somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগন্তুক

২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মাহী গা ঘেঁষে বলল , ‘ভাইয়া , একটা গল্প বল না ; ভূতের গল্প ?’

আসলে গল্প টল্প ইদানিং তেমন আর বলতে পারি না । তার উপর আবার ভুতের গল্প ! বললাম , ‘অন্য কিছুর গল্প বলি ?’

কিন্তু ও রাজী হয় না । ছোট ভাইয়ের আবদার রাখতেই হয় ।




‘সেদিন রাত অনেক হয়েছে । ঘুম আসছিল না । তাই ভাবলাম একটু পিসিতে বসি । কিন্তু কপাল খারাপ ! পিসি অন করতে না করতেই কারেন্ট চলে গেল । আর কারেন্ট যাওয়া মানেই তো অন্তত একঘন্টা ।


কিছুক্ষন বসেই থাকলাম পিসির সামনে । ইউপিএস টা আসলেই লাগবে । উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম । আমার আবার বারান্দায় বেশ বাতাস । চারিদিকে কি জোছনা – আকাশে বেশ বড় একটা চাঁদ ।


হঠাৎ নীচে কাল একটা কুকুর দেখে বুকটা ধক করে উঠল । মনে হল সোজা বারান্দায় আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । ভেতরে চলে যাব কি না ভাবছি , এসময় , যেন আমার অস্বস্তি বাড়াবার জন্যেই , চাঁদটাকে ঢেকে দিল এক টুকরো মেঘ ।


চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসল । থমথমে পরিবেশ । তার উপর কুকুর টার কথা ভেবে একটু ভয়-ই লাগছিল – এমন সময় কারেন্ট চলে আসল ।


একটু অবাক হলাম , কারেন্ট যাওয়া তো বিশ মিনিট-ও হয় নি ! তা যাক গিয়ে , আগে আসলে তো আমার-ই ভাল । এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকলাম এবং আবারো একটা ধাক্কা খেলাম ।


ঘরে লাইট –ফ্যান চলছে – সুইচ অন করাই ছিল । কিন্তু পিসিও অন এবং মনে হল কার্টুন চলছে । সামনে গিয়ে দেখি একটা বাচ্চা মেয়ে – Tom & Jerry দেখছে ।


প্রথমত, বাসায় কোন বাচ্চা মেয়ে নেই , এই রাত দেড়টাতে আসার কোন প্রশ্নই আসে না ; আর কম্পিউটার রিসেট করা হয়েছে গতকাল, মেমরিতে কোন কার্টুন থাকার কথা না ।


বাচ্চাটার পাশে গিয়ে বসলাম । ধবধবে সাদা একটা বাচ্চা , মুঠি বন্ধ করে হাত দুটো কোলের উপর রেখেছে । চোখ দুটো স্ক্রিনে স্থির ।

কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ।

‘ তোমার নাম কি ? ’

বলতে গিয়ে বুঝলাম , গলাটা শুকিয়ে এসেছে ।

কোন প্রতিক্রিয়া নেই । হাতগুলো ধরতে গিয়ে বিস্ময়ে সরে আসলাম । কি প্রচন্ড ঠান্ডা হাত !


এবার আমার দিকে ঘুরে তাকাল । চোখের দৃষ্টি দেখে ঠান্ডা একটা স্রোত পিঠের ভেতর দিয়ে নেমে গেল । একি কোন শিশুর চোখ ! একেবার ভাবলেশহীন – কালো চোখের তারা গুলো যেন জ্বলছে । বলার মত কিছু আবার খুঁজে পেলাম না ।

‘কিছু খাবে ?’

আবার আমার দিকে ফিরল , এবং আমি আবার শিউরে উঠলাম । তবে এবার মাথা নেড়ে বোঝাল , হ্যাঁ ।


আমি উঠে রান্না ঘরে গেলাম , ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে গরম করতে শুরু করলাম । আমার যুক্তিবাদী মন আমার সামনে অনেক গুলো প্রশ্ন তুলে ধরছে , যার কোনটার উওর-ই আমার জানা নেই । এত শীতল হাত – সেই দৃষ্টি – আবার ওর সামনে যাবার ইচ্ছা বা সাহস দুটোর অভাব-ই বোধ করছি ।


কৌতুহলের কাছে হার মানল ভয় । গ্লাসে দুধটুকু নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হলাম এবং আবার চারদিকে ঢাকা পরল অন্ধকারে ।
কোন মতে আধারে হাতরে হাতরে মোম বাতি ধরালাম ।


একহাতে মোম আর একহাতে দুধের গ্লাস নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি চেয়ার ফাকা ।


সবগুলো রুম খুঁজে দেখলাম , কোথাও নেই । বাসার দরজা ভেতর থেকে আটকানো ।


আরো বিশ মিনিট পরে কারেন্ট আসল । আসলে প্রথম বার কারেন্ট যাওয়ার পরে থেকে এতক্ষনে একঘন্টা হল । তাহলে কি সব হ্যালুসিনেশান ? কারেন্ট কি আসেনি ? বাচ্চা মেয়েটা কি শুধুই কল্পনা ?


পিসির সামনে গিয়ে বসি । কি মনে হতে মনিটরের উপর হাত দিলাম । গরম !

তাহলে কি আসলেই কেউ এসে ছিল ?

‘কেউ’ না ‘কিছু’ ? ’




আমি থামতেই মাহী বলল , ‘তখন আমরা কোথায় ছিলাম ? বাসায় তুমি একা ছিলে ?’

‘বাসার সবাই নানুকে দেখতে রাজশাহী গিয়েছিল , আমার পরীক্ষা বলে বাসাতে একাই ছিলাম । ’

‘আর কোন্ দিন দেখনি ওকে ?’

‘না’

এবার আরেকটু কাছে এসে বসল মাহী । ‘ভাইয়া, ওটা কি ভুত ছিল ?’

পুরোনো প্রশ্ন গুলো ফিরে এল আবার ।

আসলে কি ছিল সেটা ? ভূত , আত্মা , না আমার কল্পনা ?

আসলেই কি ভূত বলে কিছু আছে ?


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×