somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা সি পিপল-১ম পর্ব

১৭ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার নাম ডানোস । বাস ইজিয়ান সাগর এর তীরে উত্তর দিকে আসুয়া আর হিটটাইট দের পাশের ছোট রাজ্য কাস্কিয়ান এ,

ছোট বেলা থেকে অন্ধ দাদী আর খালাসি দাদা এর কাছে মানুষ । দাদা মারা গেছেন আজ প্রায় ৬ চান্দ্র বছর আগে । দাদী কাজ করতে পারেন না । ভিক্ষা করে কোনভাবে দিন চালিয়েছেন আমাদের । তাই ১২ বছর বয়স থেকেই সংসার নামের জোয়াল টা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি আমি । কাজ করি একটা মাছ ধরা নৌকাতে । নৌকার মালিক কাহুন । জাতিতে হিটটাইট । কুঁচকানো বলিরেখা তে ঢাকা মুখ , সমুদ্রের নোনা জল লেগে কড়া হয়ে গেছে । সেই মুখ এ একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমার হাত জাল গোটানো দেখেন আর বলেন "তোকে দিয়ে কিছুই হবে না রে । শুধু তোর দাদা আমার বন্ধু না হলে কবে তোকে তাড়িয়ে দিতাম আমার নৌকা থেকে "

ভালো আসলে আমারাও লাগে না । সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরেও হয়ত এক ঝুড়ি মাছ ও জোটেনা ঠিক ভাবে । অনেক দিনই নিঃস্ব আর রিক্ত হাতে ফিরে আসতে হয় । দাদি ঘুরে বেড়ান বন্দর এর কাছের কিছু এলাকাতে , ওইখানের নাবিকরা বড্ড রুক্ষ আর বদমেজাজি ।

ভিক্ষা দেয় না তাদের অনেকেই । কিন্ত বন্দর ছাড়া আর কোথাও ভরসাও নাই । শহর এ আরুনা* এর মন্দির আছে । তবে সেখানে দেবদাসী আর পুরোহিত দের ভিড় লেগেই থাকে । সেখানে একজন অন্ধ ভিখারিনী গেলে পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা পড়বে ।

আর এর আরও একটা কারণ ও আছে । সারাদিন নোনাজল নিংড়ে যখন বিকেলে আমি ফিরে আসি তটে তখন কাঁচের মত দুটি চোখ মেলে বসে থাকেন তিনি সমুদ্রের ধারে ।

আমি আসি , কেমন করে যেন আমার পায়ের শব্দ টের পেয়ে যান দাদি ।

এরপরে দুইজন অতি দরিদ্র মানুষ ফিরে যায় তাদের ঝুপড়ি এর দিকে ।

বন্দর ঘেঁষেই আমাদের চামড়া আর মাটির বাড়িটা । সেখানে যাবার পথে চোখে পড়ে মস্ত মস্ত সব জাহাজ নিজেদের মাস্তল এ পাল গুটিয়ে নোঙর ফেলেছে , দেখে মনে হয় যেন একেকটা পাহাড় ,

ঢেউ কেটে এরা চলে যায় সুদূর ইজিপ্ট , এলাম আর ফ্রিজিয়া তে ।

কেমন দেখতে দেশ গলো কে জানে । কেমন তাদের ভাষা তাদের চলন । কেউ জানে কিনা সেটাও দেখা উচিত ।

তবে আমার মত একটা আনাড়ি জেলের জন্য এই কথাটা ভাবা বিলাসিতা ।

দেবতারা আমার ভাগ্যে কি লিখে রেখেছেন কে জানে ?

এসব ভাবতে ভাবতে কখন নিজের ঝুপড়িতে চলে আসি সেটা খেয়াল ও থাকে না রাতের খাবার টা তাড়াতাড়ি সেরে নেই আমরা । যদিও এখানে সন্ধ্যাতেই শেষ খাবার টা খায় সবাই ।

বেশির ভাগ দিনেই পোড়া মাছ , আর বুনো যব চূর্ণ দিয়েই খেতে হয় ।
মাছ না পেলে । তখন পানির কাছের ছোট ছোট ফল কুড়িয়ে আনি আমি । সেটা দিয়েই পেটের জালা নেভাই ।
নিজের হাত পা আর পেটের কাছে গোঁজা পাথর এর ছোট চাকুটা ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছু আছে বলে জানা নাই আমার।

দাদা ছিলেন ফ্রিজিয়ার একটা জাহাজ এর খালাসি , তখন আর যাই হোক তিনবেলা ভুট্টা আর শালুক দিয়ে পেটপুরে খেতে পেতাম ।
তার কাছ থেকেই শুনেছিলাম বিভিন্ন দেশ এর গল্প । আর শুনতাম তারা দের দিক পরিবর্তন এর কাহিনী
কেমন করে তারা চলে যেতেন সুদূর আবিসিনিয়া , মেলুহা আর ইজিপ্টে ।
বাবা-মা কে কোন দিন দেখিনি আমি । কোন দিন তাদের ব্যাপারে প্রশ্নও করিনি । হয়ত ততখানি জ্ঞান আমার মাথাতেই দেননি মহান সূর্য দেবী ।

এরপরে এল সমুদ্রের সেই প্রবল পরাক্রান্ত ঝড় । যেন সবগুলো দানব নেমে আসল পৃথিবীর বুকে । এই ঝড় এর সময়ে নাকি দাদার জাহাজ টা ছিল একেবারে ভু-মধ্য সাগর এর বুকে , জল্পাই এর ছাইয়ে তৈরি সাবান সহ প্রায় ৩০ জন নাবিক এর প্রাণ হরন করে এনলিল কে ঠাই দিল নিজের বুকে সাগর।

সেই থেকেই আমি আর দাদি কোনভাবে বেঁচে আছি । জানি না কতদিন থাকতে পারব।

বন্ধু বলতে শুধু আছে শ্যামাক ।

আর কেউ না , আর কিছুই না '

রাত এর আঁধারে শুয়ে শুয়ে তারাদের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ি প্রতিদিন । এইসব নিয়েই কাটে আমার জীবন ।
"আজকের দিনটা কিছুটা ভালো কাটবে বলে মনে হচ্ছে" কাহুন কে উদ্দেশ্য করে বললাম আমি; “মাছ উঠছে মন্দ না।”

মুখ বাঁকাল সে , "এটা ভরা মউসুম রে ছোড়া । প্রতি বছর সতিশ* তারা উঠে এই সময়ে , যদি একবার মিসরে নিয়ে যেতে পারতাম ,তাহলে দেখতি কত মাছ"।

"আর যদি একবার গভীরে গিয়ে ধরতে পারতাম" চকচক করে উঠল তার চোখ দুইটা ।

"কিন্ত ওইখানে বড্ড ভয়, সমুদ্রের দানোরা তো আছেই; এর সাথে আছে ঝড় আর জলদস্যু, আপন মনেই বলল সে "।

দেখলাম নিচে নীল রঙের ইজিয়ান আর উপরে চকচকে সূর্য । সেই সাথে নৌকার ডেকে রাখা সারিসারি রুপালি মাছ । মাছেরা শুন্য চোখে তাকিয়ে আছে যেন আমার দিকে ।
ইজিয়ান এর পৃথিবী দুইটা । পানির উপরে গ্রীক দের , আর পানির নিচে হিত্তাইট দের ।
গ্রীক রা মাছ খায় না , সমুদ্রের কোন খাবার পছন্দ ও করে না ,তাদের সুখ দিগন্তজোড়া ফসল এর মাঠে , জেলেরা সমাজ এর সবথেকে নিচু শ্রেণী ।
দাদার কাছে শুনেছি আমি নাকি জাতে গ্রীক । এরপরেও মাছ ধরাকেই পেশা বানাতে হয়েছে ।
সমুদ্রের নীল পানিতে আমার মুখের প্রতিবিম্ব এর দিকে দেখলাম । মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠল ; মনে হল পানিতে কেউ কালি গুলিয়ে দিয়েছে চারিদিকে কেমন একটা বদ্ধ ভাব এসে গেল যেন আমার দম কে কেউ আটকে দিচ্ছে । খচ করে একটা যন্ত্রণা অনুভব করলাম আমি ,
তড়িৎ গতিতে পেছনে ফিরে তাকালাম ,
কিছুই দেখলাম না । শুধু নীল পানিতে আমার প্রতিবিম্ব ছাড়া
নীল নাকি কষ্টের রঙ ।
গ্রীক রা বলে তাই । কিন্ত আমার কাছে সেটা মনে হয় না , তাহলে তো আকাশ এর রঙ নীল হত না দেবতা এনলিল এর রঙ নীল হত না ।

ভাবতে গিয়ে ফিরে এলাম কাহুন এর ধমক খেয়ে । “ ওই ছোঁড়া ! তাড়াতাড়ি জাল গুটা , জাল পেঁচিয়ে গেছে , ফেঁসে গেলে বললাম তোর পিঠের চামড়া আস্ত রাখব না”
নিজের কাজে মন দিলাম ।
আজ সকাল থেকেই মনটা কেমন করছে । মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই । জানি না কি কিন্ত সেটা থেকে একবারও মন কে সরাতে পারছি না ।
বিকেলে দুইটা মাছ নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে গেলাম নিজের বাড়ির দিকে ।
আজ বন্দর দিয়ে গেলাম না , একটু ঘুর পথে সোজা গিয়ে হাজির হলাম বাড়িতে , মনে হল দাদী যেন কিছু একটা বলতে চাচ্ছে আমাকে দূর থেকেও সেটা শুনতে পাচ্ছিলাম যেন আমি ।
কিন্ত বাড়িতে গিয়ে কাউকে পেলাম না । স্যাতসেতে নোনা মেঝেতে ছড়িয়ে আছে কাঁচা চামড়া এর বিছানা আর খড়কুটো , কিন্ত বুড়ীকে কোথাও পেলাম না ।
তাহলে কি আমার মন ভুল বলল?
বুড়ি কি এখনও বন্দর এই আছে ?
আমার অপেক্ষা করছে ?
কিন্ত তাহলে তো আসার পথেই দেখতে পেতাম ওকে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×