somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাকিব-পাপন কাণ্ড : ‘বাঙালি পালের’ ভয়ানক হট্টগোল

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাঙালিদের বাঙালি বলে অপমান করাটা দুঃসাধ্য। বরং বাঙালিদের বাঙালি বললেই বাঙালির গর্বিত হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত, না হলে সেটাই হবে দোষের। কিন্তু বিষয়টা বাঙালির জন্য তখনই অপমানজনক হবে, যখন তার সাথে ‘হুজুগে’ শব্দটা যোগ হবে। ‘হুজুগে বাঙালি’ বললেই ব্যাপারটা তখন জটিল রসালো অপমানজনক হবে বাঙালির জন্য। এতেও যদি অপমানিত না হয় তাহলে বাঙালির মান নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা দোষের হবে না। অধিকাংশ বাঙালির ক্ষেত্রে এ কথাটাও অনুধাবন করাটা দুঃসাধ্য হবে, এটা ভাবলেও ভুল হবে না। না জানি কয়েকজন আবার শাহবাগে দাঁড়িয়ে যায় কিনা বাঙালির অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে।

দল, উপদল কিংবা পাল সম্বন্ধে আমাদের কমবেশি জানাটাই স্বাভাবিক। বাঙালিও অনুরূপ একটা পালের মত। মানবজাতির একটা ধারা হলো বাঙালি। সেক্ষেত্রে মানব পালও বলা যায় বাঙালিকে। কিন্তু এই মানব পালের বেশিরভাগ কাজ গাধার পালের সাথে মিলে যায়। কখন কোথায় কিভাবে কি করতে হবে তা এই পালের চিন্তার সোয়া দুই কিলোমিটার এরিয়ার মধ্য দিয়েও যাওয়ার চিন্তা করে না, চিন্তায় আসা সে তো বহুত দূর কি বাত। বিলকুল না মুমকিন। বাঙালি সৎ নাকি অসৎ এ বিষয় নিয়ে চিন্তাও করা যাবে না, হারাম। আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধের যদি কানাকড়িও বাঙালির কাছে থাকতো তাহলে এই সোনার বাংলাদেশের এই অবস্থা হতো না। এ বিষয়ের হুমায়ুন আজাদ স্যার একটা কথা বলেছিলেন, ‘বাঙালি একশো ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হ'লেই বাঙালিকে পুরষ্কার দেয়া উচিত’।

হুমায়ুন স্যার যে সময়ে বলেছিলেন, সে সময় আর বর্তমান সময়ের মধ্যে প্রায় ‘আকাশ-পাতাল’ না বলে ‘চালে-ডালে’ বা ‘তেলে-জলে’ পার্থক্য বলা যায়। সে সময়ে বাঙালির নষ্ট হওয়ার জন্য ততো ভালো ব্যবস্থা ছিলো না, কয়েকটা চা দোকান যথেষ্ট ছিলো। পাড়ার চা দোকান থেকেই মন্ত্রী-মিনিস্টারদের চালানো হত। নিয়োগের পত্র আসতো অশিক্ষিত স্থানীয় প্রতিনিধি থেকে। কিন্তু চা দোকান থেকে এখন এসব চলে গেছে এলাকার বড় বড় বাবাদের কাছে যারা ফেবু আর অনলাইন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে। তাদের মধ্যে কেউ হলেন ইয়াবা বাবা, কেউ গুটি বাবা, কেউ বদনা বাবা, কেউ গাঁজা বাবা ইদানীং ক্যাসিনো বাবাও বেরিয়েছে দেখলাম। এসব বাবাদের চাপে বাঙালির নাভিশ্বাস চরমে।

বলছিলাম পালের কথা, বাঙালি পাল। গাধার পালের মত অবস্থা এ পালের। প্রধান গাধাটা যেদিকে যায় তার চ্যালা চামুণ্ডারাও ঠিক তার পিছু পিছু যায়। কই যায় তার কোন টেনশন থাকে না। কিন্তু এ পালের প্রধান গাধা না, সে হলো ধুরন্ধর শেয়ালপণ্ডিত। সব জায়গায় তার স্বার্থ। তো বাবা বেহেশতে গেলে তারাও বেহেশতে যায়, বাবা গণশৌচাগারে গেলেও তারা ঠিক সেখানে। বাবার সন্তুষ্টিতেই সকলের সন্তুষ্টি। মাঝেমধ্যে সচেতন বাঙালিরা পালটাকে ভিন্ন দিকে মোড় দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু তা বেশিদূর যাওয়ার আগেই থমকে যায়। কারণ তারা ভুলে যায় তারা আসলে কেন মূলধারা থেকে মোড় নিলো।
হুমায়ুন আজাদ বলেন, ‘বাঙালি আন্দোলন করে, সাধারণত ব্যর্থ হয়, কখনোকখনো সফল হয়; এবং সফল হওয়ার পর বাঙালির মনে থাকে না কেনো তারা আন্দোলন করেছিলো’। এভাবে বাঙালির পালের দু পা এগিয়ে তিন পা পেছানোর নীতি শুরু হয়। নেতৃস্থানীয় ধুরন্ধর গাধাদের জন্যই বাঙালির এ অবস্থা। বাবারা সকলের চোখে কালো কাপড় দিয়ে কানে বিরিয়ানি বিরিয়ানি করে বকবক করে কিছুদিন। তারপর আধমুঠ-একমুঠ মুখে দিয়ে বাকিটা মুলা দিয়ে চালিয়ে দিয়ে অবশিষ্টাংশ নিজেরা খেয়ে নেয়। কিন্তু হুজুগে বাঙালি আরেকমুঠ বিরিয়ানির আশায় মুখ চেটে যায় রাতভর। কিন্তু তা যে ধুরন্ধর শেয়ালপণ্ডিত খেয়ে পালিয়েছে তা বোঝার কোন উপায় থাকেনা। চোখ যে কাপড়ে বাঁধা। কি নিয়ে আছে, কি নিতে হবে তা বাঙালি জানে না। এরকম আরেকজন বাবা পাওয়া গেল কিছুদিন আগে। তিনি হলেন সকলের প্রিয় পাপোন্দা। সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন কারণে আলোচিত। ধুরন্ধর ব্যক্তি বটে।


অলরাউণ্ডার সাকিব, হুজুগে বাঙালির ফাঁদে পড়েছে কয়েকবার, জনসাধারণের তা ভুলে যাবার কথা নয়। বিভিন্ন সময় সে আলোচিত-সমালোচিতও হয়েছিলো। এবার পড়েছেন তিনি পাপোন্দার কবলে। রেহাই নাই আর। স্ত্রীর সঙ্গে ছবি ফেবুতে পোস্ট করেও রেহাই পাননি তিনি, আর পাপোনের সাথে বেয়াদবি করে পার পাবেন?
অযথা বিষয়ে গালাগাল জুটেছিল তার ভাগ্যে, আর এ তো মহা বেয়াদবি। কিন্তু যে বাঙালিরা তাকে একটা পারিবারিক ছবি নিয়ে রেহাই দেয়নি সেই বাঙালিরাই এখন সবাই তাকে নিয়ে আবেগে উতলিয়ে দিচ্ছে। এক সময় গালাগাল দিতে দ্বিধাবোধ করেনি আর এখন আবেগে ভাসাতেও দ্বিধাবোধ করছেনা।


একমাত্র হুজুগে বাঙালি তাই এসব সম্ভব। ভালোবাসা - গালাগাল কোনটা কোন জায়গায় বসবে তা বাঙালি জীবনেও অনুধাবন করতে শেখেনি।


কিছুদিন হলো পাপোন্দার হস্তক্ষেপে আইসিসি সাকিবকে নিষিদ্ধ করেছে দুবছরের জন্য। অপরাধ স্বীকার করায় একবছর কমানো হয় শাস্তি। দোষ ছিলো কোন এক জুয়াড়ি তাকে অফার দিয়েছিলো দুবছর আগে, কিন্তু তা সে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু তা আইসিসিকে জানানো হয়নি কেন তাই। না জানানোর অপরাধে যদি এই শাস্তি, তাহলে অপরাধ করলে কিরকম শাস্তি হতে পারে তা আমি চিন্তাও করতে পারছি না।

ধরুন, আমার প্রতিবেশিনী সম্মনিত মহিলা আমাকে জঘন্যতম কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি তাতে সম্মতি দেইনি, পরবর্তীতে আমার সহধর্মীনিকে তা বলিওনি। কিন্তু দু'বছর পর তা যেকোন ভাবে ফাঁস হওয়ায় আমার সহধর্মীনি আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমার সহধর্মীনির উচিত ছিল আমাকে ‘জাতীয় চরিত্রবান পুরুষ’ উপাধি দেয়া। কিন্তু ব্যাপারটা অহেতুক হিসেবে তুলে ধরে আমাকে বের করে দিলো? ঠিক এই অহেতুক ব্যাপারটাও সাকিবের বেলায় ঘটেছে।

দোষ তো তার, যে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলো। সাকিবকে পুরস্কৃত করা উচিত, সে তাদের কথা রাখেনি। কিন্তু তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে। কারণ এর পেছনে হাত রয়েছে ধুরন্ধর শেয়াল পণ্ডিত পাপন। এর অল্প কিছুদিন আগেই সাকিবরা খেলোয়াড়দের দাবি নিয়ে স্ট্রাইক করেছিলো। এতে পাপোন্দা সে দাবি মানতে বাধ্য হয়েছিলো। যার প্রতিশোধ নিয়েছেন তিনি দেশের মাথা কেটে ফেলে দিয়ে। যে অলরাউণ্ডার দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখছে তাকে বাদ দিয়ে তিনি ক্রিকেট বোর্ড উন্নত করছেন। পাপোন্দা আসলে নিজেকে একটা উর্বর মস্তিষ্কবিকৃত গাধা হিসেবে প্রমাণ করেছে।

আর যদি শাস্তি না দিত আইসিসি, তাহলে এর চিত্র হত ভিন্ন। প্রস্তাবের তথ্যটা যদি ফাঁস হতো কেবল, কিন্তু আইসিসি শাস্তি না দিত তাহলে এ বাঙালিই কোরআন হাদিসের ফতোয়ার আলোকে সাকিবের চৌদ্দপুরুষের গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলতো। সাকিব বেয়াদব, সাকিব খারাপ, সাকিব স্বার্থপর, সাকিব মুনাফিক, সাকিব নাস্তিক, সাকিব ইহুদি, সাকিব কালা পারেনা, সাকিব আইপিএপ খেলে, সাকিব ইণ্ডিয়ার দালাল, সাকিব নিজের জন্য খেলে দেশের জন্য না ইত্যাদি কথাবার্তা আবারো শোনা লাগতো। যদিও সাকিব এসবে অভ্যস্ত। এরকম অনেক গালাগালি সে ফেবুর কল্যাণে পেয়েছিলো। কারণ সাকিব হুজুগে বাঙালিদের একজন সদস্য।

হুজুগে বাঙালি সবসময় বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে, এটা তাদের বৈশিষ্ট্য। ভালো হইলেও সমালোচনা করবে। খারাপ হলে তো ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে আসার ও নাম গন্ধ থাকে না। কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ, কোনটার জন্য কি করতে হয় তা বাঙালি জানেই না। কোথায় আবেগি হতে হয়, কোথায় কাঁদতে হয় তাও বাঙালি জানে না। গাধার পাল যেদিকে যায়, বাঙালিও যায় সেদিকে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×