somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইহুদিবাদী ইসরাইলের অবৈধ জন্মের ইতিকথা।

২১ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ১৫ই মে ছিল ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী। এ দিনটি ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের কাছে ‘নাকাবা দিবস’ হিসেবে পরিচিত। ‘নাকাবা’ অর্থ হলো বিপর্যয়। ১৯৪৮ সালের এ দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে দখলদার ইসরাইল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ বিষয়েই এখানে আমরা বিস্তারিত আলোচনার প্রয়াস পাব।

পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা পরিবর্তন। কোনো কোনো পরিবর্তনে মানুষ নতুনকরে আশাবাদী হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে নৈতিকতা ও মানবিকতার বিকাশ ঘটবে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন। ভেবেছিলেন বিশ্বজুড়ে অন্যায় ও অবিচারের মাত্রা কমে আসবে। মানুষ নিজের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যের অধিকারকেও সম্মান করবে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শ্লোগানে আন্তর্জাতিক সংস্থার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও এ আশা জোরদার হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই ঘটেনি। আধিপত্যকামীদের ক্ষমতা ও অর্থের লোভ সবকিছুতেই হতাশার ছোয়া লাগিয়ে দিয়েছে। অন্যায় ও জুলুমের পদ্ধতিতে হয়তো পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু তা পুরোদমেই অব্যাহত রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ইসরাইলের দখলদারি এবং হত্যা-নির্যাতনে কোন পরিবর্তন আসেনি।

নিঃসন্দেহে গত দুইশ’ বছরের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে কষ্টদায়ক হলো- ইহুদিবাদীদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল। ফরাসি গবেষক রুযে গারুদি বলেছেন, “রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই ইহুদিবাদের উৎপত্তি। ইহুদিবাদীরা তাদের অবৈধ লক্ষ্য হাসিল করতে ইহুদি ধর্মকে অপব্যবহার করছে।” ইহুদিবাদীরা গত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনি জাতির ওপর চরম দুঃখ-দুর্দশা চাপিয়ে দিয়েছে। সেখানে চালানো হচ্ছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। ফিলিস্তিন দখল করে সেখানে এমন একটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই সংকটের গভীরে নিক্ষেপ করেছে।

অবৈধ ইসরাইলের কারণে গত ৬৬ বছর ধরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই অশান্তি ও অনিরাপত্তার আগুনে জ্বলছে। এর জন্য সাম্রাজ্যবাদী সরকারগুলোর ক্ষমতালিপ্সাই প্রধান কারণ। ইসলামী জগতের একেবারে কেন্দ্রে ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে সুদূরপ্রসারী অশুভ লক্ষ্য কাজ করেছে, তা বোঝা যায় ইতিহাস ঘাটলেই। ঊনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে আধিপত্যের বলয় বাড়ানো নিয়ে তিন ইউরোপীয় দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল। বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা নানা অপকৌশল অবলম্বন করছিল। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ওপরও তাদের লোলুপ দৃষ্টি ছিল। কারণ ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এই ফিলিস্তিন। ভৌগলিক দিক থেকে এটি একটি কৌশলগত অঞ্চল। সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শাসনামলে ফিলিস্তিনকে নিজের উপনিবেশে পরিণত করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালায় ফ্রান্স।

ফ্রান্সের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি টের পেয়ে এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয় ব্রিটেন। এ পরিকল্পনার আওতায় সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদিবাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। এরই আওতায় দখল হয়ে যায় কয়েক হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক ফিলিস্তিন। ওসমানীয় সাম্রাজ্য যখন ক্ষয়িষ্ণু তখন পাশ্চাত্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব চলছিল। এ অবস্থায় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনন্মুখ পরিস্থিতি ইউরোপকে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য দু’টি জিনিস প্রয়োজন ছিল। এক- মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের একাংশ নিয়ে গঠিত উসমানীয় সাম্রাজ্যকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা। দুই- টুকরো টুকরো ভূখণ্ডে পাশ্চাত্যের স্বার্থ সংরক্ষণকারী পুতুল সরকার বসানো।

ওসমানীয় সামাজ্যের পতন ও মুসলিম বিশ্বের প্রভাব ক্ষুণ্ন করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৮৯৭ সালে থিয়োডর হার্জেল ও তার সহযোগীরা সুইজারল্যান্ডে এক সমাবেশের মাধ্যমে বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। হার্জেল পরবর্তীতে ইহুদিবাদের জনক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বিশ্বে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তার বড় লক্ষ্য। কোথায় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে, সে ইস্যু সামনে আসলে বিভিন্ন এলাকার নাম উত্থাপিত হয়। হার্জেল ফিলিস্তিনেই ইহুদিদের জন্য প্রথম রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের পক্ষে ছিলেন। ওসমানীয় সাম্রাজ্য হার্জেলের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজি না হওয়ায় হার্জেলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিবাদীদের নানা ষড়যন্ত্রের মাঝেই শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধে নয়া শক্তির সমীকরণের এক পর্যায়ে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এরপর বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে। ইহুদিবাদের প্রতি ব্রিটিশ সামাজ্যবাদের সমর্থন ফিলিস্তিনে প্রথম ইহুদিবাদী সরকার গঠনের ক্ষেত্র তৈরি করে।

১৯১৭ সালে উপনিবেশবাদী ব্রিটেন ও বিশ্ব ইহুদিবাদের মধ্যে সম্পর্কের নয়া অধ্যায় শুরু হয়। ওই বছর তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। ১৯১৮ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রসংঘ ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটেনের একাধিপত্যকে স্বীকৃতি দেয়। তিন দশক ধরে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে ছিল ফিলিস্তিন। তখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল এটি। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসকরা ফিলিস্তিনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল। এই তিন দশকে বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা ফিলিস্তিনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফিলিস্তিনের দিকে ইহুদিদের ঢল নামে। নানা দেশ থেকে তাদেরকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে ইহুদিবাদীদের জন্য স্থায়ী আবাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। শক্তি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনিদেরকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়।

এ সময় ব্রিটিশ সরকারের মদদে ইহুদিবাদীরা গোপনে ‘হাগানা’ নামের সন্ত্রাসী সেনাদল গঠন করে। তারা নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যার মিশনে নামে। একের পর এক বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। এ অবস্থায় পাশ্চাত্যের পুঁজিপতিরা ইহুদিবাদীদেরকে ব্যাপক অর্থ সাহায্য দেয়। এ অর্থে তারা ফিলিস্তিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারখানা ও বিভিন্ন ইহুদিবাদী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে,যাতে সুযোগ এলেই ইহুদিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া যায়। অবশেষে ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনকে ভাগ করার ইশতেহার প্রকাশ করে। এরই ভিত্তিতে ফিলিস্তিনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। এক অংশ দেয়া হয় ইহুদিবাদীদেরকে। সেখানে তারা ইহুদি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। অন্য অংশ দেয়া হয় ফিলিস্তিনিদেরকে।

একপেশে ওই ইশতেহারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ফিলিস্তিনের মোট ভূখণ্ডের অর্ধেককে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্বের মোড়লদের ইহুদিবাদপ্রীতির কারণে আজও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডেও মোতায়েন রয়েছে ইহুদিবাদী বাহিনী। জাতিসংঘের একপেশে ইশতেহারের পক্ষে ভোট দিয়েছিল ৩৩টি দেশ। এর মধ্যে ছিল আমেরিকা, ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ। ১৩টি দেশ ইশতেহারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। ভোটদানে বিরত ছিল আরও দশটি দেশ। ইশতেহার প্রকাশের এক বছর পর ফিলিস্তিন অংশটিও ইহুদিবাদীরা দখল করে নেয়। এর ফলে সেখানে নেমে আসে হাহাকার। শরণার্থীতে পরিণত করা হয় অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে। তার হয়ে পড়েন সহায়-সম্বলহীন।

ফিলিস্তিনি মুসলমানদের এ দুর্দশার মাঝে ইসলামি ও আরব দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও বিবাদ ছিল শতাব্দির সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। এই সুযোগে অবশেষে ১৯৪৮ মাসের মে মাসে ফিলিস্তিন থেকে ব্রিটিশ বাহিনী চলে যায়। শুরু হয় ইহুদিবাদীদের দুঃশাসন।

১৯৫০’র দশকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ার বলেছিলেন, “ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্ম আর ফিলিস্তিনের কথা মনেই করতে পারবে না।” ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ইহুদিদের ভূখণ্ড বলেও তিনি জোর গলায় দাবি করেছিলেন।

তবে ফিলিস্তিনিদের সাহসিকতা ও প্রতিরোধ প্রমাণ করে গোল্ডা মায়ারের মতো ইহুদিবাদীদের স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি। কারণ ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মও মাতৃভূমি উদ্ধারে সোচ্চার রয়েছে এবং প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব শুধু ফিলিস্তিন নয় গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইল সৃষ্টির পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি ও অনিরাপত্তা জেকে বসেছে। ১৯৪৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের ওপর অন্তত ১০টি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এসব যুদ্ধের মধ্যে ১৯৬৭, ১৯৮২ ও ২০০৬ সালের যুদ্ধের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ফিলিস্তিন জবরদখলের দুই দশক পর ১৯৬৭ সালে ইহুদিবাদীরা আরব বিশ্বের ওপর ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। এ সময় ইহুদিবাদী ইসরাইল জর্দান নদীর পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাস, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিশরের সিনাই মরুভূমি দখল করে নেয়। আরব ভূখণ্ড দখলের পর এসব এলাকায় ইহুদি উপশহর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। জমি দখলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের অবশিষ্ট বসতিগুলোকে একে অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করা হয়। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের শহর ও গ্রামগুলো পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকার মাঝখানে ইহুদি উপশহর নির্মাণ করা হয়েছে। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদেরকে নিয়ে আসার প্রবণতা আরো বেড়ে যায় এবং ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সেখানে ইহুদি অভিবাসীদেরকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে সব হারিয়ে শরণার্থীতে পরিণত হয় অগণিত ফিলিস্তিনি।

ইসরাইলের এ ধরনের অমানবিক তৎপরতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ দুটি ইশতেহার প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের ইশতেহারে ১৯৬৭ সালে দখলীকৃত ভূখণ্ড থেকে সরে আসতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল ওই দুই ইশতেহারকে কোন গুরুত্বই দেয়নি। এখনও তারা পুরোদমে ইহুদি বসতি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ২০০২ সালে ইসরাইল ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মাণ করেছে। এ দেয়ালের উচ্চতা ছয় মিটার। এটি বর্ণবাদী দেয়াল নামেও পরিচিত। এই দেয়ালের মাধ্যমেও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের আরো একটা অংশ নতুনকরে দখলে নিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কোনো প্রতিবাদকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না ইসরাইল। গাজার ওপর ইহুদিবাদীদের ৭ বছরের সর্বাত্মক অবরোধও এখনও অব্যাহত রয়েছে।

অবরোধের পাশাপাশি গাজার ওপর মাঝে মধ্যেই ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইহুদিবাদীরা। বিশেষকরে ২০০৮ সালে ২২ দিন ও ২০১২ সালে ৮ দিনের ব্যাপক হামলায় গাজাজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শাহাদাতবরণ করে বহু নিরপরাধ ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের মুখে ইহুদিবাদী সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হলেও কাপুরুষের মতো ফিলিস্তিনের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে তারা। পরমাণু অস্ত্র তৈরির মাধ্যমেও গোটা অঞ্চলকে হুমকির মুখে রেখেছে ইসরাইল। দিমুনা গ্রামে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্র মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। অবৈধ রাষ্ট্রটি পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটিতে সই করেনি। তারা একের পর এক পরমাণু বোমার মজুদ গড়ে তুলছে। ইসরাইলের কাছে শত শত পরমাণু বোমা রয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরাইলের অপকর্ম এখন গোটা বিশ্বের কাছেই সুস্পষ্ট। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রথম দিকে যারা ইসরাইল প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলেন তারাই এখন এ কথা স্বীকার করছেন- ইসরাইল দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে এবং এটি ভেতর থেকেই ভেঙে পড়বে। যেসব ইহুদি ধোকায় পড়ে অন্য দেশ থেকে ইসরাইলে এসেছিল এখন তারা ইসরাইল ছাড়তে শুরু করেছে। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, ইসরাইলি রাজনীতিবিদদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয় এবং অর্থনৈতিক দুর্নীতি ইসরাইলের পতনের ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বলেছেন, “ইসরাইল এখন অভ্যন্তরীণভাবে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে এবং এই সংকট ইসরাইলকে ভেতর থেকেই পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।” তিনি বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোস্লোভাকিয়া ও ইউগোস্লাভিয়াও রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভঙুর হয়ে পড়েছিল। কারণ ভেতর থেকেই তাদের পচন ধরেছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলে গণঅসন্তোষ বেড়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই লাখ লাখ বঞ্চিত মানুষ রাজপথে মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। এসব বিক্ষোভকারী বৈষম্য, দারিদ্র, ক্ষুধা, বেকারত্ব, আবাসন সংকট, নৈতিক স্খলন এবং পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে। এই সেই ইসরাইল যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদেরকে সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে আনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল তাদের জন্য ভূস্বর্গ বানিয়ে দেয়া হবে। এসব ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদেরকে ইসরাইলে আনা হলেও এখন উল্টো চিত্রটিই চোখে পড়ছে। সামাজিক বৈষম্যের প্রতিবাদে এরইমধ্যে ১৪ জন বিক্ষোভকারী নিজের শরীরে নিজেই আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ১৪ জন আত্মহত্যাকারীর প্রথম ব্যক্তি ছিলেন মুশে সালমান। শরীরে আগুন দেয়ার কয়েক দিন পর তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। তিনি নিজের শরীরে আগুন দেয়ার আগে এক বার্তায় বলেন, ইসরাইলি নেতারা হলো চোর। তারা মানুষের অর্থ-সম্পদ চুরি করেছে। সাধারণ মানুষের কথা তারা ভাবে না।

ওই আত্মহত্যার ঘটনার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ বিক্ষোভে নামে এবং তারাও মুশে সালমানের কথাগুলোর প্রতি সমর্থন জানায়। এ ধরনের নানা অভ্যন্তরীণ সংকট ইসরাইলি নেতাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ ধরনের অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে মানুষের দৃষ্টিকে সরাতে তারা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন নতুন যুদ্ধ ও সংকট তৈরির পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধও সে ধরনের ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। এছাড়া, ইরানভীতি ছড়িয়ে দিয়ে অভ্যন্তরীণ সঙ্কটকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে ইসরাইল। ঘরে-বাইরে কোথাও ভালো নেই ইসরাইল। বিশেষকরে আমেরিকা নিজেই অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় ইসরাইলের প্রতি দেশটির অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে। সব মিলিয়ে ইসরাইলি নেতারা এখন নিজেরাই তাদের অস্তিত্বের সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। তারা নিজেরাই স্বীকার করছেন যে, ইসরাইল ভেতর থেকেই ভেঙে পড়তে পারে। আর এমনটি হলে গোটা বিশ্বই মুক্তি পাবে বলে সচেতন মহল আশা করছে।
কপি পেস্ট টু হ্যালো টুডে।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×