somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজশাহীর গল্পঃ বিয়ের অনুষ্ঠান

২১ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভার্সিটি বন্ধ । কেন বন্ধ, সে নিয়ে আর কথা না বলাই ভাল । কবে খুলবে তারও কোন ঠিক ঠিকানা নেই । আবার ছোট ভাই দুটোরও বন্ধ । কাজিনের বিয়ে হবার জন্যে এর চাইতে উপযুক্ত সময় বোধ হয় আর হয় না । প্রায় তিন বছর পরে বাসার সবাই মিলে কোথাও যাচ্ছি । মজার ব্যাপার হল, শেষ বারও বিয়ের অনুষ্ঠানেই একসাথে সবাই বের হয়েছিলাম । সাত দিনের ভেতরে তিন তিনটা কাজিনের বিয়ে হয়েছিল সেবার ।


ভাইয়াকে দেখে একটু মায়া-ই হল । বেচারা ! বিয়ের আগে একজন মানুষ যে এত নার্ভাস হতে পারে , ভাইয়াকে দেখে জানলাম । তার উপরে চাচাতো ভাইদের মাঝে সেই বড় ; ‘বংশের বড় ছেলে’ বলে কথা ।


দাদু বাড়ি গ্রামের ভেতরে, রাজশাহীতে । তবে গ্রামটা একেবারে অজপাড়া গাঁ না, এমনকি ডিশও আছে অনেক বাড়িতে । যোগাযোগ ব্যবস্থা সবসময় ভাল । যদিও হাতে গুণে বলে দিতে পারব ঠিক কয়দিন দাদুবাড়িতে থেকেছি, তবুও যখনি এখানে পা রাখি , তখন বুঝতে পারি এই জায়গাটাকে কতটা ভালবাসি । আমার স্কুল ছিল ব্রাক্ষণবাডিয়াতে আর কলেজ, ভার্সিটি ঢাকাতে । যখন দূরে থাকি তখন কেন জানি এই আকর্ষনটা কখনোই অনুভব করি না ।


কিছু ভালবাসা বোধ হয় কাছে আসলে বোঝা যায় । আর কিছু ভালবাসা বোঝা যায় দূরে গেলে ।


বিয়ে হবে নাটোরে । শুরু থেকেই ঝামেলা সংগী হল । ‘বরবাহী’ মাইক্রোর সাথে ট্রাকের হালকা সংঘর্ষ ; এর পরে ট্রাকের ড্রাইভারের সাথে মাইক্রোগুলোর ড্রাইভারদের ‘সুমধুর’ আলাপন , বরের জন্যে বরাদ্দ শরবতে ঝালের পরিমান ‘দুঃখজনক’ভাবে ‘অস্বাভবিক’ বেশি [ তিনজন শ্যালিকার সবাই ভেবেছে , সে একাই মরিচের গুড়ো মিশিয়েছে ] , এর পরে আরো কিছু ‘ট্রেডিশনাল’ বিয়ে বাড়ি ঝামেলা মিটিয়ে বাড়ি ফেরা ।


আমার আরেক কাজিন কয়দিন হল বাইক কিনেছে । রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট হয়নি , ড্রাইভিং লাইসেন্সের তো প্রশ্নই আসে না । বিয়ের দিন অনেক ‘ভাব’ নিয়ে সে বাইক নিয়ে বের হয়েছে । ফেরার পথে সে আর তার এক ফ্রেন্ড একটু পরে রওনা হয় । এদিকে হাইওয়েতে মোবাইল কোর্ট – হঠাৎ সব বাইক আর মাইক্রো থামিয়ে কাগজ-পত্র চেক করা শুরু করেছে । ভাইয়াকে যে ফোন করে অন্যদিক দিয়ে আসতে বলব, সে উপায় ছিল না, বিয়ে বাড়িতেই ওর ফোনে চার্জ শেষ ।


অনেক দুশ্চিন্তা নিয়ে বাড়ি পৌছে দেখা গেল ও আমাদের আগেই এসে বসে আছে । হঠাৎ জটলা দেখে একটু সতর্ক হয়েছিল , এবং কিভাবে ‘হাইওয়ে পারস্যুয়েট’ খেলে সে বাড়ি পৌছিয়েছে সে কথা বড় গলাতে বলে বেড়াচ্ছে । [ তবে ওর কথা বিশ্বাস করবেন না , কারন প্রতি বারেই গল্পটা আগের চাইতে রোমাঞ্চকর হয়ে উঠছে । ]


আমার চাইতে ৫-৬ বছরের ছোট কাজিন গুলোও যখন আমাকে বাইকে ডাবলিং করতে বলে তখন আর সহ্য করতে পারলাম না । ওদের থেকে বড় বলে বড় দেখে একটা বাইক নিয়ে শুরু করলাম । ‘কাজতো খুব্বি সোজা’ ক্লাস নাইন পড়ুয়া আমার এক কাজিন, পাপ্পু, অতি উৎসাহে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে , ‘তুমি প্রথমে কিক করে স্টার্ট কর , এর পরে ক্লাচ চেপে গিয়ার দাও , এর পরে ধীরে ধীরে ক্লাচ ছাড় আর অ্যাক্সিলারেট কর । দেখবা ওটা একা একাই চলবে ।’ একটু থেমে টেনে টেনে বলল, ‘এক্কেবারে ই-জি ।’


সুপারি গাছে ধাক্কা খেয়ে ১টা মিরর ভেঙ্গে ক্ষান্ত দিলাম । তাও ভাল বাইকটা নিয়ে পুকুরে পড়িনি । পাপ্পু ভাগ্যিস হাসে নি । নইলে কয়টা দাত ফেলে দিতাম । ইজি ! হুঁহ !


বাড়িতে সবাই নতুন বউ নিয়ে খুব্বি ব্যস্ত । ততক্ষনে রাত বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে । এক ফাঁকে চুপ করে বের হয়ে এলাম । পুকুরপাড়ে বাঁশঝাড়ের পাশে ছোট্ট মাঠে শুয়ে আছি । জায়গাটা আমার খুব্বি প্রিয় । রাত আরেকটু ঘন হয়ে আসতেই চারদিকে ঝিঝি পোকার ডাক , আর জোনাকীদের মেলা । মাথার উপরে তারার বন্যা । আকাশের তারা গুলো এভাবে কাছে টানে কেন ! তারাগুলো গণতে গণতে সেই পুরানো প্রশ্নগুলো ফিরে আসল । কোথায় চলেছি আমরা ! আসলে জীবন থেকে কি চাই আমি ?


দূরে কেউ নাম ধরে ডাকছে । আমার অনুপস্থিতি চোখে পড়েছে ওদের । হয়ত নতুন আত্মীয়দের সাথে ঘটা করে পরিচয় করে দেওয়া হবে । উঠে দাঁড়ালাম । কিন্তু প্রশ্নগুলো ঘুরতে থাকল মনে ।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৪
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×