somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি হইলেও হতে পারে গল্পঃ লাই-ফাই-ডিটেক্টর

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় হঠাৎ করেই পৃথিবীটা নাড়া খেয়ে গেল। সভ্যতা এগুতে শুরু করল তরতর করে। সারা পৃথিবীতে সুখ আর সমৃদ্ধি। আধুনিক যুগের এই বিপ্লবকে বলা হচ্ছে 'সত্যবিপ্লব'। সত্যবিপ্লবের হাত ধরে অল্প ক'দিনেই বিশ্বের চেহারা বদলে গেছে। বদলে গেছে এ গ্রহের মানুষগুলোও। মানুষগুলো এখন তৃপ্ত আর সুখী। বদলে গেছে মানুষের জীবনধারাও। এখানে হিপোক্রেটদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই গ্রহে এখন চুরি-ছিনতাই-খুন-দুর্নীতি সবকিছুই বিলুপ্ত হবার পথে; মিউজিয়ামে যাবার লাইনে আছে। এককথায় বলা যায়- আদিকাল থেকে মানুষ এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্নই দেখছিল এতদিন।

এই সমৃদ্ধ পৃথিবীর মূলে আছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানীদের একটি পারফেক্ট 'লাই ডিটেক্টর' মেশিন আবিষ্কারেই এই নতুন পৃথিবীর সূচনা। এই মেশিন খুব সহজেই কেউ মিথ্যা বললে সনাক্ত করতে পারে। সব রাষ্ট্রের প্রধান থেকে শুরু করে সব গুরুত্বপূর্ন পদে এই যন্ত্রের সাহায্যে যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়। রাজনৈতিক কোন নেতা এখন আর মিথ্যা আশ্বাস দেয় না, বলা যায় দিতে পারে না। ধনীরা আয় লুকিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দেয় না। কেউ খুন-ছিনতাই করেও পার পায় না। '১০০% হালাল' ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয় না। প্রেমিকারা এখন ফাঁকি দিয়ে দুই-তিনটা প্রেম করতে পারে না। দুষ্টু ছেলেরাও এসবকাজে যায় না। সকলপ্রকার অন্যায় কমে গেছে। কারন অন্যায় করলে মিথ্যা বলতেই হয়। আর মিথ্যা বলে ধরা পড়লে কঠিন শাস্তির নিয়ম আছে। কারো বলা মিথ্যার সংখ্যা একশ পেরিয়ে গেলেই কঠিন শাস্তি। মিথ্যা বলে পার পাওয়ারও কোন উপায় নেই। যেহেতু সত্যের জন্যই এই পরিবর্তন, তাই এর নাম দেয়া হয়েছে 'সত্যবিপ্লব'।

সারাপৃথিবীর অল্পকয়টা দেশে এখনো লাই ডিটেকক্টরের ব্যবহার শুরু হয় নি। এরমধ্যে বাংলাদেশও আছে। তবে আশা করা হচ্ছে আজ থেকেই দেশে এই বিপ্লবের শুরু হবে। প্রশাসনে ব্যবহারের জন্য আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। এই উপলক্ষ্যে বিরাট জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন সরকারী ও বিরোধীদলের নেতারা। তারা মঞ্চের দুইদিকে বসে আছেন। মাঝখানে 'লাই ডিটেক্টর' মেশিন। কালো রঙের ছোট একটা যন্ত্র। কেউ মিথ্যা বললেই বিপ বিপ শব্দে তা সবাইকে জানিয়ে দেবে। কে বলবে এইটুকু একটা যন্ত্রের এত ক্ষমতা। সবাই মুগ্ধচোখে তাকিয়ে আছে।

সমাবেশ লোকে লোকারন্য। সবার মুখে আগ্রহ ঝলকাচ্ছে। নতুন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন সবার চোখে।
প্রথমেই কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। সবাই চুপ করে গেল। প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে চায়।
'আজ এক নতুন সম্ভবনা খুলে যেতে যাচ্ছে দেশের সামনে। এই যন্ত্র আমাদের নিয়ে যাবে সত্যের পথে। আমাদের সরকার সবসময়ই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সরকারী দল দেশের মানুষকে ভালবাসে বলেই সবসময় মানুষের পাশে ...'

লাই ডিটেক্টর মেশিনের উজ্বল লালবাতি ও ভয়ংকর বিপ বিপ শব্দে প্রধানমন্ত্রীকে বক্তৃতা থামাতে হল। লাই ডিটেক্টর প্রতিবাদ করছে। তারমানে কথাগুলো মিথ্যা। উপস্থিত মানুষের মুখে ক্ষোভের ছায়া ফুটে উঠেছে। কোঁচকানো ভ্রুগুলো আরো কুঁচকে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নার্ভাস দৃষ্টিতে এদিক-সেদিক তাকালেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের মাথা গিজগিজ করছে। তারা ইচ্ছে হলেই ছিঁড়ে ফেলতে পারবে সবাইকে। মাস পিপল ভয়ংকর জিনিস।

অবশ্য পরমুহূর্তেই সামলে নিলেন। অনেকদিন ধরে পলিটিক্স করছেন। এত সহজে ঘাবড়াবার পাত্র নন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গলা পরিষ্কার করলেন। তারপর দৃঢ়কন্ঠে আবার বক্তৃতা শুরু করলেন।
'প্রথমেই এমন একটা সন্দেহ হয়েছিল। দেশের উন্নতি বানচালে বিরোধীদলের এইসব ষড়যন্ত্র আমরা প্রতিহত করবই। সরকার জনগনের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের মানুষকে সাথে নিয়েই এইসব ষড়যন্ত্র ভেঙ্গে দেয়া হবে। এইসব 'লাই-ফাই-ডিটেক্টর' দিয়ে দেশের মানুষকে বোকা বানানো যাবে না। অতীতেও যায় নি।'

প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় ম্যাজিকের মত কাজ হল। সমাবেশের অর্ধেক মানুষ ক্ষেপে গেল। এনারা সরকারী দলের সমর্থক। তাদের চোখের মনি অস্থিরভাবে নাচছে। সবাই মুখ দিয়ে একটা ক্রুদ্ধ চিৎকার ছাড়ল। বুকের ভেতর থেকে দেশপ্রেমের ডাইরেক্ট ঢাক্কা আসছে। হাতের কাছে যে যা কিছু পেল ছুঁড়ে মারতে লাগল লাই-ডিটেক্টরের দিকে। ইটের টুকরো, জুতা- কিছুই বাদ নেই। অতি আবেগী কয়েকজন পরনের প্যান্ট খুলে ছুঁড়ে মেরেছেন।

অল্পক্ষনেই লাই-ডিটেক্টরের বিপের আওয়াজ কমে এল। যাক ষড়যন্ত্রটা বিগড়ে দেয়া গেছে।

বিরোধীদলের নেতা এবার উঠে দাঁড়ালেন। তার মুখ থমথমে।
'সময় এসেছে সরকারের কালো হাত ভেঙ্গে দেয়ার। সরকারের এমন নাটকের জবাবে আগামী তিনদিন হরতাল। দেশ এই সরকারের হাতে নিরাপদ না। যারা এই দেশকে ভালবাসে, মানে বিরোধীদলই পারে একমাত্র এই দেশটাকে... '
লাই-ডিটেক্টরের ধড়ে তখনও বোধহয় কিছুটা প্রান ছিল। সে চুপ করে থাকতে পারন না। পুনরায় আকাশ কাঁপিয়ে বিপ বিপ শব্দ করতে লাগল।

সমাবেশের মানুষের চোখ-মুখ আবার শক্ত হয়ে গেল। জনগনের সাথে এমন প্রতারনা? কিন্তু বিরোধীদলের নেতা সামলে নিলেন। জনগনকে হাত তুলে দেখালেন লাই-ডিটেক্টরটা।
'আপনারা কি মনে করেছেন মানুষ এসব ষড়যন্ত্র বোঝে না? দেশকে পঙ্গু করতে বিদেশী অপশক্তির মদদের এই কুটচাল দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই মোকাবেলা...'

আর বলতে হল না। সমাবেশের বাকী অর্ধেক মানুষও জ্বলে উঠল আপনশক্তিতে। উনারা বিরোধীদলের সাপোর্টার। মাতৃভূমির প্রতি ঋন শোধের
চেষ্টায় তৎপর হল সবাই। হাত-পায়ের কাছের সবকিছুই ছুঁড়ে মারতে লাগল, সাথে অবর্ননীয় গালিগালাজ। ইট-পাথর, গায়ের শার্টও বাদ গেল না।
আঘাতের কারনেই হোক বা গালির তীব্রতাতে হোক- লাই-ডিটেক্টরটা ভেঙ্গে কয়েকটুকরো হয়ে গেল। যন্ত্রটা ধ্বংস হয়ে যেতেই মানুষজন শান্ত হয়ে আসল। অল্পের জন্য কূটচালটা থামানো গেছে। বাঙ্গালী জাতি আরেকবার বেঁচে গেছে। বীরের জাতি বলে কথা। জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।

সেদিন রাতেই আইন করে দেশে 'লাই-ডিটেক্টর' নিষিদ্ধ করা হল সরকারের পক্ষ থেকে। অভাবনীয়ভাবে এতে বিরোধীদল সমর্থন জানিয়ে তাদের হরতাল প্রত্যাহার করে নিল। আর জনগণ খুশি মনে ঘুরে-বেড়াতে লাগল। অনেকদিন পর সেদিন রাতে তাদের ভালো ঘুম হল। দুই নেতার 'ঐক্যে' সমৃদ্ধ একটা দেশের কথা ভেবে অতি-আবেগী অল্পকয়জনের চোখেও পানি চলে আসল। এরাই শার্ট-প্যান্ট খুলে ছুঁড়ে মেরেছিল।

আর রাতের আঁধারে খোলামাঠের এককোনে পড়ে রইল একটি নষ্ট অভিশাপ।

৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×