
বিশ্ব ডাক দিবস: চিঠির গন্ধ হারানো দিনগুলো
মানুষের যোগাযোগের ইতিহাসে ডাক ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। একসময় চিঠি ছিল আবেগ প্রকাশের একমাত্র ভরসা। প্রিয়জনকে জানাতে আনন্দ–বেদনা, প্রেম–ভালোবাসা কিংবা দূরে থাকা সন্তানের খবর পৌঁছে দিতে মানুষ কলম হাতে বসত। সেই চিঠি আসতো ডাক পিয়নের হাত ধরে, আর চিঠির অপেক্ষায় দিন কাটতো অধীর আগ্রহে।
বন্ধু কিংবা কাঙ্ক্ষিত মানুষের চিঠি হাতে পাওয়া মানেই ছিলো এক অন্যরকম অনুভূতি। ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘণ্টার শব্দ যেন হয়ে উঠত আশার আলো। পোস্ট অফিস তখন কেবল চিঠি পাঠানোর জায়গা ছিল না, ছিল মানুষের সম্পর্ক জোড়ার এক সেতুবন্ধন।
শুধু চিঠিই নয়, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর মানি অর্ডার ছিলো বহু পরিবারের ভরসা। দূর শহরে থাকা বাবা সন্তানের পড়ার খরচ পাঠাতেন, কিংবা প্রবাসী ভাই বাড়ির জন্য টাকা দিতেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে। আবার পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হতো প্রয়োজনীয় জিনিস বা প্রিয় বন্ধুর জন্য কোনো উপহার।
কিন্তু সময় বদলেছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমেও এসেছে বিপ্লব। এখন 4G ইন্টারনেটের যুগে মানুষ চিঠি লিখে না—একটি মোবাইল বার্তা বা ভিডিও কলেই পৌঁছে যায় ভালোবাসা কিংবা খবর। একইভাবে কুরিয়ার সার্ভিস জনপ্রিয় হওয়ায় পোস্ট অফিসের পার্সেল ও মানি অর্ডারের ব্যবহারও প্রায় বিলীন।
আজকের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানে না পোস্ট অফিস কোথায়, এমনকি "দুই টাকার হলুদ খাম" নামক এক সময়ের প্রতীকী জিনিসটিও তাদের কাছে অপরিচিত। অথচ এই খামের ভেতরে লেখা থাকত অগণিত গল্প, অনুভূতি আর স্মৃতির চিহ্ন।
বিশ্ব ডাক দিবসে আমরা যখন পোস্ট অফিসের কথা ভাবি, তখন ফিরে যেতে হয় সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কাছে। চিঠির হাতের লেখা, ডাক টিকিটের গন্ধ আর চিঠি খোলার মুহূর্তের যে আবেগ—তা আর কোনো ডিজিটাল বার্তায় পাওয়া যায় না।
হয়তো যুগের পরিবর্তনে ডাক ব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা কমেছে, কিন্তু এর ইতিহাস, গুরুত্ব ও মানবিক আবেগকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। ডাক শুধু বার্তা পৌঁছায়নি—মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন বহন করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


