facebook
"চায়ের দোকানে বসেছিলাম, আমার দিকে তাকিয়ে কে যেন বলে উঠল, "পোলাপান সব জীবনটাকে তো প্রায় শেষ করে দিল facebook fecebook করে !!!"
আমি কিচ্ছু বলিনি।
আবার সে বলে উঠল, "আমি facebook বুঝি না। কিন্তু সারাদিন যে এই পোলাপানগুলো facebook এ কি পায়, আমার মাথায় কিছুই ডুকে না। ঐদিন পাড়ার কিছু ভাতিজা এসে আমাকে কাঁচুমাচু করে বলল, “চাচা, আমাদের facebook এক ফ্রেন্ডের বোনের অনেক ব্যাগ রক্ত লাগবে। আপনার তো A+ রক্ত। আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে, তার জন্য এক ব্যাগ রক্ত দিতে পারেন”।
আমি ধমক দিয়ে এই হতচ্ছাড়াগুলোকে বিদায় করলাম।
তাও আমি চুপচাপ থাকলাম। কিছু বললাম না লোকটাকে।
লোকটা আবার বলে উঠল, “এই facebook টাই দেশটাকে শেষ করে দিল, যাবতীয় অনর্থের মূলে আছে এই facebook”....
এবার আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম এবং তার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম...
যে দুঃখী মেয়েটা facebook এ তার সস্তা কিছু স্ট্যাটাসে বা ছবিতে শত খানিক লাইক/কমেন্টস পেয়ে মন ভাল করে ফেলতে পারে, তাতে সেই দুঃখী মেয়েটার ক্ষতি কি?
যে ভালবাসার মানুষ, facebook এ তার ভালবাসার মানুষটার ছবিটা একবার দেখেই সারাদিন ভাল সময় কাঁটিয়ে দিতে পারে, তাতে সেই ভালবাসার মানুষটির ক্ষতি কি?
যে অসুন্দর মেয়েটা নিজেকে লুকানোর জন্য facebook এ নিজের প্রোফাইল পিকচারে সুন্দর একটা Barbie Doll দিয়ে সজ্জিত রেখে, ছোট্ট একটা সময়ের জন্য হলেও নিজেকে সেই Barbie Doll এর মত সুন্দর ভাবতে শুরু করে, তাতে সেই অসুন্দর মেয়েটার ক্ষতি কি?
যে প্রেমিকা তার প্রেমিকের ফোনের অপেক্ষায় সারারাত বসে থাকতে হয়, সে সময়টা যদি অন্য ২/৪ জন দূরের মানুষের সাথে বসে বসে facebooking করে ঘুম তাড়াতে চেষ্টা করে, তাতে সেই অপেক্ষারত প্রেমিকার ক্ষতি কি?
যে দুঃখী মানুষটা অন্য কোন অবলম্বন না পেয়ে, facebook এ আরও ২/৪ জন দুঃখী মানুষকে ফ্রেন্ড বানিয়ে সারাদিন তার দুঃখের সৃতিগুলো শেয়ার করে, কিছুটা দুঃখ লাগব করতে চেষ্টা করে, তাহলে সেই দুঃখী মানুষটার ক্ষতি কি?
নানা সমস্যায় জর্জরিত ছেলেটা কিংবা মেয়েটা facebooking করতে করতে যদি তার সমস্যা সমাধানের পথ খুজে পেয়ে যায়, তাতে সেই সমস্যায় জর্জরিত মানুষটার ক্ষতি কি।
যে নেশাগস্থ ছেলেটা facebook করতে করতে তার নেশা করার কথা ভুলে যায়, তাতে সেই নেশাগস্থ ছেলেটার ক্ষতি কি?
যে চায়ের দোকানের ছেলেটা তার মালিক আসার আগে দৌড়ে আমার কাছে এসে বলে, “রবিতে কিভাবে টাকা ছাড়া facebook ব্যবহার করা যায়, আমাকে একটু শিখিয়ে দেন না মামা”। তাতে যদি আমি তাকে টাকা ছাড়া facebooking করা শিখিয়ে দেয়ই, তাতে আমার কিংবা চায়ের দোকানের ছেলেটার ক্ষতি কি?
যে নতুন বধূটা সারাদিন তার বরের অপেক্ষা করতে করতে সময় শেষ করতে পারে না। আবার চাইলেও বরের অফিসের সময় বরের সাথে ফোনে কথা বলতে পারে না। সে যদি তার ছোট ছোট কথাগুলো, মায়াগুলো, অভিযোগ-গুলো, সদ্য তোলা সেলফিগুলো facebook inbox এর মধ্যমে তার বরের সাথে শেয়ার করে, তাতে সেই নববধূটার ক্ষতি কি?
যে ছোট বোনটি তার শহরে থাকা ভাইয়ের facebook এ নতুন প্রোফাইল পিকচারটা দেখে, দৌড়ে এসে মাকে দেখিয়ে বলে, “মা, দেখ দেখ, ভাইয়া কত সুন্দর হয়ে গেছে” , তাতে মা কিংবা সেই ছোট্ট বোনটির ক্ষতি কি?
যে বন্ধুরা তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য facebokটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, তাতে সেই বন্ধুদেরদের ক্ষতি কি?
যে বখাটেটা পাড়ার মোড়ে দাড়িয়ে faceboking করতে করতে ইভ-টিজিং করতে ভুলে যায়, তাতে সেই বখাটেটার ক্ষতি কি?
ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের হীনমন্যতার সামান্যতম প্রতিবাদ, যে গাও গেরামের ছেলেটা facebook এর মধ্যমে করতে পেরে নিজেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ভাবতে শুরু করেছে, তাতে সেই ছেলেটির ক্ষতি কি?
ex
যে প্রবাসী বন্ধুটি কাজের ফাঁকে facebook এ এসে একটু দেশের ছোঁয়া নিয়ে যায়, তাতে দেশের মানুষগুলোর ক্ষতি কি?
“অন্ধকারের মেয়ে”টা যখন ছোট্ট নোংরা একটা ঘর থেকে তার মক্কেল আসা পর্যন্ত 2g চালিত মোবাইলে opera mini দিয়ে facebook ব্যবহার করতে করতে ১০ টা মিনিটের জন্য হলেও নিজেকে অন্য ৮/১০ টা স্বাভাবিক মেয়ের মত ভাবতে শিখে, তাতে সেই দুঃখী মেয়েটার ক্ষতি কি?
আজিজের DSLR ক্যামেরায় তোলা সেই মেয়েটির ছবি, যে একটা রাবার দিয়ে মোড়ানো ভাঙ্গা মোবাইলে তার স্বামী/প্রেমিকের সাথে কথা বলছিল। আজিজের facebook এ আপলোড করা সেই ছবিটা আমাকে নতুন করে ভালবাসার সংজ্ঞা শিখিয়েছিল। তাতে আমারই বা ক্ষতি কি?
মোটামুটি এই সব বলে লোকটাকে চায়ের দোকানে রেখে, আমি সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। ভাবলাম অনেকক্ষণ হাঁটবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০