somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমনিতে আমি ভালই আছি!

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে আমাদের ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের গেট টুগেদার পার্টি। শুধু আমাদের ব্যাচ। ইউনিভার্সিটি ছাড়ার পাঁচ বছর হয়ে গেছে। অনেকের সাথে যোগাযোগ নেই। অনেকে ফেইসবুকে আছে, হাই হ্যালো হয়, কিন্তু সত্যিকার অর্থে যোগাযোগ নেই। পোলাপান বড় বড় চাকরি করে, স্ট্যাটাস চেইঞ্জ করে, ভ্যাকেশনের ছবি দেয় – মালয়শিয়া, ব্যাংকক। দেখে অশান্তি লাগে। আমি ওদের সাথেই পড়তাম, ভাল রেজাল্ট করেই ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু কি করে জানি ওরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমি শালার সেই আগের জায়গায়ই আটকে আছি। চাকরি একটা করছি, খেয়ে পরে বাচার মত টাকা রোজগার করি। এমনিতে আমি ভালই আছি। কিন্তু নতুন রেস্টুরেন্ট খুল্লেই দৌড় দিয়ে গিয়ে ডিনার করতে পারি না, ছবি আপলোড দিতে পারি না, “ডিনার এট অমুক রেস্টুরেন্ট, ইয়াম্মি ফুড” বলে। কিংবা বোনাসের টাকা দিয়ে ব্যাংকক বেড়াতে গিয়ে ছবি দিতে পারি না “জেট স্কিইং ইন পাতায়া” বলে।

আমি এখনও আশির দশকেই আছি – ওই যে আব্বা ঈদের বোনাস পেলে ঈদের বাজার হবে – ওই টাইপ। এমনিতে আমি ভালই আছি। কিন্তু যখন দেখি সারা জীবন আমার খাতা দেখে পরীক্ষা দেয়া ছেলে ইউরোপে পিএইচডি করতে যাচ্ছে, তখন মনটা খচ খচ করে। হারামজাদা আবার স্নোয়ের মধ্যে ছবি দেয়। আরে বেটা তুই পড়া শোনা করতে গেছিস, নাকি ফটো সেশন করতে! অফিসের লাঞ্চ ব্রেকে মোবাইল চেক করে মাঝে মাঝে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। ভার্সিটিতে সবচেয়ে বেশি ক্লাস ফাঁকি দেওয়া ছেলেটা মাঝে মাঝেই লাঞ্চের সময় ছবি দেয়, “হ্যাভিং লাঞ্চ উইথ ক্লায়েন্ট এট শেরাটন” টাইপের। তখন মনে হয় কি লাভ হলো ছয় বছর মনযোগ গিয়ে পড়াশোনা করে। একজন তো আবার আমাদের আমাদের ডিপার্টমেন্টেই জয়েন করেছে, এখন এসিটেন্ট প্রফেসর। তার বাপের টাকা ছিল। একটা গাড়ি ছিল তার নিজের। ফোর্থ ইয়ারে আমার ধারণা ছিল ওই গাড়িটা মজিদ স্যার ওর কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। স্যারকেই সবসময় ওই গাড়ি চালাতে দেখতাম। ওই ছেলে কয়দিন আগে দেখলাম স্ট্যাটাস দিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ, মাই পেপার হ্যাজ বিন এক্সেপ্টেড ইন রিনউনড অমুক জার্নাল। তোর জার্নাল এর খেতা পুড়ি। তোর ওই পেপার দিয়ে তুই ছাড়া আর কার কোন উপকারটা হবে? আর তুই তো ব্যাটা কো-অথর, তাহলে মাই পেপার বললি কোন বিবেচনায়, বলবি আওয়ার পেপার। না, আমি রাগছি না। এমনিতে আমি ভালই আছি।
এটা ঠিক, আমি বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে শাহরুখ খানের নতুন সিনেমা দেখতে গিয়ে “ওয়াচিং গুর্দাওয়ালে এট বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স উইথ মাই লাভলি ওয়াইফ” স্ট্যাটাস দিতে পারি না। আরে ব্যাট্টা, বউএর সাথে সিনেমা দেখতে যাবি, সেটাই তো স্বাভাবিক, এটা চিৎকার দিয়ে সবাইকে বলার কি আছে। বউ ফেলে শালির সাথে সিনেমা দেখতে গেলে সেটা অস্বাভাবিক হত, সেটা করলে তো কাক পক্ষীও টের পাবে না। প্রায়ই দেখি আমাদের ক্লাসের ডাকসাইটে সুন্দরি বরের গলা ধরে ঝুলে ফেইসবুকে ছবি দেয়। তার বর বেশ বড় একটা চাকরি করে। পজিশনের জোরে বউকেও একটা চাকরি পাইয়ে দিয়েছে। মেয়ের ভাব দেখে মনে হয় তার চাকরি হচ্ছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের একান্ত সচিবের চাকরি। পৃথিবীর অর্থনীতি তার উপরেই নির্ভর করে। ফেইসবুক খুল্লেই তার মিটিং-এর স্ট্যাটাস দেখতে দেখতে ভাবি, তাহলে কাজ করে কখন। বরের গলায় ঝুলে যখন ছবি তোলে, তখন কি সে জানে তার বর আরেক মেয়েকে নিয়ে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে যায়? হয়ত জানে, সবাই তো আর আমার মত আশির দশকে পড়ে নেই।
তবুও আমি ভালই আছি। অফিস থেকে ফিরে আমি টিভি দেখি, তারপর প্লেটে আঙ্গুল ডুবিয়ে ডাল ভাত খেয়ে শুতে যাই। ঘুম আসার আগে শেষবার ফেইসবুক খুলি, দেখি যে মেয়েটা নোটের জন্য সবসময় ঘুরঘুর করত, সে স্ট্যাটাস দিয়েছে। অনেক যত্ন করে নোট লিখতাম, আমি জানতাম ও নোট নিতে আসবে। তাই কাটাকুটি ভরা নোট থেকে পরিষ্কার করে গুছিয়ে নোট করে রাখতাম। চাইলেই কপি করে রাখতে পারতাম, কিন্তু তাহলে ও দ্বিতীয়বার নোট ফেরত দিতে আসত না। সে স্ট্যাটাস দিয়েছে, তার হাজবেন্ড অস্ট্রেলিয়াতে বাড়ি কিনেছে। চোখের ঘুমটা কেটে যায়। ভালই হয়েছে ওর জন্য। আমিও তো ভালই আছি। ঘুমটাই শুধু আসছে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৩১
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×