতত, তার সমাজে একটা স্ট্যাটাস ছিল। আর আজকের যুগে WWE এত জনপ্রিয় এই কারণেই। ইদানীং মানুষ বুঝে গেছে ওইটা যে নকল মারপিট। যে কারণে আরেকটা আসল মারপিট শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে সেটা টিভিতে দেখায় কি না জানি না, কিন্তু আমেরিকার ইয়ং জেনারেশন কিন্তু এখন সেই আসল মারামারিই দেখে, WWE একবারে ছোট বাচ্চাদের এন্টারটেইনমেন্ট হয়ে গেছে।
অন্যের মারামারি দেখতে এম্নিতেই মজা, এর মধ্যে নিজে যদি সেই মারামারির আয়োজক হওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। ক্ষমতাশালীদের নিজেদের ক্ষমতার দাপট দেখতে এবং অন্যকে দেখাতে চরম আনন্দ উপভোগ করে। দুজন বা দুদল লোককে নিজের ইচ্ছামত মারামারি করিয়ে রক্তাক্ত করতে পারা বিশাল বড় ক্ষমতার প্রকাশ। মানুষের আদিম প্রবৃত্তি এই এন্টারটেইনমেন্ট-এর মজা উপেক্ষা করতে পারেনা।
কথা হচ্ছে, এই লড়াই-এ অংশগ্রহণও কিন্তু একটা নেশার মত। ঝুকি নেয়াও মানুষের আদিম প্রবৃত্তি। স্কাই ডাইভিং বা বাঞ্জি জাম্পিং এই কারণেই এত জনপ্রিয়।
যেটা বলতে চাচ্ছি, কাপড়ের জন্য কাড়াকাড়ি করারো একটা মজা আছে। যারা যাকাতের কাপড় আনতে যায়, তারা বেশিরভাগই সেই কাপড় পরে না, বিক্রি করে।

যারা কাপড় দিচ্ছে, তারা এন্টাইটেইনড হচ্ছে, যারা নিচ্ছে তারাও এন্টারটেইন্ড হচ্ছে, তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে সেটাকে যাকাত নাম দেওয়া। এই কাপড় দিয়ে মানুষের মধ্য লড়াই করানো কোন মতেই যাকাত হতে পারে না, কোন ভাবেই না। যাকাতের মূল কারণ, যাকাত আদায়ের নিয়ম, যারা এই যাকাতের নামে কাপড় বা টাকা নিচ্ছে, তার কোনটাই লেজিটিমেট (লেজিটিমেট এর সঠিক বাংলা শব্দ মনে করতে পারছি না, দুঃখিত) নয়। বরং এটা একটা অপরাধ। আপনার ছুঁড়ে দেওয়া কাপড় অথবা টাকা কুড়িয়ে নিতে গিয়ে যে লোকটি মারা গেল, তাকে হত্যার দায় কি আপনাকে নিতে হবে না? আর অমানবকিতার কথা তো বাদই দিলাম।

যাদের এক কোটি টাকার সম্পত্তি আছে, তাদের আড়াই লাখ টাকা যাকাত দেওয়ার কথা, দুই কোটি হলে পাঁচ লাখ। কতজন কোটিপতি এভাবে হিসাব করে যাকাত দেয় বলে মনে হয়? আমি শুধু একটা আইডিয়া দেওয়ার জন্য বললাম, এক কোটি টাকা থাকলেই আড়াই লাখ টাকা যাকাত দিতে হবে না, আরো কিছু কন্ডিশন আছে, এগুলো সবাই আমরা কম বেশি জানি।

যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের অর্থনৈতিক উন্নতি, ধনী গরীবের ব্যবধান কমিয়ে সমাজে ব্যালান্স তৈরী করা। এক কোটি টাকা যার আছে, তিনি প্রতি বছর আড়াই লাখ টাকা একজনকে ব্যবসার পুজি দিতে পারেন। প্রতি বছর এক জন মানুষ তার দেয়া টাকায় ছোট ব্যবসা চালু করে স্বাবলম্বী হতে পারে। অথবা একটা সি এন জি কিনে দিতে পারেন এক জনকে, যেটা চালিয়ে সে স্বাবলম্বী হতে পারে। এইটাই যাকাতের মূল উদ্দেশ্য- যাদের আর্থিক সংগতি নেই, তাদের স্বাবলম্বী করে দেওয়া। এখন বাংলাদেশে দশ কোটি টাকার মালিক কতজন আছে? দশ কোটি যার আছে, তার যাকাত পঁচিশ লাখ টাকা। কত জন মানুষকে তিনি নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন ঠিক মত যাকাত দিলে? উত্তরটা হিসেব করার মত বুদ্ধি সবারই আছে। আমরা ইতিহাস থেকে উদাহরণ দিতে খুবই ভালবাসি, কিন্তু এনালিসিস-এ আগ্রহী না। যাকাতের কথা আসলেই উমর ইবনে আব্দুল আজিজের সময় যাকাতে নেওয়ার মত কেউ ছিল না, এই উদাহরণ আসে। কিন্তু কেন কিভাবে সেটা সম্ভব হয়েছিল, আমাদের বর্তমান সময়ে কিভাবে আমরা সেই মডেল কাজে লাগাতে পারি, সেই বিষয়ে কথা শোনা যায় না খুব একটা।

যাকাত প্রথমে নিজের গরিব আত্মীয় কে দিতে হয়। নিজের মধ্যে যাকাত নেওয়ার মত কেউ না থাকলে দুরের, এর পর অন্যদের।

ক্যাপিটালিস্ট সমাজের সব কিছুই ক্যাপিটাল। গরিবকে গরিব রাখতে পারলে এবং কৌশলে আরো গরিব করলেই ধনীরা আরো ধনী হবে। আর এটা যেহেতু মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, তার ক্যাপিটালিজম আজ পুরো দুনিয়ায়। দুঃখ জনক ভাবে আমাদের আলেম উলামারাও ক্যাপিটালিজম এর পকেটে। কাপড় অথবা টাকা ছুঁড়ে দিয়ে যাকাত আদায়ের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার কন্ঠ সোনা যায় না, কারণ টাকা ছুঁড়ে দেয়া সেই সব লোকই সমাজের মাথা, কাজেই সব রকম অপকর্মের হোতা হয়েও তিনি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি। তার বিরুদ্ধে কথা বললে দোয়া করার জন্য টাকা আসবে তো না-ই, উলটা মসজিদের ইমামতির চাকরিটাও যাবে। ইমামতি আর ইমামতির চাকরি আলাদা জিনিস। সিলেট জজ কোর্ট মসজিদে একজন ইমাম নিয়োগ হলেন যিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এসেছেন। খুবই ভাল ইমাম। বাংলা, ইংরেজী এবং আরবী ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। তিনি আরবী ইন্টারপ্রেটার হিসাবে কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন। সেই ইমাম খুতবায় সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে আলোচনা শুরু করলেন। ফরজ যে বেশি ইম্পর্টেন্ট সেটা বলতে লাগলেন। ঈদের নামাজের খুতবায় উঠে বললেন, "ঈদের নামায ওয়াজিব, আর ফজরের নামায হচ্ছে ফরয। আজকে কতজন ফজরের নামাজ পড়েছেন? যারা পড়েন নাই, প্রথমে ফজরের নামাজটা পড়ে ফেলেন।" সবাই একে অন্যের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। অনেকেই উঠে পিছনে গিয়ে নামাজে দাঁড়ালেন। বলা বাহুল্য, জজ কোর্ট মসজিদের ইমামতির চাকরি তিনি বেশিদিন করতে পারেন নি। কিন্তু তিনি সত্যিকার ইমাম ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×