somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius)- The Golden Ass(ধারাবাহিক) অনুবাদ

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লুসিয়াসের রূপান্তর-সপ্তম অধ্যায়

কিউপিড আর সাইকি(১)

‘অনেক অনেক দিন আগেকার কথা,এক দেশে ছিল এক রাজা আর রানী,তিন তিনটে সুন্দরী ফুটফুটে মেয়ে ছিল তাদের।এমনই সুন্দরী ছিল তারা হয়তো বা কথায়,ভাষায় সেটা অবর্ননীয়,বড় দুই মেয়ের সৌন্দর্য কিছুটা যদিও কথায় বলা যায়,ছোট মেয়ের সৌন্দর্য বর্ননা কোন ভাষার প্রযুক্তিতে একেবারেই অসম্ভব।প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শুধু এক নজর দেখতে আসতো রাজার ছোট মেয়েকে,রাজ্যের অধিবাসী,বিদেশি লোকজন একের পর এক।অবাক চোখে সবাই যেন দেখছে দেবী ভেনাসকে-এমন কি এভাবে যথাযথ পুজো উপঢৌকনও দেয়া আরম্ভ করলো সবাই যেন দেবীর পূজা করছে।বুড়ো আঙ্গুল,প্রথম আঙ্গুল দুটো একসাথে ঠোঁটের চুমুতে অভিনন্দন জানাতো লোকজন ছোট রাজকুমারীকে,পূজার ভঙ্গীতে।ধীরে ধীরে তার সৌন্দয্যের কথা ছড়িয়ে পড়লো দেশে বিদেশে-লোকজনের মুখে মুখে সৌন্দর্য্যের প্রশংসা সাইকির।
এমন কি অনেকে বলতো-“এ দেবী ভেনাসের নতুন জন্ম আমাদের মাঝে,সমুদ্রের গভীর নীল থেকে উঠে এসেছে দেবী ভেনাস,মানুষ হিসেবে আসা,আমাদের সৌভাগ্য সাধারন চোখ দিয়ে তাকে দেখার সুযোগ আমাদের”।
আবার অন্য কিছু লোক বলতো-“মর্তে আসা নতুন সৌন্দর্যের দেবী এই একজন,তার সৌন্দর্য ছাড়িয়ে যায় আকাশের যে কোন দেবীকে”।
তার সৌন্দর্যের গল্প ছড়িয়ে গেল এমন ভাবে-যে অনেকে ছুটে আসতো শুধু একবার তার দর্শনের আশায়।দেবী ভেনাসের মন্দির স্রেপিয়ান সাপোসে,কারিয়ান কানিডোস এমন কি সিঁথারা দ্বীপেও হঠাৎ লোকজনের আনাগোনা বেশ কমে গেল।মন্দিরগুলোতে নিয়মিত অনুষ্ঠানেও বেশ ভাঁটা পড়লো,ভেনাসের মুর্তিগুলোও পরিষ্কারও করে না কেউ-আর মন্দিরগুলোর পরিচ্ছন্নতার কথা তো নেইই।

রাজকন্যা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় লোকজন তাকে ফুল দিয়ে পূজা করা আরম্ভ করলো,এমনকি স্বর্গের দেবীদের মত তাকে সম্মান করে বলি দেয়াও আরম্ভ হলো,ফুলের মালা,এমনকি সৌন্দর্যের,ভালবাসার দেবী ভেনাসের নানান উপাধিতে তাকে আহ্বান করাও শুরু করলো।খবরটা দেবী ভেনাসের পৌঁছাতে সময় লাগেনি,তার এ ধরনের অবমাননায় দেবী ভেনাস বেশ রাগান্বিত, “এ ধরণের র্দূব্যাবহার অসহনীয়,একেবারেই অভাবনীয়,আমি ভেনাস,আমার উপাধি জগতমাতা,এটা তো সুধী দার্শনিকদেরই বলা।আমি যে পঞ্চভূতের উৎস-এখন আমার খ্যাতির ভাগী মর্তের এক মুখ্,যে অভিনয় করে যাচ্ছে নিজেকে ভেনাস হিসাবে।আমার নামে মর্তে কাদামাটি ছড়াছড়ি হচ্ছে,আর আমাকে সেটা চুপচাপ করে সহ্য করতে হবে?সহ্য করতে হবে বলি দেয়া মর্তের একজনকে ভেনাস হিসাবে? না এটা চলতে পারে না,এটার একটা বিহিত অবশ্যই করা দরকার।মাটির ওই সুন্দরীকে এমন একটা শিক্ষা দিতে হবে,যেন ঐ সৌন্দর্য যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় তারই জন্যে”।


ভেনাস ডেকে পাঠালো তার ছেলে-ইরোসকে,আমরা অনেক সময় যাকে ডাকি কিউপিড বলে-ডানাধারী প্রেমের অভাবনীয় সেই সুন্দর দেবতা।প্রেমের তীর ধনুক নিয়ে সুন্দরীদের ধাওয়া করা আর প্রেমের কথায় ঘর ভাঙ্গা,শুধু এটাই তার কাজ।স্বর্গের দেবতারা যদি ও শাস্তি দেয় নি তাকে কোন সময়-তার অপকর্মের জন্যে,কাঁরন কিছুটা ভেনাস।ভেনাসেরও অজানা ছিল না তার ছেলের অপকর্মের কথা,ছেলের সাথে তার সম্পর্কটা অত ভাল না হলেও,তাকে ডেকে পাঠালো ভেনাস।।এখানে বলা দরকার,এই তৃতীয় রাজকন্যার নাম সাইকি।

ভেনাস অনেকটা অভিযোগ করেই বললো কিউপিডকে-“বাবা,তুমি নিশ্চয় সহ্য করবেনা,
তোমার মায়ের এ অপমান।আমি চাই তুমি তোমার মোহের তীর আর ভালবাসার আগুন দিয়ে বশ করো ঐ ডাইনীকে।এমন শিক্ষা দেবে তাকে,পৃথিবীর সকলের ঘৃনার পাত্র হয়ে থাকে ঐ শয়তান মেয়েটা”।

ভেনাস কিউপিডকে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে,ধীরে ধীরে চলে গেল সমুদ্রের দিকে।ছুটে আসা সমুদ্র স্রোত,তাদের বিশাল সোচ্চার গর্জন,থমকে গেল ভেনাসের পায়ের ছোয়ায়,তারপর নাচতে নাচতে স্রোতের একটা ধাক্কা যেন তার নামধরে ডাকতে ডাকতে ছুটে আসলো।জলের পরী নিরিএডেরা ও এসে যোগ দিল তাদের মিষ্টি গানের সুরে।যোগ দিল সমুদ্র দেবতা নেপচুন-যাকে অনেক সময় বলা হয় প্রটোমিনাস তার মুখ ভঁরা নীল দাঁড়িতে।ছিল নেপচুনের বৌ সালাসিয়া-সমুদ্রের দুষ্টু মেয়েটা,তার কোলে একগাদা ঝিনুক,পালামিওন-তার বাহন শুশুকদের নিয়ে।ছুটে এলো সমুদ্র দেবতার বার্তাবাহক-ট্রাইটন,তার সাথে তার সেনাবাহিনী উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম চার দিকের সবাই।ভেনাসে রোদের ঝলকের সোনালী চেহারার মুখটা-হাতে তার আয়না,নিজেতে নিজেতে মুগ্ধ।ভেনাসের যাত্রার এটাই ধরণ।

চার পাশের আনুষ্ঠিকন্তায় সাইকির কোন আনন্দ ছিল না কোন সময়-তার মনে হতো এই সব শ্রদ্ধা,পূজা শুধু লোক দেখানো, কোন ভালবাসা ছিল না সেখানে।একটা চুমু নেই ঠোঁটে-শরীর মেলানো নেই ভালবাসায়।পূজা করছে সবাই মূর্তির মত-ভালবাসায় ভেসে যাচ্ছে না কেউ,ভালবাসায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না কেউ।সাইকির কাছে মনে হতো বোনেরা বরং অনেক ভাল আছে তার চেয়ে,রাজপুত্রদের পচ্ছন্দ,পচ্ছন্দ করে রাজপুত্ররা বিয়ে করেছে তাদের।বিয়ে হয়নি,সাইকির,রাজপ্রাসাদে একা,একাকীত্বের নির্জনতায় ভুগছে,তার সৌন্দর্যই যে তার অভিশাপ।


রাজাআ,তার বাবার ধারনা ছিল-দেবতারা রেগে আছে তার মেয়ে সাইকির ওপর,এজন্যে দরকার দেবতাদের আর্শীবাদ।তাই সাইকি গেল এপোলোর মন্দিরে মিলাটেসে-যথারীতি প্রাথর্না আর উৎসর্গের পর,দেবতার যোগাযোগ মাধ্যম জানালো ল্যাটিন ভাষায় বললো দেবতার মন্তব্য-


দুরে কোন পাহাড়ি উপত্যকায়,
কুমারী হারাবে তার যৌবনের সম্ভার,
জামাই তোমার কোন রাজপুত্র নয় সে,
নয় কোন মর্তের মানুষ,
ভালবাসা খেলার,বিষধর দেবতা এক।
বাতাসে ভেসে যাওয়া তার,আগুন অস্ত্র হাতে,
ক্ষমতা তার চরম সেই স্বর্গের আকাশেও,
স্বর্গের রাজা জুপিটারও মেনে নেওয়া ক্ষমতা চরম,
এমনকি মৃতের দেশ ষ্টিংস নদীর অন্ধকার।


খবরটা শোনার পর রাজার মনে ছিল না কোন হাসি আনন্দ, দুঃখ ভারাক্রান্ত নতুন এক মানুষ,ফিরে গেল রাজপ্রাসাদে মলিন এক মুখ,দুঃখে ভেঙ্গে পড়া আরেকজন।রানীকে বললো মিলেটাসের ভবিষৎ বানীর কথা।কান্নায়,হতাশায় কাটে তাদের দিন,তবে এটাতো দেবতার ভবিষৎ বানী,শুধু মেনে নেওয়া এছাড়া কিইবা আছে করার।

‘দৈববানীর কথামত,সময় ঠিক করা হলো আনুষ্ঠানিক ভাবে সাইকির বিয়ের-অজানা কোন এক দেবতার সাথে।মশাল জ্বালানো হলো হাল্কা বাতি,এমন কি গানটাও বাজানো হলো তবে বিয়ের হৈচৈ এর গান না,লিডিয়ান বিলাপের গান।এ তো কোন বিয়ের অনুষ্ঠান না,একটা শবযাত্রা।সাইকি যদিও বিয়ের পোশাকে সেজেগুজে ছিল,তবে স্বভাবজাত কনের উৎসাহ আনন্দ ছিল না তার মনে,শুধু লাল রং এর পোশাকের এক কোন দিয়ে মুছে যাওয়া শুধু চোখের পানি।উপস্থিত সকলের দুঃখে আর হতাশায় ভঁরা,তাদের রাজার এই দুরবস্থা দেখে।কিন্ত কিছু করার নেই কার ও-এ তো এপোলোর মন্দিরে,সাক্ষাৎ এপোলোর ভবিষৎ বানী।সব আনুষ্ঠানিকতার যাত্রা শুরু হলো সাইকিকে নিয়ে,তবে কনের যাত্রা না যেন শবযাত্রা।

‘বাবা মার ভাবছিল সাইকির মন্দির যাত্রার অনুষ্ঠানটা দেরী করার জন্যে- তবে সাইকি নিজেই বুঝিয়ে বললো বাবা মা কে,“আমার দুঃখী বাবা ,মা,দেরী করে শুধু শুধু তোমাদের দুঃখ বাড়িয়ে লাভ কি,বলো?কেন শুধু শুধু কেঁদে কেঁদে ভেঙ্গে ফেলছো তোমাদের শরীর?
পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে প্রিয় দুজন মানুষ তোমরা-কেঁদে চুল টেনে টেনে নিজেদের অযথা দেওয়ার কোন মানে নেই।কেন ই বা বুক চাপড়াচ্ছো তোমরা,সেটাতো দুঃখ কষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে আমার আরও।দেখ এই সৌন্দর্য,রুপ তার এই পুরষ্কার,শুধু স্বর্গের দেবতাদের রাগানো ছাড়া আর কোন কাজে আসে নি।যখন মানুষজন আমাকে নতুন ভেনাস হিসেবে সম্মান আর উৎসর্গ দেওয়া শুরু করলো-আমার জানা উচিত ছিল,সেটাই আমার পতনের শুরু।এখন আমার মনে কোন সন্দেহ নেই আর,সেটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার, সেটাই নিয়ে গেছে আমাকে দূর্গতির রাজ্যে।নিয়ে চল আমাকে সেই এপোলোর স্বর্গিয় বানীর নির্ধারিত জায়গায়।
এখন আমি আমার ভাগ্যের অপেক্ষায়-অপেক্ষায় আমার বরের সে যেই হউক না কেন।কেন আমি তাকে অন্য চোখে দেখব-হউক না সে আমার ধংসের কারন।

‘ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে সাইকি হেঁটে যাওয়া আরম্ভ করলো-কিছু কিছু লোকজনও হেঁটে গেল তার পিছু পিছু পাহাড়ের পাথরটার কাছে,যেখানে শোনা যায় দেবতা এপোলোর স্বর্গবানী।সাইকিকে রেখে ফিরে গেল লোকজন,তাদের মন ভঁরা দুঃখ আর চোখ ভঁরা সহানুভুতির কান্না-কনের জন্যে রেখে গেল তারা জ্বালানো মশাল একপাশে। সাইকির বাবা মাও ফিরে গেল-মনটা ভঁরা দুঃখে হতাশায়,রাজবাড়ীর এক ঘরে দুজনে জানালা দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে ছিল,কথা নেই কোন শুধু কান্না চোখে।

‘সবাই চলে গেছে,সাইকি একা পাহাড়টার পাশে,ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল,বয়ে যাওয়া বাতাস এক বন্ধুর মত ছুঁয়ে গেল তাকে,সান্তনার ছোঁয়ায়।আবার দুরন্ত বাতাস এলোমেলো করে দ্দিল সাইকির পোষাক-এমনকি উড়িয়ে নিয়ে গেল মাথায় দেয়া কনের আবরনটা,নিয়ে গেল পাহাড়ের উপত্যকায়-ফুলের বিছানায়।


‘একটা স্বপ্নিল-স্বর্গীয় স্বস্তির পরিবেশ,নিজেকে কিছুটা সামলে নীল,সাইকি।কান্না থেমে গেছে,
অজান্তেই এক সময় ক্লান্তিতে ঘুমালো সাইকি।ঘুম ভাঙ্গলো যখন,কিছুটা কেটে গেছে তার মনের অস্বস্তি-দিনের আলোও তখন ছড়ানো চারপাশে।ধীরে ধীরে সাইকি হেঁটে গেল পাশের ইউক্যালিপটাস গাছটার কাছে,পাশে ছোট্ট একটা,পাহাড়ী নদী ছুটে যাচ্ছে এলোমেলো,স্রোতে।
নদীটার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া,সারি সারি ছোট্ট ছোট্ট গাছ,মাঝে অবিশ্বাস্য সুন্দর এক রাজপ্রাসাদ।দেখলেই মনে হয় কোন স্বর্গীয় দেবতার আবাস,প্রাসাদের দরজায় গিয়ে সাইকির বিশ্বাসটা আরও গাঢ় হলো।


‘চন্দন কাঠ আর হাতীর হাতের কারুকাজ করা ঘরের ছাদ,সোনার স্তম্ভ দিয়ে ধরে রাখা ছাদটা।দেয়ালগুলো সাজানো রুপোর কাজের নানান ধরনের জন্তু দিয়ে,তবে অদ্ভুত ভাবে, প্রানবন্ত,সাইকির কাছে মনে হলো জীবন্ত কতগুলো জন্ত যেন ছুটে যাচ্ছে।বোঝাই যায় দেবতাদের অনুসারীদের হাতে তৈরী করা চারপাশের দেয়ালগুলো।ঘরে ঢোকার মেঝেতে দেওয়া দামীদামী পাথরে-সেখানেও সাজানো নানান ধরনের ছবি।ঐ মেঝের দিয়ে হেটে যাওয়াটাও যেন অনেক সৌভাগ্যের কথা-মেঝের ঐ ছবি দিয়ে।রাজপ্রাসাদের অন্যান্য ঘরগুলোও সাজানো ঐশ্বর্যে,বাহুল্যতায়।সোনার পাতায় মোড়ানো ঘরের পর ঘর-তার উপর ছিটকে পড়া আলো ছড়ানো চারপাশে।সূর্যের আলো ছাড়া ও ঐ আলোতেই ভরাট চারপাশ।দেয়ালের কারুকাজের সাথে সাজানো ঘরের আসবাবপত্র।সাইকির মনে হচ্ছিল হয়তো সেটা জুপিটারের মর্তের আবাস।সাইকি অভিভুত-সব জ্ঞানশক্তি হারিয়ে গেছে তার,এই প্রাচুর্যতায়।ধীরে ধীরে এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছিল সে-য়ার চার পাশটা দেখছিল অবাক হয়ে।প্রাসাদের ভেতরে ছিল অচিন্তনীয় গহনা,অলঙ্কার,দামী দামী পাথর মনি মুক্তা-কি নেই সেখানে?সব চেয়ে অবাক করা ব্যাপার যেটা-এত দামী দামী আসবাবপত্র,মনি মুক্তা,অলঙ্কার ছড়ানো এখানে ওখানে,
তবু একটা পাহারাদার বা রক্ষী নেই সারা বাড়ীটায়।

‘কোন সময় যে দিনের আলোটা ধীরে ধীরে সরে গেছে,জানাই ছিল না সাইকির।গোধূলির আলোয় চারপাশের সৌন্দর্যে তখনও অভিভুত সাইকি-হঠাৎ তার কানে ভেসে এলো কটা কথা,কিছুটা থতমত সাইকি,

“তুমি অবাক কেন,আমার সুন্দরী রাজকন্যা?এগুলো সবই তো তোমার।শোবার ঘরে গিয়ে তোমার ক্লান্ত শরীরকে একটু বিশ্রাম দাও এবার।যখন তোমার গোসল করার ইচ্ছা হবে-ডাক দিলেই আমাদেরকে পাবে,আমরা তোমার দাসী,তোমারই পাশে।তোমার গোসলের পর আমরা তোমাকে সাজিয়ে দেব নতুন কনের পোষাকে,খাবারের টেবিলে সাজানো খাবার শুধু তোমার জন্যে”।

‘সাইকির মনটা ভঁরা ধন্যবাদে,তার অজানা পরিচারিকাদের জন্যে,যারা কথা মত সব পরির্চচার সরঞ্জাম সাজিয়ে রাখা।শোবার ঘরটায় ক্লান্তিতে চোখটা কিছুক্ষণ বুজে বিশ্রাম নিল,
আড়মোড়া ভেঙ্গে এগিয়ে গেল গোসলখানার দিকে,অদৃশ্য কটা হাত এসে রাজকীয় সুরে সাহায্য করলো পরে তার পোশাক খুলে দিল,পরিষ্কার করে দিল সারা শরীর,সুগন্ধি মাখানোর পর আনলো নতুন কনের পোষাক।কাপড়চোপড় পরে বের হয়ে দেখে সাইকি বিরাট একটা ঘরে সাজানো টেবিল-কিন্ত কোন খাবার নেই সেখানে।চেয়ারে বসলো সাইকি-অলৌকিক ভাবে আসলো মদের গেলাস,অদৃশ্য একটা হাত ঢেলে দিচ্ছিল পরিমাণমত মদ,ভেসে ভেসে আসছিল নানান ধরণের মুখরোচক খাবার।কেউ ছিল না আশেপাশে শুধু এলোমেলো কথা-সুন্দর গানের গলায় একজন গেয়ে যাচ্ছিল মধুর একটা সুর,আরেকজন বাজাচ্ছিল পাগল করা সুরে যন্ত্রটা।
খাবার শেষ করে সাইকি ধীরে ধীরে চলে গেল,শোবার ঘরে,কাপড়চোপড় খুলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো অজানা কার ও জন্যে–তারপর অজান্তেই ঢলে পড়লো ঘুমের কোলে।

‘প্রায় রাতের মাঝামাঝি,আধোঘুমে তখন সাইকি-অন্ধকারে বেশ ভেজা গলায় তার কানে ভেসে আসলো কটা কথা,কিছুটা ভঁয় পেল সে,একাকী,অজানা এই নির্জন প্রাসাদে,মনে ভয় ছিল তার কুমারীত্ব হারানোর।ভাবছিল সাইকি,এই হয়তো বা আমার অজানা স্বামী।

‘বাসরের ফুলে সাজানো বিছানা,ঘরটাও সাজানো মধুচন্দ্রিমার সাজে,ঘাটতি ছিল না কোন কিছুর,কোথাও।দুটো অদৃশ্য হাত এসে আলতো করে সাইকিকে নিয়ে গেল বিছানায়-আপন করে নীল তাকে চুমুতে আদরের বন্যায়,শুরু হলো কনে বরণের পালা।

‘দিনের আলো ভেঙ্গে আসার আগেই খুব তাড়াহুড়া চলে গেল সেই অজানা স্বপ্নের নায়ক-অজানা সেই প্রেমিক যদিও আশ্বাস দিয়ে গেল সাইকিকে,যদি ও সে হারালো তার কুমারীত্ব,
তবে তার সতীত্ব অখন্ড’।

‘আরেকটা নতুন দিন খুব একটা বদল হয়নি কোথাও,সাইকির কাছে অনেকটা সহজ হয়ে গেছে তার চারপাশ-রাতের অন্ধকারে আবার দেখা হলো তার সেই অজানা ভালবাসার মুখটার সাথে।তৃতীয় দিন একই ভাবে অপেক্ষার দিন,রাতে ভালবাসা ভঁরা মিষ্টি একটা শরীর।সাইকির এর মধ্যে তার অদৃশ্য কাজের লোকজনের সাথে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয় নি-খুব একটা কষ্ট হয়নি তার রাতের শরীরটায় ভালবাসার উল্লাস খুঁজে নিতে।

‘এদিকে রাজা রানী সময় কাটাচ্ছে দুঃখে,কান্নায়,কোন সংবাদ নেই তাদেরপ্রিয় সাইকির,বেঁচে আছে কি না সেটাও জানা নেই তাদের।সাইকির দূর্ভাগ্যের কথা ছড়িয়ে পড়লো শহর ছাড়িয়ে শহরে,তার দুঃখে দুঃখিত সারা দেশটা।ঘটনাগুলো শোনার পর সাইকির বড় দুবোন ছুটে এলো নিজেদের সংসারের কাজ ফেলে দিয়ে-তারা বোঝানোর চেষ্টা করছিল তাদের বাবা মাকে।

‘একদিন রাতে সাইকির অদৃশ্য স্বামী বললো-“আমার প্রিয় সাইকি,তোমার সামনে বিরাট এক বিপদ আসছে,তুমি যদি সর্তক না হও,অচিন্তনীয় ক্ষতই শুধু তোমার না আমারও।তোমার বোনেরা কোথাও তোমার মৃত্যুর খবর পেয়ে বেশ কিছুটা বির্পযস্ত,ওরা হয়তো খুঁজবে সেই পাথরের পাশে যেখানে সবাই ছেড়ে গেছে তোমাকে,খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে কি হলো তোমার,জানার চেষ্টা করবে তোমার শেষ সময়ের কথা।তুমি হয়তো শুনতে পাবে তাদের কান্না হাহুতাশ-তবে দোহাই তোমার কান দিও না,তাতে,ওতে তোমার দুঃখ যন্ত্রনা বাড়বে শুধু।তাদের দুঃখে দুঃখিত হয়ে উত্তর দিওনা,তাতে শুধু অশান্তি আর যন্ত্রণা বাড়বে,তোমার
আমার”।


‘সাইকি শপথ করলো তার স্বামীর কাছে সে কিছুই করবে না যা তার স্বামীর অপচ্ছন্দ-অন্ধকার সরে যাওয়ার আগেই চলে গেল তার স্বামী।সারাদিন কাটলো সাইকির একা একা কান্নায় আর নিজেকে সে বলছিল-বিরাট প্রাসাদটায় শুধু সে বন্ধী না,এমন ভাবে বন্দী যে তার বোনদের দেখা সাক্ষাতের সুযোগটাও নাই,কি ধরণের জীবন এটা।সে রাতটা গোসল করে নি সাইকি,না খেয়ে দেয়ে সারাদিন বিছানায় কেঁদে কেঁদে ভেজালো তার বালিশ।রাতে যথাযথ সময়ের কিছুটা আগেই আসলো তার প্রেমের দেবতা,কোলে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,“তুমি আমার কাছে কি প্রতিঙ্গা করেছ?কিন্ত তা করলে না তুমি,সারাটা দিন তো কেঁদে কেঁদেই কাটালে,এমনকি এখনও আমার কোলে চোখের জলে ভেজানো।ঠিক আছে তোমার যা ভাল মনে হয় তাই কর তবে আবার বলছি বিপদ আসছে তোমার,পরে দুঃখ করো না,আমার কথা না শোনার জন্যে ”?

‘স্বামীকে অনুরোধ করলো সাইকি,তার বোনদের সাথে দেখা করার অনুমতির জন্যে।তার বোনেরা তার এত কাছে আসছে,তাদের সাথে কথা বলতে না পারার কোন কাঁরণ নাই,
এভাবে বেঁচে থাকার কিইবা দরকার?শেষমেষ জোরাজুরি করায় রাজী হলো অদৃশ্য সেই দেবতা।একগাদা গহনা,অলঙ্কার ও দিল সাইকির হাতে তার বোনদের দেওয়ার জন্যে।বার বার বলে দিল সাইকিকে,তার বোনদের কূট মানসিকতার কথা,বলে দিল তাদের ঔৎশুকতার কথা,জানতে চাইবে তারা, কে তার স্বামী,কেমন সে দেখতে। সাবধান করে দিল সেই অদৃশ্য দেবতা তাদের কথা শোনা,মানে অনেকটা হবে স্বামীকে অবমাননা করা,হয়তো সেখানেই ইতি হবে তাদের ভালবাসার যাত্রা।


‘অনেক ধন্যবাদ দিল,সাইকি তার অদৃশ্য স্বামীকে,বললো-“তোমার কথা না শোনার জন্যে আমার যেন হাজারবার মৃত্যু হয়,সে রকম একটা অপকর্ম করার আগে-যদিও আমি জানি না তুমি কে,তবুও আমি ভালবাসি তোমাকে।আমি তোমাকে ভালবাসি আমার প্রানের চেয়েও বেশী, কিউপিডের চুমুও আমার কাছে তোমার চুমুর কাছে নগন্য।তোমার কাছে একটা অনুরোধ শুধু,তুমি যদি বায়ু দেবতাকে বলে দাও,আমাকে যে ভাবে নিয়ে এসেছে এই প্রাসাদে,
নিয়ে যায় আমার বোনদের কাছে একই ভাবে”।অনেক চুমু ভালবাসার আদর কাকুতি মিনতি, অনুরোধ, করে সবকিছুইতেই রাজী হলো সাইকির প্রেমিক।দিনের আলো ছড়ানোর আগেই যথারীতি চলে গেল,সে।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×