সময় অথবা সকালের গল্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সময় সীসার মত ভারী হয়ে আসে আমাদের শহরে ।
আমরা কতিপয় , ভীরু নাগরিক সকলের চোখ এড়িয়ে পৌছে যেতে থাকি নগরের শেষ প্রান্তে । কোথাও কোথাও অবশ্য কঠোর প্রহরা বসানো, কিন্তু আমরা সাবধানতার কোন ক্রুটি রাখিনি ।
মাঝখানে অবশ্য অনাহুত কোন গর্তে পা বাঁধিয়ে বসে আমাদের একজন , আমরা সহসা তার গলা চেপে ধরি , যেন কোন শব্দ আমাদের উদ্দেশ্যে বাধা না দিতে পারে , প্রথমে সে বাধাদানের চেষ্টা চালালেও ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসে তার ক্ষুদ্র দেহ ... একসময় সে চিৎকার করার সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে চিরদিনের জন্য ।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি আমরা , কোন বিদেশী শব্দ বড় বেশি অনাহূত আর বিপদজনক আমাদের জন্য .... আমাদের হাতে সময়ও আর বেশি নেই , কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের পৌছাতে হবে নগরের শেষ ফটকটিতে ।
আমরা সাবধানে একসময় পৌছে যাই নগরের শেষ প্রান্তে , আমাদের মাঝে বিপুল উত্তেজনা কাজ করে ..... ছোট্ট শিশুর মত আমরা উৎফুল্ল হয়ে উঠি ..... আমাদের জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা এসে পৌছেছি ।
হঠাৎ 'মট' শব্দে সচকিত হয়ে উঠি আমরা , একজনের পায়ের নিচে পড়ে একটা শুকনো ডাল ভেঙে যায় -- বোকার মত সে তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে , আর আমরা ক্রমশ এগিয়ে যাই , আমাদের বিকৃত চেহারায় খেলা করে আজন্ম ক্রোধ ।
আমরা হাতের নোংরা কাজ খুব দ্রুত শেষ করে ফেলি , হাতে সময় বেশি নেই ।
আমার বাহু জড়িয়ে ধরে পাশের জন উত্তেজনায় , আমি সরিয়ে দিই তার হাত , খুঁজতে থাকি নগর দেয়ালের পাশে খোড়া সুরঙ্গটির অবস্থান , একসময় পেয়ে যাই অন্ধকার প্রকোষ্ঠটির দেখা , আমাদের চোখগুলো নতুন পয়সার মত চকচক করে ওঠে লোভে ।
হঠাৎ দূরে কোথাও সাইরেন বাজতে শোনা যায় , পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় প্রহরীদের , আমরা সাবধানে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরি কাপড়ের মত ....আমরা মুখ চেপে ধরে রাখি প্রাণপণে , যাতে কোন আগন্তুক শব্দ এসে আমাদের আক্রমণ না করতে পারে ।
এরপর একসময় সব কোলাহল থেমে যায় , শুধু আমাদের নিঃশ্বাসের শব্দ ব্যতীত আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না । আমরা তখন দু'হাতের নখ দিয়ে সরাতে থাকি অন্ধকার .... আমাদের নখগুলো ভেঙে যায় ; ঝরঝর করে লাল তাজা রক্তে ভিজে যায় কবজিগুলো , তবুও আমাদের প্রত্যাশার কাছে পরাজিত হয় সবকিছু ।
আমরা ভাবতে থাকি , হয়তো কখনোই শেষ হবে না এই অন্ধকার ।
একচুল আলো এসে পড়ে আমাদের লাল , রক্তাত্ত হাতে .... পরক্ষণে আমাদের চোখে পড়ে আর এক খন্ড আলো ..... আর এক টুকরো ............................
আমাদের চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু বেয়ে পদে , আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই অদৃশ্যের প্রতি ............... একের পর এক আলোক রশ্মিতে ভরে যায় আমাদের চারপাশ .....লাল , সবুজ , নীল ... বেগুনী আলোতে ভরে ওঠে আমাদের মুঠোগুলো ।
আমরা প্রাণপণে চিৎকার করে উঠি , আমাদের সবটুকু সঞ্চিত বাতাস বেরিয়ে যায় ফুসফুস থেকে , আমরা পরোয়া করি না .......... আমরা আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিই আমাদের দুটি হাত । আমরা কতোদিন বঞ্চিত ছিলাম এ ভালোবাসা থেকে ।
নরম , উষ্ণ রোদে ক্রমশ ভরে যায় আমাদের চারপাশ । আনন্দে আত্নহারা হয়ে আমরা নাচতে থাকি শিশুর মত ।
আমাদের শরীর ক্রমশ গলতে শুরূ করে , কাদা মাটির মত ক্রমশ গলতে থাকে , আমাদের অঙ্গগুলো ... ধীরে ধীরে মাটির সাথে মিশে যেতে থাকে আমাদের দেহ । আমরা পরোয়া করি না। এক অপার্থিব আলোর দিকে চেয়ে চোখ বন্ধ হয়ে আসে আমাদের ।
একসময় শুধু সকালটা ছাড়া আর কিছুই থাকে না ।
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের
আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা
তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!
এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কে কাকে বিশ্বাস করবে?
করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।
সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন