somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা, আমি এসে গেছি !

২১ শে মে, ২০১২ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
খবর চলে এসেছে, আমাকে আমার হ্যাংগার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে। সেই রুহ জগত থেকে দেখেছি মানব জীবনের এই বেরিয়ে আসা যে কত বিচিত্র হয়!!!

কোনটা হয় পরম আকাংখিত, কোনটা চরম অনাকাংখিত, কোনটা সুখের, আবার কোনটা করুণ, কোনটার খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা রাষ্ট - এমনকি ভৌগলিক সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্ব ছড়িয়ে পড়ে। তার জন্ম হওয়ার ছবি নিয়ে চলে মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলারের বানিজ্য। আবার কোনটা এত নিভৃতে হয় যে পাশের কামরার মানুষও জানতে পারে না - কখন সে এল।

কারো আগমন বার্তার জন্য অপেক্ষা করে বাক্স-বাক্স মিস্টি, কারো জন্য চোখের জল। কারো জন্য ডজন ডজন কোল অধীর আগ্রহে ধৈর্য্য ধরে থাকে, কারো জন্য অপেক্ষা করে ডাস্টবিনের কোনা। কেউ আসে মায়ের আশির্বাদ হয়ে, কেউ হয় অভিশাপ।

এখানেই শেষ নয়, তৃতীয় বিশ্বে মানব আগমন আরো জ্বালাময়। আমার লিংগ কি সেটাও একটা ফ্যাক্টর !!! মানব সন্তানটি বৈধ কি অবৈধ সেটা তো এক মহা প্রশ্ন যার উপর ঠিক হবে সন্তানটির বিশেষণ। আরে, বাচ্চাটি তো মাত্র জন্মাল - তার কাজের উপর নির্ভর করবে তার বিশেষণ। আরেকজনের বৈধ-অবৈধ কাজের উপর নির্ভর করছে তার বিশেষণ !!! আজব !!!!!!!!!!!!!!!
এই বাচ্চাটার দোষটা কোথায় ???

আচ্ছা, জারজ সন্তান না বলে এই সন্তানের "জারজ মা-বাপ" বলা যায় না ?!

এই সব সাত-সতর কাহিনী দেখে রুহ জগতে ভাবতাম - এই মানব জন্ম না হয়ে যদি অন্য কোন প্রাণীর উদরে জন্মাতাম !!! কোন প্রশ্ন হোত না, আমি পুরুষ কি নারী, বৈধ কি জারজ।

দুই.
প্রভুর হুকুম হয়ে গেছে। এখুনি পৃথিবীতে ল্যান্ড করতে হবে। আমার বাহক সিলেক্ট হয়ে গেছে। পুরোদমে চলার পূর্বে আমাকে কয়েক মাস থাকতে হবে 'মা' নামক এক হ্যাংগারে। এখানে আমাকে উপোযগী করা হবে বিপদসংকুল-ভিবিষিকাময়-লোভী-প্রতারনাময়-প্ররশ্রীকাতর এক দুঃসহ পরিবেশে জীবন অতিবাহিত করার জন্য।

এটা আমার যাত্রার দ্বিতীয় পর্যায়। এখানে আমি ঐ মা নামক প্রানীর শরীরের রস চুষে বড় হব। তাকে কয়েকটা মাস অবর্ণনীয় কষ্ট দিব। সে আমাকে পরম যত্নে বহন করে বেড়াবে। আর আমি তাকে মাঝে মাঝে আমার খেয়াল খুশি মত লাথি-গুতো দিব। তার খাবারের রুচি থাকবে না জোর করে খাবে, আর আমি রক্ত চোষার মত তা টেনে নিয়ে আমার চাহিদা মেটাব। সে উঠতে বসতে তার শরীরের প্রতিটা কোষের খবর হয়ে যাবে যে সে আমাকে বহন করে বেড়াচ্ছে। আর আমি তাকে শুশব, ঘুমাব - থাকব আমার মত জমিদার হালে। অবহেলে লাথি মারব তার তলেপেটে - তার জান বেরিয়ে যাওয়ার দশা হবে। একটু বোর লাগছে তো সর্ব শক্তিতে, গুতো মেরে বসব তার হৃতপিন্ড বরাবর - ব্যাথায় ককিয়ে উঠে সে মা নামক অসহায় প্রানীটি হয়ত দাড়ানো থেকে বসে পড়বে। আমার সামান্যতম দয়া হবে না। আমি হয়ত পাশ ফির ঘুমিয়ে পড়ব।

আমি জানি না ঐ মা নামক আমার দাসিটি কারো আদরের দুলালী বা কারো সোহাগী বউ হবে। তবে হয়ত বেচারার একটু রক্ষা হবে। আর যদি সে কোন পাশন্ড পুরুষের বউ হয় তো তার সেই কষ্ট বেড়ে যাবে অযুত-নিযুত গুন।
আমার এই রুহ জগত থেকে যাত্রা শুরুর আগে খারাপ লাগছে কিরকম এক কৃতঘ্ন পরিচয়ে আমি শুরু করব আমার দ্বিতীয় যাত্রা।

তিন.
আজ জন্মদিন আমার। এখনো জন্মাইনি। তবে পৃথিবীতে যাকে পরিবার বলে - আমার সৌভাগ্য আমি একটি পরিবার পাব। তাদের মাঝে কথা-বার্তা চলছে যে আজ আমি জন্ম নেব। এদের আচার আচরনে বেশ হাসি পায় আমার! এদের কথা বার্তা বা আচরন এমন যে তারা যেন আমার মালিক। এরা ভুলেই যায় যে এরা উপকরন মাত্র। শ্রষ্ঠা আমাকে পৃথিবীতে পাঠাবে। এরা ব্যবহার হয়েছে মাত্র। হ্যাঁ, অধিকার কিঞ্চিৎ যদি কারো থেকে থাকে সে হচ্ছে ঐ "মা" নামক বাহনটির যার শরীর-মন-মগজ সব ভাজা ভাজা করে আমি আজ জন্মাচ্ছি।

সেই প্রায় অন্ধকার থাকা ভোরে আমার বাহনটিকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আনা হয়েছে যাকে এই বোকার দল "হসপিটাল" বলে। আমার বাহনটিকে বিছানায় নেয়ার আগেই তার মূল্য দিয়ে দিতে হয় বা নিশ্চিত করতে হয় এই মূল্য দেয়ার সমার্থ আছে কি না।

আমি নিজেও বাহন ছেড়ে বের হওয়ার জন্য আকুপাকু করছি। একটুও ভাবছি না যে আমার সামান্যতম নড়াচড়া এই 'মা' নামক বাহনটি কলজে-চেরা ব্যাথায় গুঙ্গিয়ে উঠছে। আমি ভাগ্যবানদের একজন মনে হচ্ছে। আমার বাহনটি যার তত্বাবধানে আছে যাকে পৃথিবীতে 'বাবা' নামে সবাই চেনে ঐ মানুষটাও সংবেদনশীল। কারন আমার 'মা'টা যখন ব্যাথার যন্ত্রনায় হাটতে পারছে না তখন এই লোকটা তাকে প্রায় কোলে করে এনে মাইক্রো নামে আরেকটা বাহনে উঠিয়েছে।

সেই সকালে আমাকে বার করার জন্য আনা হয়েছে। আমি সেই রাত আড়াই-তিনটা'র সময় থেকে বের হতে চাইলাম, পুরো পরিবারটিকে তটস্থ রাখলাম, পরিবারের বয়স্ক থেকে জোয়ান যারা একেকজন একেক পরিচয়ে পরিচিত - দাদা, দাদী, চাচা কারো চোখেই ঘুম নেই। সারা রাত চারিদিকে কত কথা!! সেই কতদুর থাকে ফুপু, নানা, নানি, খালা সবাই আমাকে নিয়ে কথা বলছে, "কখন আমি আসব"। অথচ আমি ঘুমাই আর ঘুম ঘোরেই ব্যাথা দেই মা টাকে। কেউ আমাকে কিচ্ছু বলছে না বা আমার উপর রাগ করছে না। কত্ত বড় লাট বাহাদুর আমি !!!!

দুপুর হয়ে গেছে এখনো আমার বার হওয়ার নাম নাই। মাঝে মাঝে মা'টা ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠছে। একে তো আমি ব্যাথা দিচ্ছি ভেতর থেকে, তারউপর আরো ব্যাথার জন্য "ডিপ" নামক কিছু দেয়া হচ্ছে যে মা'টা আরো ব্যাথাতুর হয়। অসহায় মা'টাকে ডিপের পর আরো গরম কি কি যে খাওয়ানো হচ্ছে, সাথে সাথে এই ভারী শরীর নিয়ে ক্রমাগত হাটানো হচ্ছে। কামরার এই স্বল্প পরিসরে সে অন্তত কয়েক কিলো হেটেছে আমাকে বহন করে।

ঐদিকে বাপটাও দৌড়াদুড়ি করছে হসপিটালের "সেবা-মূল্য" কত কম করা যায়। গত তিন মাস আগে তার চাকরী চলে গেছে। কোন রোজগার নাই। তিন-চার জনের কাছে হাত পেতেও রেখেছে। ঐ টাকা জোগাড়ের ব্যবস্থা করতে গিয়ে বেচারার চোখ-মুখ এত করুন হয়েছে যে মায়া লাগে। বিকাল পাঁচটার দিকে আবার আমি নড়ে-চড়ে উঠলাম। বের হব হব... কিন্তু বের হচ্ছি না। আমার কাছে খেলা খেলা লাগছে... আর এদিকে মা টা ব্যাথায় নীল হয়ে গেছে। সেই করুন সময়ে একটু ভালও লাগছে যে মা'টা একটা ভাল শাশুড়ী পেয়েছে। এই পৃথিবীতে এটা একটা আজব কথা - ভাল শাশুড়ী পাওয়া। মা'টা যখন ব্যাথায় কোঁকাচ্ছে তখন তার শাশুড়ী তার দু'হাত মায়ের দু'হাতে ভরে রেখেছে আর নিজের গালটা আমার মায়ের গালে লেপ্টে দিয়ে অনেক্ষণ ধরে নামাজের রুকু স্টাইলে উবু হয়ে আছে।

রাত সাড়ে দশটা। সিদ্ধান্ত হয়েছে আমি এমনিতে বের হব না। মা টাকে কাটা-ছেড়া করতে হবে। তাকে একটা চলন্ত বিছানায় শুইয়ে কাটা-ছেড়া কক্ষে নিয়ে যাওয়া হল। ঢোকার আগে দেখে এলাম দরজার বাহিরে দাদী-ফুপু-চাচা-বাপ সবাই অধীর আগ্রহে দাড়িয়ে আছে আমার আগমনের জন্য।

অল্প কিছুক্ষণ পরেই আমি সজোরে পুরো হাসপাতাল কাঁপিয়ে মায়ের পেট চিরে ডাকাতের মত সর্বোচ্চ শক্তিতে চিৎকার করে আমার জন্ম-ঘোষণা করলাম। সবাই শুনল আমি আ............................................ করে চিৎকার করলাম। আসলে আমি ডাকলাম মা.... আ...............।
[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×