somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১৩

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড় ভাই বাড়ীতে আসেন তিনদিন পর । মুখে লাজুক হাসি । দোকানে এলে আমি জিগাই , ভাইয়া কামডা কি ঠিক হৈল ? বড়ভাই বলেন ঠিক বেঠিক তুই আমি বিচার করার কে ? আল্লাহপাক তকদিরে যা লেইখা রাখছেন তাই হৈব । যা হৈতাছে সেডা নিয়াই শুকুর আলহামদুলিল্লাহ বৈলা থাক । কথাডা মন থাইকা আমি মাইনা নিতে পারতাছি না এখনো । সব আল্লার ইচ্ছার উপরেই হৈলে তাইলে আমি এত পরিশ্রম করি ক্যান ? আমি এত রক্ত ফানি করি ক্যান ? তয় বড় ভাইর মিজাজ দেইখা একটু ভালাই লাগে । আগে হৈলে ধমক দিয়া কৈতেন কথাগুলা । এখন মিনমিন কৈরা কন । রাগ উত্তাপ নাই তেমন একটা । ভালোই লাগে । একদিক দিয়া মনে হয় খুবেকটা খারাপও হয় নাই । দীর্ঘদিন ধৈর্য্য ধরছেন বেচারা । বড় ভাই আর ছুড মামার জন্ম কয়েকদিন পরপর । ছুড মামার দুই পুলা । বড়ডা কিলাস টুতে পড়ে । সময় নষ্ট না কৈরা হয়ত ভালোই হৈছে ।

বিয়ার আয়োজনে খরচের বাহার দেখে আমার একটু খারাপই লাগে । তয় বড় ভাই দরাজ দিলে দিতে থাকেন বৈলা নিজেরে বুঝাইয়া নিই । আত্নীয় বন্ধুবান্ধবের বাড়ী বাড়ী গিয়া বিয়ার দাওয়াত দিয়া আসি । ফেনী থাইকা চাইল ডাইল মসলাপাতি কিনা আনি । একটা গরুও কিনা ফালাই গেরাম থাইকা । আমার জীবনে দেখা আমাগো বাড়ীতে এইটা প্রথম উৎসব । শুনতে পাই এর আগেরডা হৈছিল বড় ভাইর মুসলমানির সময় । তারপর থাইকা উৎসব আয়োজনের মুরোদ আমাগো পরিবারে ছিল না । এইবারে তাই আত্নীয়রা আসতে থাকেন সবাই । অনুষ্ঠানের দুইদিন আগেই বাড়ী ভরে যায় লুকজনে । খালাত মামাত ফুফাত ভাইবোনেরা আসে । দোকান বন্ধ কৈরা দিয়া আমি আড্ডা মারি ওগো লগে । রাইতে শোয়ার জায়গা নাই কারো । মামি খালারা কুনোরকমে চাপাচাপি কৈরা শুইলেও আমাগো পুলাপানগো শুয়ার কুনো জায়গা নাই । চান্দের আলোতে আমরা উঠানে ডেকোরেটর এর চেয়ারে বৈসা আড্ডা দিই । এক দুস্তর বাড়ি থাইকা একটা টেপ নিয়া আইসা হিন্দী বাংলা গান ছাড়ি । আব্বা ঘুম থাইকা উইঠা শুরু করেন বকাবকি । এইসব বেশরিয়তি বেদাতি কাজকারবার তিনি সহ্য করবেন না । আমার একটু চ্যাত আগে থাইকাই ছিল । আমিও নাছোড়বান্দা হৈয়া যাই । আব্বা কাঁথা-বালিশ নিয়া মসজিদে চৈলা যাইতে চান । এইসব বন্ধ না হৈলে তিনি বিয়াতে নাই । আম্মা বকাবকি করেন আমারে , আব্বারেও বুঝানের চেষ্টা করেন । ওরা পুলাপান মানুষ শহর বন্দরে থাকে ওগো লগে এত খুঁটিনাটি টোকাইলেতো চলবো না । বিয়াতে পুলাপাইন একটু আনন্দ করবো । একটু চুপ কৈরা থাকেন না । বুঝানো যায়না আব্বারে । আমিও কুনো ছাড় দিই না । খালাতো মামাতো ভাইগো কথায়ও না । একটু পাওয়ার অনুভব করি মনে । আব্বা এখন নিজেই চৈলা যান বাইরে । আগে হৈলে আমারে বাইর কৈরা দিতেন ঘাড় ধাক্কা দিয়া । পরদিন ফজরের সময় অবশ্য আমার যাইতেই হয় । মসজিদে গিয়া আব্বার কাছে মাফ চাইয়া বুঝাইয়া নিয়া আসি তারে । আম্মা ফুফুগো যন্ত্র‌ণায় পারলাম না জিদ ধৈরা রাখতে । তবে পুরাপুরি যে কিছু করতে পারি নাই তাও না । অন্তত আমার অবস্থানতো বুঝানো গেছে তারে । আমিও যে ফালাইয়া দেয়ার মত প্রতিপক্ষ না তাতো বুঝছে লুকে ।

মামাতো বৈন লাকি শহরে ইশকুলে পড়ে । মেট্রিক পরীক্ষা দিছে এইবছর । রেজাল্ট এখনো বাইর হয় নাই । আমি যেইকথাই কৈ লাকি হাসতে হাসতে লুটাইয়া পড়ে । আমার ভাল্লাগে দেখতে । আমিও ইচ্ছা কৈরা হাসির কথা বানাইয়া বানাইয়া কই । সোজা কথারে বেঁকা কৈরা কৌতুক কৈরা কই । বিয়ার আগেরদিন রাইতে আমার মনে একটু কুচিন্তা আসে । কিন্তু সাহস হয় না । শহরের মাইয়া । শেষে কুন বিপদে ফালায় । রাইতের দুইটা তিনটার দিকে চাইর পাঁচ মামাত খালাত ভাইবোন মিলা রেললাইনে যাই হাওয়া খাইতে । চান্দের আলোতে রেললাইনডারে আরো সুন্দর লাগে । আমার মনে কুচিন্তা ঢুইকা যাওনে অত মনোযোগ থাকে না চাইরপাশের সুন্দর দৃশ্যের দিকে । বন্ধুবান্ধবগো কাছে বিয়ার রাইতের অনেক ডেয়ারিং আকামের কাহিনী শুনছি । কিন্তু আমার খালি ডর লাগে । কথায় বার্তায় আমি লাকির কাছে ঘেঁষতে চাই । খেয়াল করে কি করে না বুঝি না । লাকি খালি হাসতে হাসতে লুটাইয়া পড়ে । হঠাৎ আমার খালেদার কথা মনে হয় । জীবনে ঐ হাসি আরেকবার দেখলে আমি মইরাই যামু । দরকার নাই আমার ইচ্ছা কৈরা লাত্থি খাওনের । ডাকতরের ঔষধ ফালাইয়া দিছি । আর তাছাড়াও গেরামের মাইয়াগোরে নাহয় টুকটাক বুঝি । শহরের মাইয়ারা আমার কাছে পুরা নতুন । হয়ত হাসাহাসি করতাছে ঠিকই কিন্তু পরে এমন কিছু কৈরা বইব আমার গলায় দড়ি দেওন ছাড়া কুনো উপায় থাকবো না । খালেদার বেঁকা হাসির কতা মনে করতে করতে তাই আমি দইমা যাই । লাকি বারবার জিগায় চুপ মাইরা গেলেন ক্যান ভাইয়া ? আমি মজার কথা কওনের চেষ্টা করি । পারি না । কিছুক্ষণ পর আবার চুপ মাইরা যাই ।

বিয়ার পর বাড়ীডা খালি হৈয়া যায় হঠাৎ কৈরাই । একই দিনে মামা খালারা সব চৈলা যান । কান্দন চৈলা আসে আমার । কয়েকদিনে অনেক মজা করছি । একডা মায়া পইড়া গ্যাছে সবার উপরে । এত বড় হৈয়াও তাই কানতে শরম করি না । লাকি বারবার কৈরা বৈলা যায় , আমাগো বাসায় কিন্তু যাইয়েন । আইচ্ছা যামু জবাব দিই । কুচিন্তা থাকেনা মনে । নিজের উপর একটু ভালো লাগে । নফসের উপর মায়ার জয় হৈছে । কুনোরকম অন্য উদ্দেশ্য ছাড়াই লাকির চৈলা যাওয়াতে খারাপ লাগে আমার । খালাতো ভাইবোনডির চৈলা যাওয়াতে খারাপ লাগে । আম্মা স্বান্তনা দেন আমারে ।

নতুন ভাবীর পর্দার বহরের কারণে তার চেহারাই দেখি আমি দুই সপ্তাহ পরে । আমাগো অনেক লুকের ঘর । অনেকডি ভাইবোন । পর্দা করতে গেলে সারাদিন ঘরের মইধ্যে বুরখা পইড়া বৈসা থাকতে হৈব । আম্মার বয়সতো কম না । তাই ঘোমটা খুইলা ঘরের কাজে হাত লাগান ভাবী কয়েক দিনের মইধ্যেই । ফর্সা একটা রোগাপাতলা মেয়ে । বাইশ তেইশের মত বয়স । আমারেও তাই ভাইয়া বৈলা ডাকেন । কিন্তু দুশ্চিন্তা লাগে আমার । ভাবীরে সুস্থ্য মনে হয় না । কিছু একটা রোগ আছে মনে হয় । ভাবীর পরিবার নিয়া তেমন বেশি কিছু জানি না । আব্বা একাই সবকিছু ঠিক করছেন । বিয়ার অনুষ্ঠানের দিনে একবার মাত্র গেছি ঐ বাড়ি । এক্কেবারে বিলইন্যা বডারের কাছে । ছাগলনাইয়া থাইকাও পরায় একঘন্টার পথ । কেমনে জানমু কি অবস্থা । খোঁজ নিতে নিতে খবর পাই । ভাবীর কলমা পড়ানো হৈছে যে বাড়ীতে সেইটা উনার ফুফুর বাড়ী । খোঁজ নিয়া যা জানি তাতে মিজাজ আমার তিরিক্ষি হৈয়া যায় । এই মেয়ের বিয়া হৈছিল আরেকবার । তিনমাস ঘরও করছে । রাগে ইচ্ছা করে মাথার চুল টাইনা ছিঁড়ি । আব্বার কাছে কৈলে সেই একই জবাব । আল্লাহর শোকর কর । আমি এখনো মৈরা যাই নাই । যদ্দিন আমি বাঁইচা আছি আমার কথার উপরে কথা কবি না । শোকর আলহামদুলিল্লাহ বৈলা পইড়া থাক । বড় ভাইর কাছে বৈলাও কুনো গুরুত্ব পাই না । আল্লাহপাক যা করেন ভালোর জন্য করেন । আল্লাহ নিশ্চয়ই এর মইধ্যে কুনো খায়ের লুকাইয়া রাখছেন । সেইটা নিয়া প্রশ্ন করা মাখলুকাতের কাম না ।

বিয়ার ঝামেলায় ট্যাকা পইসার হিসাবের কথা ভুইলাই গেছিলাম । য্যামনে খরচ করছি এখনতো হিসাব মিলাইতে ঝামেলা হৈয়া যাইব । তয় অত দুশ্চিন্তা লাগে না আমার এইটা নিয়া । ছুডকালে বাজারে থাইকা আইসা আম্মার কাছে হিসাব দিছি কত ।

আলু কিনছি দশ ট্যাকার, আলুওয়ালারে দিছি দশ ট্যাকা । এই গেল দশ দশ বিশ ট্যাকা ।

--------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১২
Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১১



একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×