।।--ইকারাস এবং ডিডেলাস: আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন--।।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
গ্রীক মিথগুলোর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় দুইটি চরিত্র ইকারাস ও ডিডেলাস। যদিও ইকারাসের পরিনতি অনেক করুন , তবুও তার ঘটনাটি বেশ বিখ্যাত।
ইকারাস ছিল ডিডেলাস এর একমাত্র ছেলে। ডিডেলাস ছিলেন এথেন্স এর বিখ্যাত এক চরিত্র। তিনি একাধারে ছিলেন স্থপতি , ভাস্কর ও আবিস্কারক। বলা হয়ে থাকে, ডিডেলাসের তৈরি মূর্তি গুলো এতোটাই জীবন্ত ছিল ,যে তাদের সুতো দিয়ে বেধে রাখতে হতো ,যাতে চলাচল না করতে পারে। ডিডেলাসের সহকারী ছিল ট্যালোস। ট্যালোস ছিল ডিডেলাসের বোনের পুত্র , যার মেধা তাকে খুব অল্প সময়েই পৌঁছে দিয়েছিল সাফল্ল্যের শিখরে। অসামান্য এক প্রতিভার পরিচয় পেলেন ডিডেলাস। শিকারের সময় একটি সাপের দন্তচালনা দেখে ,অথবা বড় মাছের পিঠের শক্ত কাটার মাধ্যমে ধারনা নিয়ে সে আবিস্কার করলো এক আশ্চর্য করাত,যা দেখে ডিডেলাস ও হয়ে উঠলো ঈর্ষান্বিত। পাছে শিষ্য তার গুরুকে অতিক্রম করে বসে , এই কুচিন্তায় ডিডেলাস এক উঁচু পাথরের উপর থেকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে ট্যালোস কে হত্যা করেন।
ডিডেলাসের এই অপকর্মের জন্য তাকে এথেন্স ছাড়তে বাধ্য করা হল । ডিডেলাসকে পাঠানো হল ক্রীট দ্বীপে ,রাজা মাইনস এর অধীনে কাজ করার জন্য।
কোন এক সময় রাজা মাইনসের কাছে দৈববাণী এলো সমুদ্রের রাজা পসেডিওন এর উদ্দেশ্যে একটি ষাঁড় উৎসর্গ করার। সমুদ্র থেকেই একটি ধবধবে সাদা সুন্দর ষাঁড় উঠে আসলো ক্রীট দ্বীপে। ষাঁড়টি এতোটাই সুন্দর ছিল যে রাজা দেবতাদের আদেশ অমান্য করলেন। তিনি ষাঁড়টাকে নিজের কাছেই রাখতে চাইলেন। এতে সমুদ্র দেবতা পসেডিওন চরম ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি রাজাকে শাস্তি দিলেন তার রানীর মাধ্যমে যেখানে রানী প্যাসিফার অন্তরে এই ষাঁড়টির জন্য গভীর প্রেম সৃষ্টি হল ।
এমনকি এই ষাঁড়ের সাথে রানী প্যাসিফার মিলনও হল।
প্যাসিফার গর্ভে জন্ম নিল এমন এক সন্তান , যার অর্ধাঙ্গ মানুষের , এবং অর্ধাঙ্গ ষাঁড়ের। তার নাম মিনোটর।
মাইনস এই ঘটনায় চরম ভাবে লজ্জিত ও অপমানিত হলেন। তিনি মিনোটর নামক জন্তুটিকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে ফেলতে চাইলেন। তিনি ডিডেলাসকে আদেশ দিলেন এমন এক ল্যাবিরিন্থ বা গোলকধাঁধা নির্মাণের যার মাধ্যমে তিনি বন্দী করে ফেলতে পারবেন এই দানবকে , এবং কখনোই সে পালাতে সক্ষম হবে না।
ডিডেলাস মাইনসের কথা অনুসারে একটা ল্যাবিরিন্থ তৈরি করলেন। যার প্রবেশপথ ছিল মাত্র একটি। এটি এতোটাই জটিল ছিল ,যে কেউ ঢুকলে আর বের হওয়া সম্ভব ছিল না।
মিনোটর এর খাদ্যবস্তু ছিল মানুষ । ক্রীট এর সাথে এথেন্সের যুদ্ধে এথেন্সের পরাজয়ের কারনে এথেন্স থেকে প্রতিবছর ক্রীট দ্বীপে কিছু দুর্ভাগ্যবান মানব ও মানবী পাঠানো হতো । তারাই পরিনত হতো মিনোটর এর খাদ্যবস্তু।
কোন এক বছরে এথেন্স থেকে বন্দী হয়ে এলেন থিসিউস । থিসিউস ছিলেন এথেন্সের এক বীর । থিসিউস কে দেখে ক্রীট রাজকন্যা অ্যারিয়াডেন থিসিউসের প্রেমে পড়ে। সে ডিডেলাসকে কাতর কণ্ঠে অনুরোধ জানায় ,থিসিউস কে মিনোটর এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। ডিডেলাস থিসিউস কে সাহায্য করে। সে থিসিউস কে একটা সুতোর গোলক দিলো। থিসিউস ল্যাবিরিন্থের প্রবেশ পথে গোলকের সুতোর এক প্রান্ত বেধে নিল , আর বাকি প্রান্ত ছিল তার কাছেই। ল্যাবিরিন্থে ঢুকে সে হত্যা করলো মিনোটরকে। এবং সুতো ধরে বের হয়ে আসলো ল্যাবিরিন্থ থেকে।
রাজা এই ঘটনা আবিস্কার করে অনেক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন ডিডেলাসের উপর। তিনি ডিডেলাস ও তার পুত্র ইকারাস কে বন্দী করলেন গোলক ধাঁধার মাঝে। কোন সাহায্য বা সুতোর গোলক ছাড়া ডিডেলাসের ও সম্ভব ছিল না নিজের তৈরি ল্যাবিরিন্থ থেকে বের হবার। তখন ডিডেলাস পালানোর নতুন পরিকল্পনা বের করলেন।
ডিডেলাস পাখির পালক জমানো শুরু করলেন। মৌচাক থেকে মোম সংগ্রহ করলেন। যখন পর্যাপ্ত পরিমানে পালক এবং মোম সংগৃহীত হল ,তখন তিনি দুই জোড়া পাখা তৈরি করা শুরু করলেন। এক জোড়া নিজে জন্য,এক জোড়া ইকারাসের জন্য।
পাখা তৈরি শেষ হলে তিনি ইকারাসকে পড়িয়ে দিলেন পাখা। তিনি নিজেও পড়লেন তার জোড়া। উড়তে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তিনি ইকারাসকে বারবার সাবধান করে দিলেন যাতে উড়তে উড়তে সে সূর্যের কাছে না চলে যায়। ডানা ঝাপটিয়ে তারা মুক্ত হলেন বন্দী দশা থেকে , ক্রীট কে পেছনে ফেলে চলে এলেন বহুদুরে।
কিন্তু হায় , এই উড্ডয়নের আনন্দে বিভোর ইকারাস তার বাবার সাবধান বানী ভুলে উড়তে উড়তে সূর্যের কাছেই চলে এলো। সূর্যের উত্তাপে পাখায় ব্যবহৃত মোম গলে গলে পড়তে থাকলো। তার পাখা খুলে গেলো এবং তার পতন হল সমুদ্রের গভীর জলরাশিতে। এভাবেই সলীল সমাধি হল পিতার অবাধ্য ইকারাস এর।
নিজের ছেলেকে চোখের সামনে মৃত্যুবরণ করতে দেখে পিতা তীব্র যন্ত্রণায় দগ্ধ হলেন। তবুও তার কিছু করার ছিল না। তিনি উড়তে উড়তে পৌঁছে গেলেন সিসিলি ,যেখানে সেইখানের রাজা তাকে সাদরে গ্রহুন করলেন।
এদিকে মাইনস ডিডেলাস কে ধরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন । তিনি ডিডেলাসকে খুজে বের করার নতুন ফন্দি আঁটলেন। তিনি একটি জটিল এবং প্যাঁচানো সুক্ষ নল তৈরি করলেন । তিনি সর্বত্র ঘোষণা করে দিলেন ,যে ব্যক্তি এই নলের মধ্য থেকে সুতো নিতে পারবে একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত , তাকে তিনি অনেক বড় পুরস্কার দিবেন । ডিডেলাস এই ঘোষণা শুনে সিসিলির রাজাকে বললেন ,তিনি তা করতে পারবেন । ডিডেলাস নলের এক প্রান্তে একটা পিঁপড়া নিয়ে তার সাথে সুতো বেধে দিলেন। নলের অই প্রান্তটি বন্ধ করে দিলেন , ফলে পিঁপড়া একসময় নলের অপর প্রান্ত থেকে সুতো সহ বের হল।ডিডেলাস সমর্থ হলেন।
রাজা মাইনস বুঝলেন ,এটি ডিডেলাস ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। তিনি তাই ডিডেলাসকে ধরার জন্য সিসিলিতে আসেন। কিন্তু সিসিলির রাজার সাথে মাইনসের যুদ্ধে মাইনস নিহত হন।
ডিডেলাস এর বাকি জীবনটা সিসিলিতেই কাটে। ডিডেলাস ও তার ছেলে ইকারাসের কাহিনীর সমাপ্তি এখানেই।
ছবি : ইন্টারনেট ।
তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট ।
Click This Link
Click This Link
Click This Link
http://www.verticalpool.com/icarusmyth.ht
http://www.island-ikaria.com/culture/myth.a
http://www.pantheon.org/articles/i/icarus.ht
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার
এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।
আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন
কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই
দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।
সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন
রম্য : মদ্যপান !
প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=
এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।
বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন
Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই
শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন