পুরানো দিনগুলো
লিজা আপুর সাথে আমার পরিচয় আমার গ্রাজুয়েশন পর্বে । উনি আমার অনেক বছর সিনিয়র। আমি সম্ভবত ২য় বর্ষে, লিজা আপু মাস্টার্সে।
রাতের বেলা অনেক কথা বলতাম আপুর সাথে। কথা বলার আমার কোন কারণ ছিল না কিন্তু আপুর কারণ ছিল। আপুর যে কোন কারণে একটা ভাইয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে ছিল অনেক বছর আগে থেকে। ভাইয়াটার নাম ইলিয়াস। ঐ ভাইয়াটা পলি-টেকনিক্যাল থেকে জাস্ট ডিপ্লোমা করা, ইভেন বি.এস.সি ও করেনি। কোথায় যেন ছোট্ট একটা জব করত। কিন্তু সে জায়গায় লিজা আপু মাস্টার্সের ল'এর স্টুডেন্ট। কোন মতেই তাদের একাডেমিক কোয়ালিটি ম্যাচ করে না।
মূলত এ ব্যাপারটা নিয়েই উদ্বিগ্ন থাকত আপু এবং আমাকে ব্যাপারগুলো শেয়ার করত। একদিন আপু আমাকে বলল, আমি যদি বিয়ের কথা চিন্তা করি তাহলে কেমন হবে?
আমি আপুকে একটা কথাই বলেছিলাম, "তুমি বিয়ে করে ফেলতে পার। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হয়তো হ্যাপিও হতে পার। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী মনে হয় না হ্যাপি হবে। সমাজে সার্ভাইভ করার সবচে ইম্পরট্যান্ট দিক হল, "স্বামীকে অন্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া, নিজের চিন্তাগুলোর সাথে স্বামীর চিন্তাগুলো মিলে যাওয়া"। কিন্তু এ ধরণের ব্যাপারগুলো তোমার সাথে ভাইয়ার কখনোই ম্যাচ করবে না। সুতরাং তুমি একটা সময় এসে ব্যাপারগুলো আর মেনে নিতে পারবে না এবং এমন কোন সময় আসতে পারে, তুমি রিলেশন ভাঙার কথাও চিন্তা করতে পার। সুতরাং ডিসিশন নিলে আগে থেকে সব চিন্তা করে নিও।"
এর কিছুদিন পরে, আমার অনুরোধে ইলিয়াস ভাইয়া চিটাগাং আসে। ভাইয়াটার সাথে আমার অনেক কথা হয়। ভাইয়াটাকে অনেক কথা বলার পর ফাইনালি একটা কথাই বলেছিলাম, "যদি আপনাদের রিলেশনটা বিয়ের দিকে যায়, আপনারা কেউই হ্যাপি হবেন না। কারণ যখন আপনাদের সম্পর্ক গড়ে উঠে তখন আপনারা দু'জনেই একটা সাম্য অবস্থায় ছিলেন কিন্তু এখন আপনারা কেউই আর কোন মতেই সেই সাম্য অবস্থায় নেই। সুতরাং আপনারা যদি বিয়ের দিকে যানও, আমার মনে হয় না বিয়েটা টিকে থাকবে। সুতরাং আগেই চিন্তা করা উচিত সবকিছু।"
ভাইয়াটা আমার কথাগুলো খুব ভাল মতই গ্রহণ করে এবং সারাদিনই তিনি শেষবারের মত চিটাগাং ছেড়ে উনার গন্তব্যে চলে যান। আমার জানা মতে, ওটাই লিজা আপুর সাথে ইলিয়াস ভাইয়ার শেষ দেখা। কিন্তু পরে কথা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
এর পরে আমি অনেকদিন গিলটি-ফিল করতাম যে, হয়তো আমার প্ররোচনায় রিলেশনটা ভেঙে গেছে।
এখন আমার সাথে লিজা আপুর তেমন যোগাযোগ হয় না। আপুর সাথে লাস্ট কথা হয়েছে তাও মনে হয়, এক বছর হয়ে গেছে। ভাইয়া (লিজা আপুর হাসব্যান্ড) ব্যাংকে জব করে। তাদের একটা বেবীও আছে। মনে হয় অনেক সুখেও আছে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল, ইলিয়াস ভাইয়ার সাথে আমার প্রায় কথা হয়। উনিই আমাকে ফোন দেন। আমার খোজ খবর নেন। তবে উনি কোন দিনও লিজা আপুর কথা জিজ্ঞাসা করেননি। আমিও বলিনি। উনার স্ত্রী একটা হাই স্কুলে পড়ান। উনাদের ২টা বেবী আছে।
আমার মনে হয়, যার যার অবস্থা থেকে ২ জনেরই যতই আক্ষেপ থাকুক না কেন, কিন্তু মনে হয় না তারা অসুখী আছে।
সুখে থাকুক আমার খুব খুব খুব প্রিয় এ দু'জন মানুষ। সুখে থাকুক তাদের সম্পর্কের স্ট্যাইকহোল্ডার-রা।...
(প্রত্যেকটা রিলেশনের একটা অব্যক্ত শর্ত থাকে, তা হল, "তুমি তোমার মত জীবন চালিয়ে নেবে, আমি আমার মত এবং সময়ের পরিবর্তনের সাথে, তুমি তোমাকে আমার যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলবে, আমি আমাকে তোমার যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলব"।
যেমন, ধরে নিলাম, একটা ছেলে, একটা মেয়ে HSC 1st ইয়ার থাকা কালে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গেল। এর পরে দেখা গেল, মেয়েটা HSC পাস করল, গ্রাজুয়েশন করল, পোস্ট-গ্রাজুয়েশন করল। কিন্তু ছেলেটা যে কোন কারণে HSC ও পাস করল না। সুতরাং ছেলেটা তার সম্পর্কের অব্যক্ত শর্তটি ভঙ্গ করল। সুতরাং মেয়েটার এ সম্পর্ক ভেঙে দেয়ার রাইট আছে।)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮