somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যপ্রাচ্যে সর্ষের ভুত বাদশাহ কিংবা সামরিক শাসক?

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হামাসের প্রতি বিদ্বেষ, তাই গাজায় গণহত্যায় নীরব আরব শাসকরা দুবছর আগে ইসরাইল যখন ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চালায় তখন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের অবন্ধুসুলভ আরব প্রতেবেশি দেশগুলো ইহুদিবাদী দেশটির ওপর সব দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না।

মিশরের সামরিক বাহিনী গত বছর দেশটির ইসলামপন্থী সরকারকে উৎখাতের পর মিশরের নেতৃত্বে আরব দেশগুলোর একটি নতুন জোট হয়েছে। এর মধ্যে আছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান। তারা গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামপন্থী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কার্যকরভাবে ইসরাইলের পেছনে দাঁড়িয়েছে। সম্ভবত এ কারণেই গাজায় তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রক্তপাত চললেও সমঝোতার মাধ্যমে কোনো যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো যায়নি।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন প্রেসিডেন্টের সময়কালে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সাবেক আলোচক আরন ডেভিড মিলার বলেন, ‘ রাজনৈতিক ইসলামের প্রতি আরব দেশগুলোর (নেতাদের) বিদ্বেষ ও ভীতি এতোটাই প্রবল যে তারা (ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী) নেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ব্যাপারে তাদের অ্যালার্জি পরিত্যাগ করেছেন।’

‘আমি এমন পরিস্থিতি কখনোই দেখিনি যে এতোগুলো আরব রাষ্ট্র গাজায় মৃত্যু এবং ধ্বংসকে নীরবে মেনে নিচ্ছে এবং হামাসের সাথে বিবাদে জড়াচ্ছে। এই নীরবতা কর্ণবিদারী।’

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কাছে ‘সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী’ হিসেবে বিবেচিত হামাসের সাথে যে কোনো আলোচনায় ঐতিহ্যগতভাবেই মিশর গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার কায়রো একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের খসড়া দিয়ে সবাইকে বিস্মিত করেছে- এতে ইসরাইলের বেশিরভাগ দাবিই মানা হয়েছে কিন্তু হামাসের কোনো দাবিই স্থান পায়নি। প্রথম দিকেই এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে হামাস বেশ বেকায়দায় পড়ে। মিশর দাবি করতে থাকে যে ভবিষ্যতে যে কোনো আলোচনার সূত্রপাত হতে হবে ওই প্রস্তাবের আলোকে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল বিশ্লেষকরা এই প্রস্তাবকে হামাসের প্রতি চাতুরি বলে নিন্দা করলেও মিশরের আরব মিত্ররা এর প্রশংসা করতে থাকে। সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিকে টেলিফোন করে এই প্রস্তাবের প্রশংসা করেন।

এরপর সিসির দপ্তর থেকে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয় তাতে ইসরাইলের কোনো সমালোচনা ছিল না।

‘ইসরাইলের সাথে এসব শাসকদের স্বার্থ স্পষ্টতই একই ধারায় মিলেছে’, মন্তব্য করেন ফিলিস্তিনি আলোচকের সাবেক উপদেষ্টা ও ওয়াশিংটনের ব্র“কিংস ইন্সটিটিউশনের গবেষক খালেদ এলগিন্ডি।

খালেদ বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই যেন মিশরের রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের লড়াই প্রায় অভিন্ন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এটা কার প্রক্সি যুদ্ধ?’

এসব ঘটনায় আরব বসন্তের গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশাই উল্টে গেছে।

অথচ মাত্র ১৮ মাস আগেও ইসরাইল, ওয়াশিংটন ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বেশিরভাগ বিশ্লেষক আশা করেছিলেন যে আরব বসন্ত আরবে সরকারগুলোকে জনগণের প্রতি আরো বেশি দায়বদ্ধ করবে এবং এরফলে তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরো বেশি সহানুভূতিশীল এবং ইসরাইলের প্রতি আরো বেশি বৈরি হবে।

কিন্তু আরো বেশি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিবর্তে আরবের ওই টালমাটাল অবস্থার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে ইসরাইলি সরকার অপ্রত্যাশিত উপকারভোগীতে পরিণত হয়েছে এবং রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে অভিন্ন লড়াইয়ে আরবের পুরনো রক্ষণশীল শাসকদের মিত্র হিসেবে পাচ্ছে।

এমনকি জাতিসংঘের স্কুলগুলোতে ইসরাইলি হামলার পরও মিশরীয় কর্মকর্তারা সরাসরি অথবা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ফিলিস্তিনি মৃত্যুর জন্য ইসরাইলের পরিবর্তে হামাসকে দায়ী করছে।

এক বছর আগে মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাতের পর সরকারপন্থী গণমাধ্যমগুলো যেভাবে মিশর এবং এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইসলামপন্থীদের গালাগাল করতো, এখনও হামাসের বিরুদ্ধে সেই প্রচারণায় সেই অস্ত্র ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।

মিশরীয় প্রসিকিউটররা ২০১১ সালের বিপ্লবের সময় জেল ভেঙে মুরসিসহ ব্রাদারহুড নেতাদের পালানোর ঘটনায় মিশরে সহিংসতা সৃষ্টি, সেনা ও পুলিশকে হত্যার জন্য হামাসের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেছে।

মিশরের অন্তত একটি সরকারপন্থী টক শোতে হামাসের বিরুদ্ধে এতোটাই উগ্র কথাবার্তা বলা হয় যে ইসরাইলি কিছু সম্প্রচার মাধ্যম তা আবার গাজায় প্রচার করে থাকে।

গাজার ছাত্রী মাইসাম আবুমর টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ তারা যেন বলতে চাইছে যে দেখ তোমরা যাতে বন্ধু বলো তারাই তো আমাদেরকে তোমাদের মারতে উৎসাহিত করে। তারা বলছে, হামাসের হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য মিশরীয় সেনাবাহিনীর উচিৎ ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা।’

একই সময়ে মিশর গাজা সীমান্তের সুড়ঙ্গপথগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর ফলে তিন সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধে খাদ্য, পানীয় ও চিকিৎসা সামগ্রীর সংকটে পড়েছে গাজাবাসী।

দক্ষিণ গাজার বেইত লেহিয়ার দোকানদার সালহান আল-হারিশ বলেন, ‘সিসি নেয়ানিয়াহুর চেয়েও জঘণ্য এবং মিশরীয়রা ইহুদিদের চেয়েও আমাদের বিরুদ্ধে বেশি ষড়যন্ত্র করছে। তারা মিশরের ব্রাদারহুডকে শেষ করে দিয়েছে এবং এখন তারা হামাসের পেছনে লেগেছে।’

মিশর এবং আরব রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো-যেমন সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের সাথে জোট বেঁধেছে। তাদের অভিন্ন শত্রু আঞ্চলিক শক্তি ইরান। হামাসকে তহবিল ও অস্ত্রশস্ত্রের যোগান দেয়ার ইতিহাস রয়েছে ইরানের।

এই পরিবর্তনের কারণে গাজার যুদ্ধ বন্ধে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মিশরীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হোসনি মোবারক ও মুরসি আমলের মতই হামাসের সাথে কথাবার্তা চালাচ্ছে। কিন্তু হামাসের প্রতি মিশরের শত্রুতার কারণে, বিশেষ করে মিশরের প্রথম যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পর, আলোচনার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ কারণে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে বিকল্প মধ্যস্ততাকারী হিসেবে তুরস্ক ও কাতারের মত ইসলামপন্থী দেশগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়তে হয়েছে। আরব বসন্তের পর রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানের পর এই দুটি দেশের আঞ্চলিক প্রভাব বেড়েছিল। তবে এই স্রোত কমে যাওয়ার পর এখন তাদের বিচ্ছিন্নতার মাত্রাও বেড়েছে।

তা সত্ত্বেও মিশর ও আরব মিত্রদের পরিবর্তে হামাসের প্রতি কম বৈরি এবং ইসরাইলের প্রতি কম সহাযোগিতামূলক এই দেশ দুটির দিকে ঝুঁকেছেন কেরি।

কায়রোতে ইসলামপন্থী বিরোধী, সেনা সমর্থিত সরকারের উত্থানের সাথে সাথে মিশরের নতুন সরকার এবং সৌদ আরব বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে হামাসকে পরাজিত করার যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ পোহাতেই হবে । কারণ হামাসকে বিজয়ী হতে দেয়া যায় না এবং ফিলিস্তিনের সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবে তাদের উত্থানকেও মেনে নেয়া যায় না।

তবে মিশরীয় কর্মকর্তারা দাবি করছেন যে মিশরীয় সেনাবাহিনী এবং রেড ক্রিসেন্ট গাজায় চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছে। হামাসের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে কায়রো। এমনকি হামাসের এক নেতা, মুসা আবু মারজুক, কায়রোতেই বাস করছেন।

কোনো কোনো বিশ্লেষক যুক্তি দেখাচ্ছেন যে হামাসের প্রতি নেতাদের বিদ্বেষ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি জনগণের আবেগময়ী সমর্থনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে মিশর ও তার আরব মিত্ররা। তবে গাজায় যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চলছে তাতে এ ধরণের ভারসাম্য রক্ষা আরো বেশি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ফিলিস্তিনি সাবেক উপদেষ্টা খালেদ বলেন, ‘আরব বসন্তের পেন্ডুলাম এখন দুলছে ইসরাইলের অনুকুলে, ঠিক যেমনটা এর আগে ছিল এর বিপরীতমুখী। তবে আমি নিশ্চিত নই যে কাহিনীর এখানেই শেষ কিনা।’

নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে নেয়া
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×