০৩/০৮/৭১
মা,
আমার সালাম নিও। অনেক পাহাড় পর্বত, নদী প্রান্তর পেড়িয়ে, সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তোমার ছেলে তার অনেক আকাঙ্ক্ষারর শেষ ঠিকানা আজ খুঁজে পয়েছে। হ্যাঁ মা, আমি পৌঁছে গেছি আমার ইচ্ছার কেন্দ্রবিন্দুতে। নিজেকে এবার প্রস্তুত করব প্রতিশোধ নেওয়ার এক বিশাল শক্তি হিসেবে। আমার প্রতিশ্রুতি আমি কখনও ভুলব না। ওদের উপযুক্ত জবাব আমাদের দিতেই হবে। মা, তুমি এই মুহূর্তে আমাকে দেখলে চিনতে পারবে না। বিশাল বাবড়ি চুল, মুখভর্তি দাড়ি গোঁফ। যদিও আমি নিজের চেহারাটা বহুদিন দেখি না কারণ এখানে কোন আয়না নেই। মিহির বলে আমাকে নাকি আফ্রিকার জংলিদের মতো লাগে। মিহির ঠিকই বলে, কারণ, এখন আমি নিজেই বুঝি আমার মাঝে একটি জংলি ভাব এসে গেছে। সেই আগের আমি আর নেই। তোমার মনে আছে মা, মুরগি জবাই করা আমি দেখতে পারতাম না। আর সেই আমি আজ রক্তের নদীতে সাঁতার কাটি।
খাওয়াদাওয়ার কথা বলে লাভ নেই, দুঃখ পাবে। তবে বেঁচে আছি ও খুব ভাল আছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা আর সেই দিনটি থেকে খুব দূরে নই, যখন আমরা আবার মুখোমুখি হব। দোয়া করো মা, যেন সেই দিনটি পর্যন্ত বেঁচে থাকি। মনি ভাই আমাদেরকে officer করেনি কারণ ওনার কাজের জন্য আমাদের প্রয়োজন পড়বে। এখানে আমার অনেক পুরান বন্ধুর দেখা পেলাম। আমার আগের চিঠিটা হয়তো এত দিনে পেয়ে গেছ। সেলিম তোমার সাথে দেখা করে করে এসেছে, বলল। তোমরা ভাল আছ জেনে খুশি হলাম। আমার জন্য কোন চিন্তা করো না। মায়ের দোয়া আমার সাথে আছে, আমার ভয় কী? অনেক লেখার ইচ্ছা করছে কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। কত ঘটনা মনে জমা হয়ে আছে তোমাদের বলার জন্য! হয়তো অনেক বছর লেগে যাবে শেষ করতে। মন্টু চিঠি নিয়ে যাচ্ছে। পারলে ওকে একটু ভলো কিছু খাবারদাবার দিয়ো। অনেকদিন ও ভাল কিছু খায়নি। আজ তাহলে- ৮০। সবাইকে সালাম ও দোয়া দিও।
তোমার স্নেহের ফেরদৌস
===============================
চিঠি লেখকঃ মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস কামাল উদ্দীন মাহমুদ। তাঁর বর্তমান ঠিকানাঃ ফ্ল্যাট-৫০০, কনকর্ড কটেজ, প্লট ৮ আই, রোড ৮১, গুলশান ২, ঢাকা।
চিঠি প্রাপকঃ মা, হাসিনা মাহমুদ, তাঁর তখনকার ঠিকানাঃ ৮৩ লেক সার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা।
চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ লেখক নিজেই।
===============================
একাত্তরের চিঠি সংকলনের টেক্স্ট কন্টেন্ট রিভার্সিং: একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা - তর্পন