somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুক্তির ফ্যালাসি, কুযুক্তি বা নষ্টামিসমূহ-৪

১০ ই মে, ২০০৯ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩
৯ : আপিল টু অথরিটি (সাহেব কহিছেন, চমৎকার সে হতেই হবে) :

ঈশ্বর আছেন, কারন মহাবিজ্ঞানী আইনিসটাইনও ঈশ্বরের পক্ষে বলে গেছেন । এই জাতীয় কুযুক্তি-গুলাকে বলা যায় আপিল টু অথরিটি ফ্যালাসি । ঈশ্বরের অস্তিত্ত অনস্তিত্ত নিয়ে , একজন সাধারন মানুষের কথার চাইতে আইনিসটাইনের কথার বেশী কোনো মূল্যই নেই । তা তিনি যত বড় বিজ্ঞানীই হোন । কারন তিনি সেই ক্ষেত্রের বিজ্ঞানী নন । কিন্তু আইনিসটাইন যদি ফোটনের ধর্ম নিয়ে কোনো কথা বলে থাকেন, সেটিকে খুব বেশী না ঘাটিয়েও সত্য বলে মেনে নেয়ার একটু সুযোগ থাকে । কারন তিনি সেই ফিল্ডের বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ।

অবশ্য এই ক্ষেত্তে আরেকটি কুযুক্তি লক্ষ্যনীয় । আইনিসটাইন না হয় ঈশ্বরের অস্তিত্ত ফিল্ডের বিজ্ঞানী নন, কিন্তু অনেক বড় ধর্মতাত্বিক, এছলামি চিন্তাবিশারদরা যেহেতু বলছেন, তাদের কথার তো মূল্য থাকবে এ ক্ষেত্রে ।

না, তাদের কথারও মূল্য নেই । কারন অথরিটি বা কথার মূল্য প্রতিষ্ঠিত হয় পরিসংখ্যানিক উপাত্তের মাধ্যমে । একজন বড় বিজ্ঞানী বা গবেষক দীর্ঘ সময় ধরে সঠিক স্বিদ্ধান্ত দেয়ার রেকর্ড করার পরেই, পরবর্তিতে তার একটি স্বিদ্ধান্তকে একজন সাধারন মানুষের স্বিদ্ধান্তের চাইতে বেশী গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় ।

ধর্মতাত্বিক, বা এছলামি চিন্তাবিশারদদের ব্যাপারটা সেরকম নয় । তারা আজ পর্যন্ত একটি ক্ষেত্রেও ঈশ্বরের অস্তিত্তের পক্ষে সন্তোষজনক উপাত্ত নিয়ে আসতে পারে নাই । অর্থাৎ তাদের গবেষণার শাখাটি এখনও একটি পরিশীলিত জ্ঞানের শাখা বলে স্বীকৃতি পাবার যোগ্য নয় । আগে তাদের গবেষণা ক্ষেত্রটি ফলাফল উৎপাদন করে, গ্রহনযোগ্য হতে হবে, তারপর তাদের অথরিটি । আর ফলাফল হতে হবে হার্ডকোর । কোনো হাদুমপাদুম জাতীয় , মনে করি একটি বেহেশতে ১০০ টা হুর আছে জাতীয় ফলাফল নয় । সিরিয়াস আলোচনায় ব্যাবহারযোগ্য, পুনরাবৃতিযোগ্য ফলাফল ।

শ্রোতার তুলনায় খুবই উচ্চস্তরের একজনের কথা বলে, শ্রোতার বিহ্বলতার সুযোগ নিয়ে, নিজ যুক্তি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা । মডারেট, মডার্ন মোছলেমদের নিজ বিশ্বাসের, র‌্যাশনালাইযেশন করতে দেখা যায় এই যুক্তি দিয়ে ।

মাইকেল জ্যাকসন এছলাম গ্রহন করছে, অতএব এছলাম সত্য ধর্ম । খবরটি সত্য ধরে নেয়ার পরেও, মাইকেল জ্যাকসনের বরং এছলাম সম্পর্কে সাধারন মোছলেমদের চাইতেও কম জানার কথা । কম জেনে একজন একটা কাজ করেছে, এটাতে সেই কাজটার বৈধতা কোত্থকে আসে । সে বড় গায়ক ঐখান থেকে ?

১০ : নো ট্রু স্কটসম্যান (তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম)

এই কুযুক্তিটি সব ধর্মের লোকজনদের ব্যাবহার করতে দেখা যায় । বিশেষ করে কেরেস্তান এবং মোছলেমদের । কেরেস্তানদের ক্রুসেডের রক্তপাত ও নৃসংশতা নিয়ে আঙুল তোলা হলে তারা বলে, ঐ কেরেস্তানগুলা সত্যিকারের জেসাসের শিক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত কেরেস্তান ছিলো না । এইভাবে করতে করতে শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, সত্যিকারে কেরেস্তান কেউ না, কেউ ছিলও না । তাইলে কেরেস্তান জীবন মানে যে ভালো জেবন এই যুক্তির ভিত্তি কি?

আবার মোছলেমদের যুক্তি এছলামি শাসন ব্যাবস্থা খুবই উন্নত শাসন ব্যাবস্থা , হেনতেন এইসব । যখন বলা হয়, কই এছলামি দেশগুলাতে তো শান্তি নাই, মানবাধিকার লংঘন, দারিদ্র, দুর্নীতি এগুলা এছলামিক দেশগুলাতেই তো বেশী , তখন বলে কুনো দেশেই সত্যিকারের এছলামিক শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত নাই বইলাই এই ব্যাবস্থা ।

কবে কোথায় সত্যিকারে এছলামিক শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছেল ? খুলাফে রাশেদ এর যুগে ছিল । বকর, ওমর, ওছমান আলীর যুগে । কিন্তু ওদের যুগেও তো ব্যাপক অশান্তি ছিল । বকরের আড়াই বছর গেল নিজের দেশের লুকের সাথে যুদ্ধ কর্তে কর্তেই, ওমরের দিন গেল বাইরের দেশে যুদ্ধ কর্তে কর্তে শেষে সে মারাই গেল আততায়ীর হাতে, ওছমান মারা গেল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে গনপিটুনিতে , আলি খুন হইল কুফার মসজিদে, তাও রাজনৈতিক মোছলেম প্রতিপক্ষের হাতে যে প্রতিপক্ষ নিজেও মোহাম্মদের ছাহাবা । এইগুলা তো শান্তির নমূনা না ।

তখন পাল্টা যুক্তি আসে, ভাইরে এইগুলা তো মাইনষের ব্যার্থতা এইগুলার জন্য এছলামরে দুষ দিয়া তো লাভ নাই ।

ঠিক এইখানেই আবার স্ট্র ম্যান ফ্যালাসি শুরু হইল । মূল আলোচনাই শুরু হইল কিন্তু এছলামি শাসনব্যাবস্থার পক্ষে-বিপক্ষে , কিন্তু ঐখান থেকে ডাইভার্ট করে এছলামের সত্যতা-অসত্যতা সংক্রান্ত কুযুক্তিতে নিয়ে গেল ।

এই নো ট্রু স্কটসম্যান ফ্যালাসি কে ঘোড়ার ডিম ফ্যালাসি বলা যায় । ঘোড়ার ডিমের মতই, সত্যিকারের কেরেস্তান, সত্যিকারের এছলামিক শাসনব্যাবস্থা, সত্যিকারের মোছলেম এই জিনিসগুলা কেউ কখনো দেখে নাই, শোনে নাই । কিন্তু এইগুলার কাল্পনিক স্যাম্পল দেখিয়ে দেখিয়ে ধর্মের প্যাকেজগুলা বিক্রী করা হচ্ছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪৭
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×