somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা এবং আমার ফ্যান্টাসি

০২ রা মে, ২০১০ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন রাতে রেস্ট হাউজের ছাদে তর্ক জমে উঠল । বিষয়ঃ অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা ।

সবার পরিবারে কিছু না কিছু ঘটেছে ; সেগুলো নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল । ভূত বা অশরিরী আত্মা অথবা অন্য যে নামেই বলি না কেন – Paranormal কিছুর অস্তিত্বে সবচেয়ে বিশ্বাস বেশি তন্ময়ের । তন্ময় বড় হয়েছে কক্সবাজার শহরের এক পাশে – মফস্বল গুলোতে এধরনের ঘটনা নিয়ে অনেক গল্প থাকে । সব চাইতে বড় ব্যাপার , আমদের মাঝে ওর-ই কেবল সরাসরি ‘অতিপ্রাকৃতিক’ অভিজ্ঞতা আছে ।

আর বিতর্কের অন্যপ্রান্তে ছিলাম আমি ; ঘটনা থেকে অনেক দূরে থেকেও আমার যুক্তিবাদী মন ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছিল ।



কেস স্টাডি ১ ঃ


ঘটনা তন্ময়ের । ওর পাশের তিন তলা বাড়িতেতে মামারা থাকতেন । সে বাড়ির দোতলাতে ওর এক মামী গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন । সেই থেকে বাড়ির সবাই তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে দেখতে পান ।


সেদিন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল । তন্ময় কোন কাজে মামাদের তিন তলাতে যাচ্ছিল । দোতলাতে উঠেই ও একটু থমকে দাঁড়ালো । জায়গাটা ছিল অন্ধকার ; এবং ওর ভাষাতে ‘অন্য’ কিছুর অস্তিত্ব সে অনুভব করছে । এর পরেই ঘটল ঘটনা টাঃ


কেউ একজন নূপুর পরে করিডর দিয়ে হেঁটে আসছে – নূপুরের শব্দ ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসছে , কিন্তু তন্ময় কাউকে দেখতে পাচ্ছে না । শব্দটা ঠিক ওর সামনে থেমে গেল – চারদিক ঠান্ডা – ও হঠাৎ নিজেকে ফিরে পেয়ে ছুটে তিন তলাতে মামীদের ঘরে চলে গেল ।
এর পরে থেকে ও সন্ধ্যার পরে সেই দোতলা মাড়ায় নি ।



আমার ব্যাখ্যাঃ

কারো সরাসরি অভিজ্ঞতা কে ব্যাখ্যা করা কঠিন । ওর কাজিনরা ওই ঘরে এক মহিলাকে দাঁড়িয়ে পর্যন্ত থাকতে দেখেছে । তার পরে ওর এই অভিজ্ঞতা – ওর বিশ্বাস ভাঙ্গানো কঠিন ।

তবে আমার ব্যাখ্যাটা আমি দিয়েছি । আর কিছু না , ও স্ট্রেসড ছিল , ও জানে এখানে নূপুর পরে একজন মারা গিয়েছে – অপমৃত্যু । ওর মন ওকে তাই দেখিয়েছে যা ও দেখতে চেয়েছে ।

‘আর আমার আত্মীয়রা যে দেখেছে সেটা ?’

এই প্রশ্নের জবাব আমার জন্যে দেওয়া কঠিন । আমি বলি , ‘তোর প্রথমে যেমন অডিটরি হ্যালুসিনেশন হয়েছে , ওদের ধীরে ধীরে সেটা ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশানে পরিণত হয়েছে ।’

তর্ক না করলেও অবিশ্বাসী দৃষ্টি নিয়ে তন্ময় তাকিয়ে থাকে । নিজের জীবনের অমন অভিজ্ঞতাকে আমি নিজেও নাকচ করে দিতে পারব কি না, জানি না । ওকে দোষ দিই না ।



কেস স্টাডি ২ ঃ

আবারো তন্ময়ের গল্প । এবার অবশ্য অভিজ্ঞতা ওর খালার ।


তখন ওর খালার বয়েস ১৭-১৮ । ওর খালারা তখন গ্রামে থাকতেন । একদিন রাতে , প্রায় ১.৩০টার দিকে ওর খালা প্রকৃতির ডাকে বাইরে বের হল ; এ সময় সাধারণত ওর নানুও সাথে যান ; কিন্তু সেরাতে ওর খালা একাই বের হলেন ।


প্রায় দেড়-দু ঘন্টা পরে নানু দেখলেন খালা এখনো ফিরে আসেন নি । উনি তন্ময়ের মামাকে নিয়ে বের হলেন ।


খালাকে পাওয়া গেল একটু জংলার মাঝে , কারো সাথে কথা বলছেন তিনি ।
সেই শুরু । আজ বোধ হয় দশ বছর হল , এখনো তিনি কথা বলেন ; দুই জনের সাথে । ওদের নামও আছে ; সারাক্ষন তাদের সাথে কথা বলে সময় কাটান খালা । আপনি গেলে উনি আপনার সাথেও তাদের পরিচয় করিয়ে দিবেন ।


আমার ব্যাখ্যাঃ


এই ব্যাখ্যাটা দেওয়া তুলনামূলক ভাবে সহজ ; সিজোফ্রেনিয়া নামের সাথে সবাই কম বেশি পরিচিত । তবে যেহেতু ওনাকে কখনোই কোন সাইক্রিয়াটিস্ট দেখানো হয় নি – আমার ধারনাকে যাচাই করার সুযোগটা তাই থাকছে না ।





কেস স্টাডি ৩ ঃ


এই ঘটনাটা সুমনের কাজিনের ।


বাসায় ফিরতে রাত হয়ে গেছে । হঠাৎ তুমুল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল । উপায় না দেখে সুমনের কাজিন , সজিব একটা গাছের নিচে আশ্রয় নিল ।


ঝড় যেন বেড়েই চলেছে । হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠছে ক্ষনিকের জন্যে । উপরের দিকে তাকাল এবং এমনি এক বিদ্যুতের ঝলকে চোখ পড়ল লোকটাকে ।


অনেক বয়স্ক , চেহারাটা বিভৎস – সজিব এটুকুই বলতে পেরেছিল পরে । গাছের উপর থেকে ওর নাম ধরে ডাক ছিল ; এক পর্যায়ে হাত বাড়িয়ে দেয় লোকটি ধরার জন্যে । ঝড় মাথায় করে ছুটতে থাকে সজিব । এবং বাসায় কোন মতে পৌছেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ।


পূর্ণ স্বাভাবিক হতে প্রায় এক মাস সময় লাগে ওর ।


আমার ব্যাখ্যাঃ


ঝড়ের রাত আলো-আধারির খেলা । মানুষের মন অনেক শক্তিশালী । প্রথম কেস এর মত এখানেও একই কথা বলা যায় । গাছের শাখা-প্রশাখা , ডাল-পালা মিলে একটা আকৃতি হয়ত ঠিক-ই দেখেছে ; কিন্তু বাকিটা শ্রান্ত মন তৈরি করে দিয়েছে ।



শেষ কেসঃ


এটা আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা । অবশ্য কোন অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা নয় … তবে এই ব্যাপারটা হয়ত উপরের কেস গুলোতে আমার ব্যাখ্যাকে শক্তিশালী করবে ।


তখন ক্লাস এইট কি নাইনে পড়ি । ছোট বেলা থেকেই সব কিছু নিয়ে চিন্তা করতে ভাল লাগত । তার উপর অনেক বই পড়তাম । আসলে এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না আমার । চোখের সমস্যা (মাইওপিয়া) ধরতে এত সময় চলে গেছে , আউটডোর গেমসে সমবয়সীদের চাইতে আমি অনেক পেছনে । কম্পিউটার আর বই ছিল নিত্যসংগী ।


আর ছিল আমার ফ্যান্টাসী । সারাদিন ধরে নিজের বানানো জগৎগুলোতে ডুবে থাকতে ভালবাসতাম । ধীরে ধীরে আমার কল্পনার জগৎ বাস্তবকে গ্রাস করে ফেলতে থাকল ।



আমি আমার রুমে হাঁটতাম, ( এখনো হাটি) , আর আমার ফ্যন্টাসিগুলো নিয়ে ভাবতাম । সমস্যা হল তখন - যখন আমি বাস্তব আর কল্পনাকে এক করে ফেলতে শুরু করলাম ।

যেমন , হয়ত আমি হেঁটে যাচ্ছি ; পথে কারো সাথে দেখা হল – আমাকে কিছু বলল , আমিও জবাব দিলাম হাসিমুখে ।


একদিন আবিষ্কার করলাম , আমি এই ছোট আলোচনাগুলোতে – আমি মাঝে মাঝে উত্তর গুলো দিচ্ছি কল্পনার জগতেই – বাস্তবে আমি একটা কথাও বলিনি ।


সাথে সাথে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, no more fantasy . ফ্যান্টাসী গুলোকে ঝেড়ে ফেলতে কষ্ট হয়েছে অনেক , আসলে কখনোই সেগুলো সম্পূর্ণ ভাবে চলে যায় নি ; কিন্তু আমার সমস্যাটা থেকে বের হয়ে আসতে পেরছি অবশেষে ।


একটু ছাড় দিতে হয়েছে ।


যে আমি আগে সামান্য ছোট্ট ব্যাপারগুলোকেও বেশ গুছিয়ে বলতে পারতাম – সামান্য ঘটনাগুলো নিয়ে গল্প বানিয়ে ফেলতাম , সেটা এখন আর পারি না । যে আমি সেই এগার-বার বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস লিখে ফেলছিলাম , আজকে এখানে বসে সামান্য একটা পোস্ট করতে পারি না !


কিছু লিখতে চাই – সেটা ভেতরে আটকে যাওয়া যে ভীষণ কষ্ট !



মন্তব্যঃ
এ ধরনের অভিজ্ঞতা থাকতে পারে আপনার – অথবা আপনার কোন কাছের মানুষের । ‘অন্য কিছু’ তে বিশ্বাস থাকুক অথবা না থাকুক , ঘটনাগুলো নিয়ে কথা বলি । আর কিছু হোক বা না হোক, একটা ছোট খাট আড্ডা তো দেওয়া যাবে !


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১০ রাত ৯:৪৬
২৭টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×