প্রথম পর্ব পড়ুন!!!
৫
ফাতেমা মহলের এক কোনে বসে ছিল।অন্যদের থেকে আলাদাভাবে।তার এমন কোন প্রত্যাশা নেই,যা তাকে হালকা করে ফেলবে।তার আশার মধ্যে এমন কোন 'হতাশা'ও নেই,যা তাকে চিন্তিত করে তুলবে।
হঠাৎ প্রসাদের এক কোন থেকে উচ্চস্বরে আওয়াজ এল।
এক আওয়াজ ছিল কষ্ট এবং শোকের,যে আমিরুল মু'মিনিন সুলাইমান বিন আব্দুল মালিক ইন্তেকাল করেছেন।" অন্য আওয়াজটি ছিল আনন্দ এবং খুশির, যে মুসলিম জাহানের নতুন খলিফা হলেন উমর ইবনে আব্দুল আযীয।
সংবাদ শুনে মুহূর্তের মধ্যে ফাতেমা মহলের মাঝখানে এসে উপস্থিত হল।
সবার দৃষ্টি এখন ফাতেমার দিকে।ফাতেমা এখন সবার চোখের মধ্যমণি।
কিছুক্ষণ আগে ফাতেমা ছিল খলিফার বোন মাত্র।আর ফাতেমা এখন খলিফার স্ত্রী, সম্রাজ্ঞী।
মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের স্ত্রী, কন্যারা নতুন সম্রাজ্ঞী ফাতেমাকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাতে লাগল।সবাই ফাতেমার চারপাশে ভীড় করছে।
৬
ফাতেমা তার প্রসাদে ফিরে এল।বিছানায় বসে সে তার অতীতকে স্মরণ করতে লাগল।অতীতের বিলাসময় জীবনের কথা তার মনে পড়ছে।আর ভবিষ্যত জীবন অতীতের চেয়েও ভাল হবে,এমনটাই তার প্রত্যাশা।
সে দিনের কথা তার খুবই মনে পড়ছে।যে দিন সে তার পিতার মহল থেকে তার স্বামী এবং চাচাতো ভাই উমর ইবনে আব্দুল আযীযের মহলে এসেছিল।
তার স্বামী ছিল গভর্নর। কিন্তু তার পিতার প্রসাদের চেয়েও তার স্বামীর প্রসাদ ছিল আরো বেশি আলিশান, জাঁকজমকপূর্ণ। খলিফার প্রসাদের চেয়েও বড়,তার স্বামীর প্রসাদ।
৭
ক্ষমতা এবং সৌখিনতার মধ্যে উমর ইবনে আব্দুল আযীয-ই ছিলেন উমাইয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাবান,সৌখিন।
ক্ষমতা এবং খিলাফতের ছায়ায়-ই তিনি প্রতিপালিত হয়েছেন।
যে কাপড় পরে তিনি মানুষের সঙ্গে মিশতেন,তার মূল্য ছিল তৎকালীন পাঁচ হাজার দেরহাম।তিনি যে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, তা একমাত্র তার জন্য-ই হিন্দুস্থান থেকে নিয়ে আসা হত।
তিনি যখন কোন রাস্তা অতিক্রম করতেন,তখন মানুষ তাঁকে না দেখেই তাঁর আতরের গ্রাণ শুঁকে বলে দিতে পারত যে,এই পথে উমর ইবনে আব্দুল আযীয গিয়েছেন।
গণমান্য ব্যক্তিরা ধুপিকে কাপড় ধোয়া বাবদ অতিরিক্ত অর্থ দিতেন,এ জন্য যে,তাদের কাপড়গুলো উমর ইবনে আব্দুল আযীযের কাপড় ধোয়া পানি দিয়ে ধুবে।
(কারণ,উমর ইবনে আব্দুল আযীযের কাপড়ে দামী সুঘন্ধী থাকত বেশি, যার কারণে তাঁর কাপড় ধোয়া পানিগুলোও সুগন্ধীতে পরিণত হত।)
যাতে করে উমরের কাপড় থেকে তাদের কাপড়ে সুগন্ধি লাগে।
উমরের চাল-চলন ছিল অন্যরকম।তাঁর হাঁটা ভিন্ন্য রকম হওয়ার কারণে মানুষ তাঁর হাঁটাকে "উমরিয়্যাহ" বলত।অর্থাৎ উমরি হাঁটা।
সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলেরা তাঁর হাঁটাকে খুব পছন্দ করত।সবাই তাঁর মত হাঁটার চেষ্টা করত।তাঁর মত হাঁটাকে ভালবাসত।
উচ্চবংশীয় যুবকের মত তিনি কাপড়কে খোলামেলা রেখে চলতেন।কোন সময় কাপড়ের কিছু অংশ যদি জুতা বা অন্যকিছুর সঙ্গে লেগে যেত,তাহলে সেটাকে ছিড়ে ফেলতেন।পুনরাই সেটাকে সেলাই করতেন না।অথচ সেই কাপড়ের দাম ছিল,তৎকালীন একহাজার দেরহাম।
কোন সময় তাঁর কাধ থেকে কাপড়ের টুকরা পড়ে যেত,সেগুলো তিনি আর তুলতেন না।পরে কেউ এসে তা নিয়ে যেত।
এগুলো স্মরণ করতে করতে ফাতেমা কল্পনার জগতে হারিয়ে গেল।
এমন সৌখিন জীবনে উমর ইবনে আব্দুল আযীয তাঁর স্ত্রী, তার জীবনসঙ্গী -কে 'সঙ্গী'করে নাই,এমন কল্পনাও করা যায় না।
তাদের দুজনের পবিত্র ভালবাসা ছিল অনেক গভীরে।অনেক শক্তিশালী।
উমরের ইশারা ফাতিমার কাছে "হকুমে"র মত।ফাতেমার চাহিদা পূরণ উমরের কাছে ফরজ-আবশ্যকীয়'র মত ছিল।
উমর পছন্দ করে না,এমন কাজ ফাতিমা কোনদিন করে নাই।উমর ইবনে আব্দুল আযীয কোন সময় ফাতেমার চাওয়া-কে ফেরত দিতেন না।
চ ল বে.....