somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একতা

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলিম উম্মাহ একটা মানবদেহের মত; এক অংশে ব্যথা পেলে পুরো শরীরেই কষ্ট হয়। একথা আমরা সবাই জানি, কথায় কথায় উদাহরণ হিসাবে বলি। কিন্তু বাস্তবতা দেখলে মনে হয় মুসলিম বিশ্ব এক শরীর তো দূরে থাক, কোনঅংশ যে আসল মুসলিম, আর কে পথভ্রষ্ট সেটাই বোঝা দায়। মুসলিম বিশ্ব প্রথম থেকেই বিভাজিত হয়ে আসছে। শিয়াদের বিষয়ে তেমন কিছু জানি না, কিন্ত তারাও মুসলিম বিশ্বের অংশ। সেই শিয়াদের মধ্যে আবার অনেক ভাগ। একটা দলের নাম 'ইসমাইলি'। তাদের যে কর্মকান্ড দেখলাম, ইবাদতের যে সিস্টেম, তাতে তাদেরকে কোনমতেই মুসলমান বলা চলে না। আমরা সুন্নিরা প্রথমে চার ভাগ, চারটি প্রধান 'মাজহাব' বা 'স্কুল অব থট'। মাশাআল্লাহ, খুবই সুন্দর। বৈচিত্র যেকোন বিষয়েই সুন্দর। কিন্তু ততক্ষণই, যতক্ষণ আপনি বৈচিত্রটাকে গ্রহণ করছেন। যখন আপনি নিজেরটা গ্রহণ করে অন্যেরটাকে খারাপ হিসাবে ঘৃণা করা শুরু করবেন, তখন আর সেটা বৈচিত্র থাকছে না। সেটা উম্মাহ'র বিভাজনের রাস্তা হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম বেশ পরে এসেছে, এবং আসার পথে পারস্য, আফগানিস্থান পার হয়ে এসেছে। অর্থাৎ আমাদের ইসলাম সরাসরি ইসলামের কেন্দ্রস্থল থেকে আসে নি, আসার পথে কিছু পারশিয়ান কালচার, ইরাকি কালচার যুক্ত হয়ে এসেছে। এখানে এসে আমাদের পূর্বপুরুষদের স্থানীয় কালচারও কিছুটা মিশেছে। বিশুদ্ধ ইসলামি কালচার আমাদের নয়। কিন্তু এতে ইসলামের সৌন্দর্য্য আরো বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। কারণ ঐ যে, বৈচিত্র্য। ইসলামী আইন কানুনের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে কোন কালচার বা প্রথা সমাজে থাকতে পারে। এতে আমাদের আলেমরা দ্বিমত করবেন না মনে হয়। কিন্তু আবারো ঐ ভাগাভাগি আর নিজেরটা ছাড়া অন্যেরটার প্রতি শ্রদ্ধার অভাবের কারণে ইসলামের আজ করুণ অবস্থা। সবাই নিজেকে ঈমানদার বলে দাবি করে অনায়াসে বাকিদের কাফের, ফাসেক, মুশরিক যা ইচ্ছা নাম দিয়ে দিচ্ছে। অথচ সব দলই কিন্তু ইসলামের মূল ভিত্তিতে ঠিকই আছে। আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস সবারই আছে। কিন্তু কোন দলই অন্য দলের সাথে নিজেদের ছোট খাট পার্থক্যগুলো দূর করে এক কিভাবে হওয়া যায়, সেই ব্যাপারে কখনো চিন্তা করে না। অন্য দলের ভুল কোথায়, এবং সেই ভুলের কারণে কিভাবে তারা 'কাফির' সেটা প্রমাণেই ব্যস্ত।
আল্লাহ বলেছেন, "তোমরা আল্লাহ'র রশিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর, আর পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ও না।" কুরানে পরিষ্কার ভাষায় যে আদেশ আছে, সেই আদেশের উপরে আর কোনকিছুই চলে না। এই আয়াতে আল্লাহ পরষ্পর বিচ্ছিন হতে নিষেধ করে দিয়েছেন।
আফসোসের বিষয় হচ্ছে এটা যে, আমাদের আলেমরাই কিন্তু মুসলমান সমাজকে পরষ্পর বিচ্ছিন্ন করে চলেছেন। কেউ দেওবন্দী, কেউ নকশবন্দী, কেউ মুজাদ্দেদী, কেউ ফুলতলী, কেউ মওদূদী, কেউ আহলে হাদীস, কেউ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। এত দল, তারপরও কোন সমস্যা হত না যদি এক দলের প্রতি আরেক দলের সম্মান থাকত। আমাদের আলেমরা নিজেদের দলের ছাড়া অন্য দলের সবাইকে ফাসেক, কাফের বলে অভিহিত করেন। চরমপন্থা অবলম্বন করা কখনোই ভাল হতে পারে না। আল্লাহ নিজে মুসলমানদের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে আদেশ করেছেন।
আরো আফসোসের বিষয় আমাদের বিভাজনের কারণগুলোও অত্যন্ত ছোট। বেশ কিছুদিন আগে সুরা ফাতেহার শেষ আয়াতের 'ওয়ালাদ দোয়াল্লিন/যোয়াল্লিন' নিয়ে বিশাল হাঙ্গামা হয়েছিল যার রেশ এখনও শেষ হয়ে যায় নি। এরপরে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সঃ) কে নিয়ে। তিনি কি নূরের তৈরী নাকি মাটির তৈরী। যারা রাসূল (সঃ) নূরের তৈরী বলে বিশ্বাস করেন, তারা বলেন রাসূল (সঃ) কে মাটির তৈরী বলে বিশ্বাস করলে ঈমান থাকে না, অর্থাৎ কাফির হয়ে যেতে হবে। আবার যারা তাঁকে মাটির তৈরী বলে দাবি করেন, তারা বলেন, রাসূল (সঃ) নূরের তৈরী বলে বিশ্বাস করলে কাফির। দুই দলই কিন্তু তাঁকে রাসূল বলে মানছেন আর আমাদের ঈমানের মূল বিষয় কিন্তু মুহাম্মাদ (সঃ) কে রাসূল হিসাবে বিশ্বাস করা, নূরের তৈরী রাসূল কিংবা মাটির তৈরী রাসূল হিসাবে বিশ্বাস করা নয়। যদি হত, তাহলে শাহাদাহ অন্যরকম হত। শাহাদাহ-তে আমরা সবাই বলছি, "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহ'র বান্দা ও রাসূল।" আমরা সবাই যদি মুহাম্মাদ (সঃ) কে রাসূল হিসাবে বিশ্বাস করলাম, তাহলে তিনি মাটির তৈরী না, নূরের তৈরী, সেটা নিয়ে ঝগড়া করে বিপক্ষ দলকে 'কাফির' বলার কোন মানে আছে? তিনি কিসের তৈরী সেই জ্ঞান আল্লাহর কাছে আছে। আল্লাহ আমাদের বলে দিয়েছেন যে বিষয়ে আমাদের ইলম নেই, সেই বিষয়ে কথা না বলার জন্য। আল্লাহ আরও বলেছেন জমিনে ফিতনা সৃষ্টি না করতে। আপনি যখন এসব বিষয় নিয়ে আরেক দলের সাথে ঝগড়া করছেন, তখন কি একবারো চিন্তা করেছেন, যে আপনি ফিতনা সৃষ্টি করছেন কি না?
জ্ঞান মানুষকে বিনীত করে। যারা যত বেশি জ্ঞানী, তারা তত বেশি বিনয়ী। যে সব আলেম, সে যে দলেরই হোক না কেন, যখন দেখবেন আরেক আলেমকে কটাক্ষ করে নিজের জ্ঞান জাহির করার চেষ্টা করছেন, তাঁকে এড়িয়ে চলাই কল্যাণকর হবে। আল্লাহ আমাদের ধৈর্য্যশীল হওয়ার তৌফিক দান করুন, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার তৌফিক দান করুন, ইসলামকে সঠিকভাবে বোঝার তৌফিক দান করুন আর আমাদের ঈমানকে মজবুত করে দিন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×