"চাড্ডি,একটা রবীন্দ্রসংগীত শোনা"। বুঝলাম মুগ্ধ এসেছে।
-মাম্মা, অনেকদিন ধরে তোর গান শুনি না। আয়া পড়লাম।
-বয়।কি শুনবি বল?
-ওইটা শোনা, "বরিষ ধারা মাঝে শান্তির বারি"। আম্মারে শোনামু।আম্মা তোর গান শোনার লাইগ্যা অস্থির হইয়া আছে।
-শালা, এর মধ্যে আবার আন্টিরে টানস ক্যান? ক যে তোর শুনতে ইচ্ছা করতাছে।
-হালা, গান গা। খারা আম্মারে ফোন দেই। ওই বেটা তুই গান শুরু কর।
বাধ্য হয়েই গান শুরু করতে হল। মুগ্ধ ঠিকই আন্টিকে ফোন করে আমার মুখের সামনে ফোন ধরে রাখল।
এই আমাদের দোস্ত,মুগ্ধ। জীবনকে যে কতভাবে অনুভব করা যায়, কতভাবে উপভোগ করা যায় ওকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। আমরা যারা জীবন বয়ে চলি তারা মুগ্ধকে দেখে অবাক হতাম, আমি এখনও হই, আজীবন হব।
মুগ্ধর সাথে আমার পরিচয় ও গানের মধ্য দিয়েই। তখন থাকি মদিনা মার্কেটের হেলানো টাওয়ারে। আমি দুইতলায় আর লিমন, বাবু এরা তিনতলায়। সদ্য প্রেমে পড়ে পড়াশোনা খাটের তলায় লুকিয়ে রেখে সারাদিন ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াই। আর সন্ধ্যা হলে হেলানোর ছাদে বসে গান গাই প্রায় সারারাত। আর আমার সঙ্গী তখন লিমন। ওদের মেসেই মুগ্ধর সাথে আমার পরিচয়। প্রথম পরিচয়েই বন্ধুত্ব। তারপর ... তার আর পর নেই। এভাবেই ৭ টা বছর আমি আস্তে আস্তে মুগ্ধকে চিনেছি।
কখনো ভাবিনি আমি মুগ্ধকে নিয়ে লিখতে বসব। কিন্তু আমরা তো সব ভুলে যাই, সব। কিন্তু আমি তোকে কি কখনও ভুলতে পারবো রে? এখনও কোন অসুখ হলে প্রথমে তোর কথাই মনে পড়ে। এখনো "বরিষ ধরা" গাইতে গেলে তোর কথাই মনে পড়ে। সিলেটে গেলে যেমন চাচার দোকানের চা ছাড়া চলে না তেমনি তোকে ছাড়াও সিলেট কেমন যেন খালি খালি লাগে।
তোকে প্রশ্ন করেছিলাম "বার বার বান্দরবন যাস ক্যান?" তুই বলেছিলি "ক্যামন জানি আপন আপন লাগে রে। দুইন্যায় এর চে সুন্দর যায়গা আর নাই"। সেই বান্দরবানেই তুই শেষ গেলি, আর এলি না। বন্ধুদের ছাড়া যে মানুষটা একটাদিন ও চলতে পারতো না সে একা একা চলে গেল না ফেরার দেশে। মন খারাপ করিস না দোস্ত, একদিন আমরাও...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



