somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য রচনা

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আব্দুসসামাদ
‪‎১ম খণ্ড‬
(নিচে অন্য পর্বগুলোর লিঙ্ক দেয়া আছে)

দেখলাম, মাস্টার মশাই আমার পাশ দিয়ে খুব দ্রুত হেঁটে চলে যাচ্ছে। আমি দৌড়ায়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, “স্যার, কই যান?”
মাস্টার মশাই বলল, “যা বলার তাড়াতাড়ি বল, সময় নাই, গঞ্জে যাব। তারপর আরও কাজ আছে”।
আমি বললাম, “স্যার, আমি আপনাকে পা ধরে একটু সালাম করবো?”
মাস্টার মশাই বললেন, “সালাম করবা কেন? সালাম করা কি খুবেই দরকার?”
আমি বললাম, “জি না স্যার, খুব বেশী দরকার নাই”।
-ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি কর। সালাম করার সময় হাত দিয়ে পা একবার ধরবে, ২বার ধরবে না। হাতে সময় কম। রহিমুদ্দিনের নাকি একসাথে ৩ টা বাচ্চা হইছে। আসগর আলি গণক বলছে, এর মধ্যে নাকি একটা বাচ্চা অপয়া। ওটাকে আলাদা করতে হবে। তারপর মাটি চাপা দিয়ে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে।
-বলেন কি স্যার, এটা তো খুবেই ইন্টারেস্টিং। আমারে নিয়া চলেন। আমি বাচ্চাগুলোর চোখ দেখেই বলে দিতে পারবো কোনটা অপয়া বাচ্চা। আর মাটি চাপার দায়িত্বও আমাকে দিয়েন স্যার।
-স্যার বললেন, “কি বিপদের কথা, আচ্ছা চল আমার সাথে”।
-স্যার একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
-হুম কর।
-স্যার, বাচ্চাটারে জীবিত মাটি চাপা দেবেন, নাকি মেরে মাটি চাপা দেবেন? মারলে কিভাবে মারবেন, লবণ খাইয়ে, নাকি গলা টিপে?”
-তোমার কি মত, কোনটা হলে ভাল হয়?
-স্যার, জীবিতই মাটি চাপা দেন। আমার বহু দিনের খায়েস ছিল, একটা মানুষকে নিজ হাতে জীবিত মাটি চাপা দেব। যাক, বড় মানুষ না হোক। ছোট মাসুম বাচ্চা হলেও চলবে। মানুষ তো মানুষই। ছোট আবার বড় কি? এতেই আমি খুশি।

আমি রহিমুদ্দিনকে জোরে ডাক দিলাম, “ও রহিমুদ্দিন, বাড়ি আছো নি?”
রহিমুদ্দিন বাড়ি থেকে হাসিমুখে বের হয়ে বলল, “আরে মাস্টার মশাই, আপনি তো এ সময় স্কুলে থাকার কথা, এখানে কি করেন? পোলা পাইনদের মতো স্কুল চুরি করেন, না? এটা কোন মতেই ভাল না, দেশ জাতি আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।”
আমি বললাম, “মাস্টার মশাই তোমার বাচ্চা দেখতে আসছে। বাচ্চাগুলো নিয়ে আস। তার আগে মিষ্টিমুখ করাও। মিষ্টি ৬ টা নিয়ে আসবে। প্রতিটা বাচ্চার জন্য ২ টা করে”।
রহিমুদ্দিন একটা বাচ্চা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। এসে মাস্টার মশাইকে বলল, “স্যার, দোয়া করে দেন। আপনি দোয়া করলে নির্ঘাত কাজ হবে, বিলেতে যেতে না পারুক। অন্তত আপনার স্কুলে দপ্তরির চাকরীটা পেয়ে যাবে”।
আমি রহিমুদ্দিনকে বললাম, "আরও ২ টা বাচ্চা কি করছ, ওগুলো নিয়ে আস। ওগুলোও দেখতে হবে।
রহিমুদ্দিন অবাক হয়ে বলল, “আরও ২ টা বাচ্চা পামু কই, এই ১ টাই তো হইছে!”
আমি বললাম, “মিয়াঁ ফাজলামি কর। তোমার ৩টা বাচ্চা হইছে। এর মধ্যে ১ টা বাচ্চা অপয়া, ওই বাচ্চাটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। নতুবা শুধু এ গ্রাম নয়, পুরো দেশ শুদ্ধ মাইনাসের খাতায় চলে যাবে, তাড়াতাড়ি নিয়ে আস তো। নতুবা এই বাচ্চা দিয়েই কাজ সারায়ে দেব”।

রহিমুদ্দিন কিছু না বলে ঘরের ভিতর চলে গেল। ঘর থেকে বের হয়ে আসার সাথে সাথে আমি আর স্যার ভয়ে রীতিমত আঁতকে উঠলাম। দেখলাম, রহিমুদ্দিনের হাতে আড়াই ফুট সাইজের একটা রামদা। একদম চকচক করছে। মনে হয় ২/১ দিনের মধ্যে নতুন করে ধার দেয়া হয়েছে।আমি ভয় পেয়ে গেলাম, সাথে সাথে স্যারকে বললাম, "স্যার, রহিমুদ্দিনের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখছেন। কিছুক্ষণ আগেও কি সুন্দর নূরানি চেহারা ছিল। এখন দেখছেন? মনে হইতেছে, প্রতিদিন আস্ত ২টা করে মানুষ চিবাইয়া খায়। মতি গতি ভাল ঠেকছে না। বসে থাকলে ঝুঁকি আছে স্যার। আপনি আর আমাকে কেটে পিস পিস করে বারান্দায় সাজিয়ে রাখার আগ পর্যন্ত থামবে মনে হয় না। বেঁচে থাকার ইচ্ছা থাকলে, খেঁচে দৌড় দেন স্যার”।

আমি দৌড়ায়ে স্যারের বেশ আগেই চলে আসতে পারলাম। রহিমুদ্দিন একটুর জন্য স্যারকে মিস করেছে। দূর থেকে শুনলাম রহিমুদ্দিন চিৎকার করে বলতেছে, "সামাইদ্দা, দেখে নিস, তোরে গ্রাম ছাড়া করা পর্যন্ত আমার মেয়ের কোন নামই আমি রাখুম না। আর স্যার, আপনি আমার গুরুজন। আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি। স্কুলে থাকা কালে শুধু শুধু যতবার পিটাইছেন সব ভুলে গেছিলাম। কিন্তু আজ অতীতের সব কিছু আবার মনে আসতেছে। দেখে নিয়েন, আপনার বর্তমান চাকরীটা চুষে লেবেনচুসের মত না খাওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নাই”।
স্যার হাঁপাতে হাঁপাতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি জানতে না রহিমুদ্দিন এমন?”
আমি বললাম, “জানতাম স্যার। এর আগেও ও মানুষ কোপাইছে। তবে স্যার কেউ মরে নাই। সে হিসেবে আপনি ২/১ টা কোপ খাইলেও মরার কোন সম্ভবনা ছিল না স্যার।”।
স্যার বলল, “তাহলে এসব কথা আগেই আমাকে বলনি কেন!?”
আমি স্যারকে বললাম, “আগে জানলে কি করতেন স্যার?”
স্যার বলল, “একটু সুবিধা হত, আরেক টু আগেই দৌড় দিতে পারতাম। দেখলে না, একটু হলে ধরতে ফেলতো। আর ধরতে পারলে কি করতো বুঝতে পারছ? রক্ত মাংস এক করে ফেলত”।
আমি বললাম, “স্যার, আমার মনে হয় কি জানেন, বাচ্চা মেয়েটা আসলেই অপয়া। দেখছেন না, আমরা ২ জন তার মুখ দর্শনের সাথে সাথে, এখন থেকে আমি গ্রামে থাকতে পারি কিনা মনে হয় না। তাছাড়া, মনে হয় না, আপনিও বাঁচতে পারবেন। দেখবেন, রহিমুদ্দিন আপনার চাকরীটা খেয়ে দেবে, আল্লাহর কিরা। আর যদি চাকুরী নাও খেতে পারে, দেখবেন, কাল থেকে আপনি স্কুলের ত্রিসীমানায় ঢুকতে পারবেন না, রামদা নিয়ে আপনাকে পাহারা দেবে। এখন থেকে আমাদের জীবন মরণ সব একদম রহিমুদ্দিনের হাতে চলে গেল, স্যার।”।
স্যার বললেন, “মন খারাপ করিও না, সবেই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। আমরা উচিলা মাত্র”।
আমিও মত দিলাম, “জি স্যার, খারাপ বলেন নাই। সবই উপরওয়ালার ইচ্ছা”।

(চলবে)

এখান থেকে পড়ুন
২য় খণ্ড
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×