somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অতি প্রেমময় গল্পের পরিসমাপ্তি

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে স্কুলের ছেলেমেয়েদের ক্লাস নেই। তারা সবাই সকাল সকাল স্কুলে উপস্থিত হয়েছে আজকে তাদের বিদায় অনুষ্ঠান।

সবাই ফুল নিয়ে এসেছে স্যারদের দিতে। নাইনের ক্লাসের এক ছেলে সানজিদ। সে তার ক্লাসের পেছনের বেনচিটাতে বসে সামিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সামিয়া তার ফ্রেণ্ড সেও নাইনে পড়ে। সামিয়া দ্বিতীয় বেনচে বসেছিল এতখন এখন শিক্ষকদের ফুল দিতে যাচ্ছে। ফুল দিয়ে চলে এসে আগের যায়গায় গিয়ে বসল। সানজিদ আগের মতই আছে। অনুষ্ঠান শেষে সবাই স্কুলের মাঠে গিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করছে। সানজিদ দৌড়ে সামিয়ার কাছে গিয়ে সামিয়ার হাতে একটা ফুল দিল.... দিয়ে সামিয়াকে বল্ল সামিয়া তোকে আমার অনেক ভাল লাগে। সামিয়া বল্ল.... আমারো তো তোকে অনেক ভাল লাগে। সানজিদ বল্ল... চল তাহলে।
সামিয়া: কোথায়?
ছাদে যাব।
চল।

যেতে যেতে সামিয়া বল্ল, সানজিইইদ তুই না এই ফুল স্যারদের দিতে আনলি।
সানজিদ বল্ল... আরে স্যারদের আমার একটুও ভাল লাগে না।
সামিয়া: ও....

সানজিদ সামিয়াকে নিয়ে গেল ছাদের একদম কোনায় এবং তারা বসে বসে গল্প করতে লাগল।
সামিয়া: সানজিদ তুই আমাকে একটা কিস কর না..

সানজিদ: পারব না। আমার লজ্জা লাগে আর পরশুদিন না করলাম।
সামিয়া: তুই? আমি তোকে জোর করে কিস করলাম নাহলে তুই করবি কিস, লাজুক কোথাকার।
সানজিদ: দেখ তুই কিন্তু আমাকে অপমান করছিস।
সামিয়া: আচ্ছা ঠিক আছে।
সানজিদ: চল বাসায় চলে যাই।
সামিয়া: চল।

সানজিদ বাসায় এসে গোসল করে ঘুম দিল। আর সামিয়া তার বাসায় গেল।

সামিয়া তার রুমে সানজিদের দেয়া ফুলটা সাজিয়ে রেখে গোসল করতে গেল। গোসল করে এসে খেয়ে টিভি দেখা শুরু করল। সে আবার হিন্দি সিরিয়াল খুব পছন্দ করে তাই সারাদিন সেগুলাই দেখে। সামিয়ার ছোট বোন লামিয়া পড়ে সেভেনে। লামিয়ার সাথে রুম শেয়ার করে সামিয়া। সামিয়ারা দুই বোন আর বাবা মার সংসার। দুইবোনের স্কুল থেকে ফিরে সারাদিন হিন্দিসিরিয়াল দেখেই সময় কাটে।

সানজিদ বিকাল বেলা ঘুম থেকে উঠল। সানজিদ বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। বাবা মা ব্যস্ত তাই সানজিদের খবর খুব কমই নেয়া হয় তাদের। সানজিদ উঠে হাতমুখ ধুয়ে পিসি টা ছেরে রান্নাঘর থেকে খাবার এনে খেতে থাকল। বাসায় কেউ নেই সে একাই। প্রতিদিনই সে একা থাকে সারাদিন। মা বাবা অনেক রাতে ফেরে। তো সানজিদের খাওয়া শেষ হল। সে এবার একটা মুভি ছেরে দেখতে থাকল। তার পিসি মুভি দিয়ে ভরা সারাদিন শুধু মুভি দেখে।

সন্ধা পার হয়ে গেল। তার বোরিং লাগছিল তাই একটু এক্স ছারল মাইন্ড হালকা করার জন্য। দেখতে থাকল। এরপর না পেরে ওয়াশরুমে গেল ভাল করে মাইন্ড হালকা করতে।

রাত হয়ে গেল। সানজিদের কথা হঠাত মনে পড়ল সামিয়ার। সে একটা কাগজে লিখল "সানজিদ তোকে আমার অনেক ভাল লাগে। তোরও কি সত্যিই আমাকে ভাল লাগে?"
চিন্তা করল কালকে সকালে এটা সানজিদকে দিবে। সে ঘুমিয়ে গেল। রাতে সামিয়ার মা সামিয়ার রুমে এল। প্রতিরাতেই কিছুখন পর সামিয়ার মা দেখতে আসেন মেয়েদের। কাগজটা টেবিলের ওপরে ছিল। তার মা কাগজটা দেখল এবং লেখটা পড়ল। সে নিয়ে বাবাকেও দেখাল কিন্তু সামিয়াকে তারা কিছু বলল না।

পরদিন সকালে কাগজটা না পেয়ে সে অবাক হল। কিন্তু কোন সমস্যা নেই সে আবার লিখল এবং সানজিদকে ফোন দিয়ে তাকে একটা জিনিস দেবে বলে বাড়ির নিচে থাকতে বলল, সে চাচ্ছিল কাগজটা দিয়েই চলে আসবে কারন এখন তার খুব লজ্জা করছিল।

সামিয়া বেরিয়ে গেল.... সানজিদের বাসা রিক্সায় ২০ মিনিটের পথ। সামিয়া রিক্সা নিল। সে অনেক খুশি ছিল। সানজিদের বাসা আর বেশিদুর নয়। এইতো চলে এসেছে আর একটু বাকি হঠাত.......
হঠাত পিছন থেকে আসা একটা গাড়ির ধাক্কায় রিক্সা ভেঙ্গে মুচড়ে গেল আর সামিয়া নিচে পরে গিয়ে গাড়িটার নিচে একদম পিষে গেল।

রিক্সা ক্ষতি হল তবে রিক্সাওয়ালার বেশি কিছু হল না। রিক্সাওয়ালা বেচে গেল।

সেই গাড়িটা থেকে একটা মেয়ে জলদি বেরিয়ে সামিয়ার হেল্প করতে গেল কিন্তু আশেপাশের লোকেরা তাকে তা করতে দিলনা। ওই মেয়েটিকে সহ সামিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে গেল।

সামিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হল আর তার মোবাইল থেকে তার বাসার ফোন নাম্বার নিয়ে ফোন করে বাড়ির লোকদের সেখানে আসতে বলা হল।

সামিয়াকে বাঁচানো গেল না।

কিছুখন পর তার বাবা মা হাসপাতালে পৌছাল। কিন্তু তারা এসে শুধু মেয়ের মরা লাশ দেখতে পেল। তারা কান্নায় ভেঙ্গে পরল।

সেই গাড়ির মেয়েটা তার বাবা মাকে ফোন দিয়ে দিয়েছিল। এতক্ষনে তারাও চলে এসেছে। তারা সামিয়ার বাবা মার কাছে ক্ষমা চাইল। সামিয়ার বাবা কাঁদতে কাঁদতে বল্লেন আমার মেয়ের ভাগ্যে যা হবার ছিল তাই হয়েছে আপনার মাফ চাইবার কিছু নেই।

সামিয়ার লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরে এল।

ঐদিকে সানজিদ এখনো তাদের বাড়ির নিচে দাড়িয়ে আছে সামিয়ার অপেক্ষায়।

এতক্ষনে সানজিদ সামিয়াকে ফোন দিল। কিন্তু ফোন ধরল সামিয়ার মা। সানজিদকে সামিয়ার বাড়ির সবাই চিনত।

সানজিদ: হ্যালো সামিয়া...

না, আমি তোমার আন্টি

আন্টি সামিয়া কোথায়?

সামিয়া বাসায়ই

আন্টি ও আমাকে কি যেন দিবে তাই থাকতে বলেছিল কই ও আসলোনা

ও আর কখনো আসতে পারবেনা।

কেন আন্টি??.... আচ্ছা আমি আপনাদের বাসায় আসছি।

সানজিদ তখনি সামিয়াদের বাসায় গেল। কিন্তু.....
কিন্তু দেখল
সামিয়াকে নিচে শুইয়ে রাখা হয়েছে
সে মারা গেছে সানজিদ বুঝতে পারল
আত্তিয়স্বজনরা তাদের বাড়িতে আসছে

সেদিন রাতে সামিয়ার মা যে কাগজটি নিয়ে গিয়েছিল সানজিদের হাতে সেই কাগজটি দিয়ে বল্ল সামিয়া তোমাকে হয়তো এটা দিতে চেয়েছিল বলেই ভিতরে চলে গেল।

সানজিদ কাগজটি হাতে নিয়ে পড়তে গিয়েই বুকের গভীর থেকে একটা চাপা কষ্ট এসে তার চোখ দিয়ে কান্নার জল হয়ে বেরুতে চাইল কিন্তু পারল না চোখ ছল ছল রইল.....

সানজিদ কাগজটা পকেটে নিয়ে বেড়িয়ে গেল। তার গন্তব্য হয়ত অনিশ্চিত।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×