বুয়েটের হলগুলোতে প্রতিটি ফ্লোরের দুইটি উইং এ বিদায়ী ব্যাচের ছাত্রদের উইং এর বাকি ছাত্রদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়( বা বাঁশ!) দেয়া হয় । এটাকে অনেকে বলে উইং বিদায় আবার অনেকে বলে ফ্লোর সুইপ । এদিন বড় ভাইদের একসাথে বসিয়ে নানান শ্লীল- অশ্লীল (অশ্লীলই বেশী) প্রশ্ন করা হয় এবং ওনারা এসকল প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য থাকেন । উইং থেকে চলে যাওয়া সিনিয়র ভাইয়েরা যাদের সাথে যোগাযোগ থাকে তাদের অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয় । রাত আটটা থেকে শুরু করে তিনটা চারটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে । জম্পেস খাওয়া-দাওয়া হয় , সিনিয়র ভাইয়েরা জুনিয়রদের সামনে স্মৃতিচারন করেন , অনেক উদ্ভট গিফট দেওয়া হয় সদ্য বিদায়ী ভাইদের ,সবাই মিলে খেলা হয় হাউজি। এসবের মধ্যে একটি ছোট পর্ব থাকে টক ছড়াপর্ব(মানে কিছুটা অশ্লীল ছড়া ) । মানে একটা গিফটের (নরমালি বড় চকোলেট বক্স) প্যাকেটকে অনেকগুলো গিফট পেপার দিয়ে মোড়ানো হয় এবং প্রতিটি পেপারে একটা করে টক ছড়া থাকে । প্রথমে একজন বিদায়ী ভাই একটা মোড়ক খোলেন এবং ছড়াটা পড়েন । যাকে তার ঐ ছড়ার উপযুক্ত চরিত্রের মনে হয় তাকে তিনি নতুন একটা মোড়ক খোলার জন্য দিয়ে দেন । তখন বড় ভাইদের মুখের অবস্থা যেরকম হয় তা দেখার মত , কারনটা খুব সহজ । এসকল টক ছড়ার নায়ক হতে কেইবা চায়। এভাবে মোড়ক খুলতে খুলতে খেলা এগিয়ে যায় এবং শেষে একজন গিফটটা পান । আমরা সবাই দু-একটা করে চকোলেট পাই চকোলেট বক্সটা থেকে ।
বছরখানেক আগে এরকম একটা উইং এর বিদায়ে আমি টক ছড়া লেখার ভারটা পাই । আজকে রুম পরিস্কার করতে গিয়ে ১০টা ছড়ালেখা কাগজটা আমার নজরে আসে । এখান থেকে বাছাই করা কয়েকটা কম টক ছড়া নিলাম(বাকিগুলো বেশী টক!) । দেখেন তো চেখে কি অবস্থা ! হাল্কা অশ্লীলতা আছে ,সাবধান!
১। টিউশনিতে গিয়েই ধরলাম ছাত্রীর হাত
ছাত্রীও প্রথম দিনেই কাত
এটাই বুঝি টিউশনির মজা
পরিনামে ছাত্রীর বিছানা ভেজা ।
(এক ভাই ছাত্রীর সাথে প্রেম করে আলোচিত হন , ওনাকে মূলত উদ্দেশ্য করেই লেখা )
১। গাড়ি থামে ইডেন কলেজ
আমি খুঁজি বউয়ের ল্যাজ
এত মোটায় বউ চায়
কোন চালের ভাত খায় ।
(এক শরীরওয়ালা ভাই টিউশনি সেরে ইডেনের সামনে নেমে কার সাথে জানি ফুসুরফাসুর করতেন । গুপ্তভাবে পাওয়া সংবাদের উপর ভিত্তি করে ওনার জন্য লেখা হয় টকছড়াটা)
৩। কিচ্ছু ভালো লাগেনা গুরু
মেয়ে নাই তাই পোলাগো দিয়াই শুরু।
(একভাইকে ওনার উইং এর বন্ধুরা কেন জানি গে বলে ডাকত। ওনাকে উদ্দেশ্য করে লেখা)
৪। টিউশনিতে গিয়া বগা কান্দে
ছাত্রী নয় পড়েছে মায়ের ফান্দে।
(উইং এর এক বড় ভাইকে ছাত্রীর মা প্রায়ই ফোন করতেন , কারনে-অকারনে । ছড়াটা ওনার জন্যই)
বছরখানের পর আমাকে বিদায় নিতে হবে উইং থেকে । অন্যদের জন্য যে টকছড়া লিখেছি জানিনা আমার জন্য কি ধরনের টক অপেক্ষা করছে।