বাগান বিজয়
মূল কবিতা: ফরাগ ফাররখজাদ
মাথার উপর দিয়ে যে কাকটি উড়ে গিয়ে
ডুবে গেল ভবঘুরে মেঘেদের উদ্ভ্রান্ত ভাবনার ভেতর-
তার চিৎকার দিগন্তের প্রস্থবরাবর ছিঁড়ে ফেলে বর্শার ফলার মতো,
ছুটে গিয়ে শহরে পৌঁছে দেয় আমাদের একান্ত সংবাদ।
প্রতিটি মানুষ জানে.
প্রতিটি মানুষই জানে-
তুমি আর আমি শীতল নৈঃশব্দের জানালা থেকে
দেখেছি বাগান আর ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যেতে থাকা
সহৃদয় ডাল থেকে আমরাই ছিঁড়েছি আপেল।
প্রতিটি মানুষ ভীত,
প্রত্যেকে সন্ত্রস্ত, শুধু তুমি আর আমি-
ভয়হীন বেঁচে থাকি ঝাড়বাতি, জল আর আয়নার সাথে।
দুটি অলৌকিক নামের নড়বড়ে যোগাযোগ আর
প্রাচীন পুঁথির জীর্ণ পাতার ভাঁজে তাদেরই মাখামাখি নিয়ে
আমি কিছু বলব না।
তারচে বরং বলি আমার এই ভাগ্যবতী বেনীটির কথা,
যাতে গুঁজে দিয়েছ তোমার দগ্ধ চুম্বনের সুরভি।
আর বলি আমাদের অঙ্গের অন্তরঙ্গতার কথা,
আর আমাদের উজ্জ্বল নগ্নতার কথা-
যেমন নদীর জলে হঠাৎ ঝলকে ওঠে
তরুন মাছের আঁশ।
তারচে বরং পাঠ করি-
তিরতিরে ঝরনাটি প্রতিদিন ভোরে গাইছে যে গান;
সেই গানটির রূপালী জীবন।
শ্যামল বহতা বনের খরগোসগুলো,
শীতলরক্ত সমুদ্রের মুক্তাবতী ঝিনুকেরা,
আকাশে এলায়িত আশ্চর্য পাহাড়ের ঈগলশিশু-
কোন এক রাতে জানিয়ে দিয়েছিল কি করতে হবে আমাদের।
এখন সবাই জানে,
প্রতিটি মানুষ জানে-
আমরা পেয়েছি পথ ফিনিক্সের শান্ত শীতল স্বপ্নের মাঝে,
আমরা পেয়েছি সত্য-
বাগানের অনাম্নী ফুলটির লজ্জাবনত পাপড়িতে,
এবং আমরা পেয়েছি অমরতা-
একটি অনিঃশেষ মুহূর্তের ভেতর,
যখন দুটি সূর্য তাকায় পরস্পরের দিকে।
অন্ধকারে কাঁপা কণ্ঠে কানাকানির কথা আমি বলছি না,
আমি বলছি উজ্জ্বল দিন আর উন্মুক্ত জানালার কথা,
উচ্ছল বাতাস আর গনগনে উনুনের কথা,
বিচিত্র শস্যে ভরা উর্বর জমির কথা,
জন্ম, বিবর্তন আর অহংকারের কথা,
আমি বলছি আমাদের প্রেমময় হাতের গল্প-
যা একাকী অন্ধকার রাতগুলোর মাঝে গড়েছে সেতু;
সৌরভ, আলো আর বাতাসের বার্তা জুড়ে জুড়ে।
এসো এই মাঠে,
বিস্তীর্ণ এই প্রান্তরে এসো-
আর আমাকে ডাকো,
রেশমাকীর্ণ একাশিয়া গাছের নিঃশ্বাসের পেছনে দাঁড়িয়ে
যেভাবে হরিণ তার সঙ্গিনীকে ডাকে।
ক্রোধের সুতোয় বোনা মায়াবী পর্দাগুলো
আর পাপশূণ্য কবুতর যত,
স্বর্গের শুভ্র উচ্চতায় বসে বসে
দেখুক আমাদের এই পার্থিব বাগান....
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:২৯