somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যর্থতা ও সবর

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সিনারিও দাঁড় করাই। ধরুন আপনি একটা বড় প্রতিষ্ঠানে বেশ বড় একটা পজিশনে জব করেন। এই বড় পজিশনে আপনি আপনার নিরলস শ্রম ও মেধা খাটিয়ে এই বড় পজিশনে এসেছেন। আপনি কোম্পানির চেয়ারম্যানের সবচেয়ে কাছের লোক। আপনি চেয়ারম্যান সাহেবের অত্যন্ত বাধ্য, তিনি কিছু বলার আগেই আপনি তা করে ফেলেন। আপনার কর্ম দক্ষতা আর ডেডিকেশন দেখে চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে বাকি সবার উপরে স্থান দিয়েছেন, যদিও তারা আপনার চেয়ে কোয়ালিফাইড। এমন সময় কোম্পানী অন্য একটা দেশে বড় একটি শাখা খুলতে যাচ্ছে। একজনকে সেখানে চেয়ারম্যান সাহেবের প্রতিনিধি হিসাবে পাঠানো হবে। অত্যন্ত সম্মানের একটা পদ। আপনি নিশ্চিৎ আপনাকেই সেখানে চেয়ারম্যান সাহেবের প্রতিনিধি হিসাবে পাঠানো হবে। আপনি জানেন এটা আপনার প্রাপ্য। আপনার এত বছরের পরিশ্রম আর ডেডিকেশনের পুরষ্কার পেতে যাচ্ছেন আপনি।
একদিন চেয়ারম্যান সাহেব সম্পুর্ণ নতুন একজনকে সবার সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে এলেন। বললেন এই নতুন লোকই অন্য দেশে চেয়ারম্যান সাহেবের প্রতিনিধি হবে। আপনার এতদিনের পরিশ্রম আর ডেডিকেশন কোন কাজেই আসলো না। এই অবস্থায় আপনার কি করা উচিত?
১) খুশি মনে বসের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া উচিত
২) বসের সিদ্ধান্ত না মেনে কিভাবে আপনি নতুন লোকের চেয়ে ভাল তা বসকে জানানো উচিত।

এবার এই সিনারিও শুধু চাকরির ক্ষেত্রে চিন্তা না করে জীবনের অন্য ক্ষেত্রে চিন্তা করুন। জীবনে অনেক সময় আমাদের এই ধরনের সিচুয়েশন ফেইস করতে হয়। অনেক সময় ও পরিশ্রম করেও আমরা কাঙ্খিত ফলাফল না পেয়ে হতাশ হয়ে যাই। হতাশ হয়ে আল্লাহকে দোষারোপ করি। অনেক সময় দেখা যায় আমরা যেটার জন্য কঠিন পরিশ্রম করেছি বছরের পর বছর এবং তার পরও সেটা এচিভ করতে পারিনি, আরেকজন সেটা কোনরকম চেষ্টা ছাড়াই পেয়ে যাচ্ছে। জীবনের উপর সব ভরসা যেন উঠে যায় যখন দেখি একজনের কোলের উপর চাকরি এসে পড়ছে যেখানে আপনি পরীক্ষার পর পরীক্ষা, ইন্টারভিউর পর ইন্টারভিউ দিয়ে ওর চেয়ে নিচের লেভেলে জব করছেন। কিংবা আপনি ক্লাস নাইন থেকে প্রস্তুতি শুরু করেও মেডিকেলে চান্স পাননি, আপনার প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ার সামর্থ্যও নেই। কিন্তু আপনার ক্লাসের ফেল করা ছেলেটা প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ে ডাক্তার হয়ে গেছে শুধু টাকা থাকার কারণে।
জীবনের এমন বৈষম্য মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর। কিন্তু আল্লাহ আপনার ভাগ্যে যা রেখেছেন তা আলহামদুলিল্লাহ বলে স্বীকার করে নেয়াই হচ্ছে ঈমানদারদের কাজ।

আল্লাহ বলেন,
“আর আমিই তো তোমাদের দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত করেছি, সেখানে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি, কিন্তু তোমরা সামান্যই শোকর কর। আর আমিই তোমাদের সৃষ্টি করেছি, আকৃতি দিয়েছি; তারপর ফেরেশতাদের বলেছি আদমকে সেজদা কর; সকলেই সেজদা করেছে – ইবলিশ ছাড়া। সে সেজদাকারীদের মধ্যে ছিল না। বললেন, কিসে তোকে সেজদা থেকে বিরত রাখল, যখন আমি হুকুম দিলাম? বলল, আমি তো তার চেয়ে উত্তম। আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন আর তাকে মাটি দিয়ে”। (সূরা আরাফ ১০-১৩)।

প্রথম দৃশ্যকল্পটির সাথে এই আয়াতের কোন মিল লক্ষ্য করা যায়? ইবলিশ বা শয়তান ছিল জ্বীন। সে এত ইবাদত করেছিল যে আল্লাহ তাকে ফেরেশতাদের প্রধান করে দিয়েছিলেন। আর আদম (আঃ) কে আল্লাহ সৃষ্টি করে সবাইকে বললেন তাকেই সেজদা করার জন্য! শয়তানের হাজার হাজার বছরের ইবাদত, তার ফেরেশতাদের প্রধান পদ, সব এক নিমেষেই শেষ হয়ে গিয়ে সে অভিশপ্ত হয়ে গেল চিরকালের জন্য সে নিজেকে আদম (আঃ) চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে তাকে সেজদা না করার কারণে।

আদম (আঃ) কে নিয়ে আল্লাহর যেমন একটি পরিকল্পনা ছিল, আমাদের প্রত্যেকের জন্যও তেমনি আল্লাহর পরিকল্পনা তৈরী করা আছে। সেটি সবসময় আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ আপনার জন্য যা রেখেছেন, সেটাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মেনে নেয়াই ঈমানদার বান্দার কাজ।
আল্লাহ বলেন,
“আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, প্রাণ ও ফল-ফলাদির ক্ষতি দিয়ে। আপনি সুসংবাদ দিন সোয়াবিরিনদের (ধর্য্যশীলদের)” (সূরা বাক্বারাহঃ ১৫৫)

আল্লাহ আমাদেরকে সোয়াবিরিনদের অন্তর্ভূক্ত করে দিন, আমাদের সবর করার তৌফিক দিন আর নিজেকে আরেকজনের চেয়ে উত্তম মনে করার মত মানসিকতা থেকে মুক্ত থাকার সামর্থ্য দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×