somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রাফিনের সাহায্যে তৈরি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র বাতি

১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রাফিন, কার্বনের এক প্রকার রূপভেদ যা অনেকের কাছেই পছন্দীয় এর গুণাবলীর জন্য। ইস্পাতের চেয়ে শক্তিশালী আর তামার চেয়ে বেশি পরিবাহী এই বস্তুটি। বর্তমানের সিলিকন নির্ভর প্রযুক্তি যে ভবিষ্যতে গ্রাফিন নির্ভর হতে যাচ্ছে এটা যেন না বললেও চলে। গ্রাফিনের বিস্ময়ের তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে তার আলোক তৈরি করার ক্ষমতা। গবেষকরা আলোক নিঃসরক গ্রাফিন ট্রানজিস্টর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ফিলামেন্ট বাল্বগুলো যেরকম কাজ করে এগুলোও সেরকমই কাজ করে।

অত্যন্ত ক্ষুদ্র স্কেলে কাজ করা গ্রাফিন তন্তু দিয়ে তৈরি করা বাতি বা লাইট বাল্বই এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র বাল্ব। এই গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জেমস হন তার এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেন “আমরা অপরিহার্যভাবেই পৃথিবীর সবচেয়ে পাতলা ও সরু বাল্ব উৎপন্ন করেছি।” জেমস হন নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।

প্রকৌশলী ও পদার্থবিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই এমন এমন একটা কিছু খুঁজছিলেন যা আলো নিঃসরণ করবে এবং যার আকৃতি হবে অনেক ক্ষুদ্র। এই ধরনের ক্ষুদ্র আলোক নিঃসরকদের খুব সহজেই ইলেকট্রনিক চিপের মাঝে স্থাপন করা যাবে। এই ধরনের নিঃসরকদের বলা হবে ‘ফোটনিক সার্কিট (Photonic circuit)’। কোয়ান্টাম কম্পিউটার সহ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনেক ন্যানো যন্ত্রপাতির বেলায় এই ধরনের ‘বাল্ব’ খুব কাজে আসবে।

কিন্তু এই ধরনের ক্ষুদ্র বাল্ব নির্মাণে কিছু সমস্যার দেখা দেয়। প্রথমত এত ক্ষুদ্র আকৃতির বাল্ব নির্মাণ করা খুব চ্যালেঞ্জিং দ্বিতীয়ত তাপমাত্রা সমস্যা। প্রকৌশল বিদ্যায় কোনো বস্তু হতে তখনই আলোক নিঃসৃত হয় যখন বস্তুটি প্রচণ্ড পরিমাণ উত্তপ্ত হয়। ক্ষুদ্র বস্তুতে এত উত্তাপ প্রদান করলে বস্তুটি গলে যাবে যা বড় ধরনের সমস্যা।

গ্রাফিন যেহেতু ইস্পাতের চেয়ে শক্তিশালী, তামার চেয়ে বেশি পরিবাহী ও তাপ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন তাই গ্রাফিন এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সেই লক্ষে বিজ্ঞানীরা কাজে নেমে পড়লেন এবং সফলও হলেন। তারা জানান গ্রাফিনের এই জিনিসটি উদ্ভাবনের ফলে খুব ক্ষুদ্র স্কেলে অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।


আলোক উৎপাদন

যখন তড়িৎ প্রবাহ ইলেকট্রিক বাল্বের ফিলামেন্টের মাঝে দিয়ে যায় তখন ফিলামেন্টটি খুব উত্তপ্ত হয় এবং জ্বলে উঠে। ফিলামেন্টগুলো সাধারণত উচ্চ পরিবাহী ট্যাংস্টেনের হয়ে থাকে। ইলেকট্রন যখন এর মধ্য দিয়ে চলাচল করে তখন ট্যাংস্টেনের পরমাণুর ইলেকট্রনকে তাদের কক্ষপথ হতে বিচ্যুত হয়ে যেতে শক্তি প্রদান করে (কোয়ান্টাম লম্ফ)। পরে ইলেকট্রনগুলো যখন নিজের কক্ষপথে ফিরে যায় তখন বাড়তি অর্জন করা শক্তিকে ফোটন হিসেবে নির্গত করে, যা আলোক শক্তি হিসেবে আমরা দেখতে পাই। ঐ সময় ফিলামেন্টের তাপমাত্রা ৩ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়! এই উচ্চ তাপমাত্রার জন্যই লাইট বাল্বের অভ্যন্তর বায়ুশূন্য করে রাখা হয় কিংবা নিষ্ক্রিয় গ্যাস ভরে রাখা হয়। সাধারণ বায়ুতে ট্যাংস্টেন এত পরিমাণ তাপমাত্রায় উন্নীত হলে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে জ্বলে ওঠবে, ফলে প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে, বাল্ব আর ‘বাল্ব’ থাকবে না।

এজন্যই ক্ষুদ্র স্কেলে উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ে কাজ করা একটু কষ্টসাধ্য। শক্তিশালী ও অধিক তাপ সহনশীল গ্রাফিকে কোনো একভাবে আলোক উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা গেলে ক্ষুদ্র স্কেলের এই সীমাবদ্ধতাগুলো দূর হবে। এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজে নেমেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সফলও হয়েছেন। বাস্তব জীবনেও প্রচুর উপকার বয়ে আনতে পারে এই উদ্ভাবন। যেমন নিত্যদিনের ব্যবহার করা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ক্ষুদ্র চিপ ব্যবহার করতে হয়। এটি এই ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে সমস্ত মানবজাতির উপকারে আসবে। বিজ্ঞানীদের এই প্রচেষ্টা হয়তো ক্ষুদ্র স্কেলের গবেষণা তথা ন্যানো প্রযুক্তিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

- সিরাজাম মুনির শ্রাবণ (বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত)

প্রতিদিন বিজ্ঞান বিষয়ক হালনাগাদ খবর পেতে বিজ্ঞান পত্রিকা পড়ুন।
www.bigganpotrika.com
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×