somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লটকন

১৫ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি লটকন এখন রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। অধিক উৎপাদন আর বেশি পুষ্টিসম্পন্ন হওয়ার কারণে এ ফলের চাহিদা বিশ্ববাজারের দিন দিন বাড়ছে।

একশো বছর আগে আমাদের দেশে প্রথম লটকনের চাষ শুরু হয়। অঞ্চলভেদে ফলটির রয়েছে বিভিন্ন নাম। চট্টগ্রামে এর নাম ‘হাড়ফাটা’, সিলেটবাসী চেনে ‘ডুবি’ নামে। ময়মনসিংহের লোকেরা বলে থাকে ‘কানাইজু’। এ ছাড়া ‘লটকা’, ‘লটকাউ’, ‘কিছুয়ান’ এসব নামেও ফলটি বেশ পরিচিত। আঙুরের মত থোকায় থোকায় ধরে বলে ইংরেজিতে এর নাম ইঁৎসবংব মৎধঢ়। বৈজ্ঞানিক নাম ইধপপধঁৎবধ ংধঢ়রফধ. গাছ ছোটখাটো ঝাঁকড়া ধরনের। পাতা ডিম্বাকৃতির, গাঢ় সবুজ। লটকন নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণামূলক কাজ হয়েছে। গবেষকেরা বারি-১ নামে আমাদের দেশে চাষ উপযোগী লটকনের একটি উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছেন।

লটকন খাদ্যমান সমৃদ্ধ ফল। ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর চাষও লাভজনক। চাষ করতে বাড়তি কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। আঙিনায় বা বড় বড় গাছের নিচে অধিক ছায়াযুক্ত জায়গায় খুব সহজেই লটকনের আবাদ করা যায়। লটকন চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নার্সারি থেকেই লটকন চারা সংগ্রহ করা যায়। লটকন গাছ রোপণের তিন-চার বছর পর থেকেই ফল ধরতে শুরু করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে লটকন গাছে ফুল আসে। ফুল আসার আগে মার্চ মাসে গাছটির গোড়ার মাটি সামান্য কুপিয়ে তাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার প্রয়োগ করে হালকা সেচ দিলে ফলন বৃদ্ধি ও আকার বড় হয়।

লটকন গাছের রোগবালাই তেমন দেখা যায় না। অধিক ছায়াযুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠায় মাঝে-মধ্যে গাছে ছত্রাক জাতীয় আবরণ পড়ে থাকে। তখন ফলের ওপর ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটিয়ে ছত্রাক থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব। এতে ফলের রঙ উজ্জ্বল হয়।

এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে লটকন গাছে ফুল এলেও জুলাই মাসের প্রথম থেকেই ফল পাকতে শুরু করে। ফল পাকলে পরিপক্বতা অনুযায়ী ছড়া ছড়া ফল সংগ্রহ করতে হয়। লটকন ফলের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত এমনভাবে ফল ধরে যে, তাতে গাছের কাণ্ড বা ডাল অনেক সময় দেখা যায় না। আর একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে, লটকন পাকার ৫০ থেকে ৬০ দিন আগে গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম পটাশ পানির সঙ্গে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিলে ফলের মিষ্টতা ও আকার বৃদ্ধি পায়। একটি ১০ বছরের লটকন গাছে গড়ে প্রায় ২০০ কেজি লটকন ধরে। ফল হিসেবে লটকন ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন ও খনিজ লবণে সমৃদ্ধ।

বাংলাদেশে প্রায় ৭০ প্রকারের ফল জন্মে। সাধারণত বসতবাড়ির আঙিনা থেকে আসে এসব ফল। বর্তমানে ৩ লাখ ৪৪ হাজার একর জমিতে বিভিন্ন প্রকারের প্রায় ৪৭ লাখ ৩৬ হাজার টন ফল উৎপাদন হচ্ছে। গুণগত মানসম্পন্ন ফল উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি অনুসরণ, গবেষণাগারে উদ্ভাবিত নতুন জাত ব্যবহার এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফল সংগ্রহকরণ, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের মাধ্যমে ফলের আশানুরূপ ফলন বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিকভাবে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।

দৈনিক ইত্তেফাক : ১৫.০৮.২০১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×