somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং এবং সর্বশক্তিমান-সর্বজ্ঞানীর জগৎ-পর্ব ৩

০১ লা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং তার গ্রান্ড ডিজাইন বইতে উল্লেখ করেছেন “মহাবিশ্ব শুরু করার আগে কি হয়েছিলো? এ প্রশ্নটাই অর্থহীন হয়ে পড়ে। কারন সেটা দক্ষিন মেরুর দক্ষিনে কি আছে? এই প্রশ্নের সমতুল্য। মহাবিশ্নের কোন সীমানা নেই-প্রকৃতির যে আইন দক্ষিণ মেরুতে কাজ করে সেটা অন্য যে কোন জায়গাতে কাজ করবে। একইভাবে কোয়ান্টাম তত্ত্বে মহাবিশ্বের সুচনার আগে কি ঘটেছিলো? এই প্রশ্ন অর্থহীন হয়ে পড়ে। ইতিহাস যে সীমাহীন একটা বদ্ধ তল হতে পারে এই ধারণাকে বলে সীমাহীনতার শর্ত। শত শত বছর ধরে, এমনকি এরিষ্টটলও বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্ব চিরকাল ঠিকই এমন ছিলো, যাতে কিভাবে এর শুরু হলো এই প্রশ্ন এড়ানো যায়। অন্যেরা বিশ্বাস করতো মহাবিশ্বের একটা সূচনা ছিলো এবং এই সূচনাকে তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের বড় নিদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করতো। কিন্তু সময়, স্থানের মতো আচরন করতে পারে এই ধারনা আরেকটি বিকল্প উপস্থাপন করেছে। যেটা মহাবিশ্বের সুচনা আছে কি নেই সেই চিরাচারিত বিতর্কের সমাপ্তি ঘটায়, এবং এটা নির্দেশ করে যে মহাবিশ্বের সুচনা ঘটেছে বৈজ্ঞানিক সুত্র নেই। অথাৎ মহাবিশ্বের সুচনাতে কোনো ইশ্বরের সবকিছুকে ঠিকঠাক মতো শুরু করিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই।”

ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং এর বক্তব্যে তিনি বোঝাতে চাচ্ছেন নিয়মই সব কিছু ঠিকঠিক মতো চালিয়ে যাচ্ছে। অতএব শুরু তে ইশ্বর নামক কাউকে মহাবিশ্ব শুরু করিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই। পাঠক আসলে ইদানিং আধুনিক বিজ্ঞানীরা কখন কোন কথা বলছে বোঝা দায়! একজন কি বলছে থোড়াই তোয়াক্কা না করে আরেকজন আরেক কথা বলছে! কখন কোন বিজ্ঞানী কোন কথা বলছে? অথচ স্বনামধন্য বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আন্দ্রে লিন্ডে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন করেছেন ইনফ্লেশন সবদিকে সমভাবে একই সঙ্গে এতসুক্ষভাবে সম্প্রসারিত হলো কি করে? তিনি জোর দিয়ে বলেন একটি আদেশ এর প্রয়োজন ছিলো যে আদেশ বা কমান্ডের কারনেই মহাবিশ্ব এত সুক্ষভাবে বেড়ে উঠতে পারে। আন্দ্রে লিন্ডের ভাষায়-Why is the universe so big? If one takes a universe of a typical initial size given by the Planck length and a typical initial density equal to the Planck density, then, using the standard big bang theory, one can calculate how many elementary particles such a universe might encompass. The answer is rather unexpected: the entire universe should only be large enough to accommodate just one elementary particle or at most 10 of them. It would be unable to house even a single reader of Scientific American, who consists of about 1029 elementary particles. Obviously, something is wrong with this theory. The fourth problem deals with the timing of the expansion. In its standard form, the big bang theory assumes that all parts of the universe began expanding simultaneously. But how could all the different parts of the universe synchronize the beginning of their expansion? Who gave the command? লক্ষ্য করুন ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং যেখানে বলছেন শুরু করিয়ে দেওয়ার জন্য কাউকে দরকার নেই বলছেন। অথচ আন্দ্রে লিন্ডের ভাষায় একটি আদেশের দরকার ছিলো। মহাবিশ্ব শুরুর সময় অথাৎ বিগব্যাংগ এর সময় এমন কোন আদেশদাতার প্রয়োজন ছিলো যার কমান্ড মহাবিশ্ব শুরুর গতিটি নিখুত ও নির্ভূল করে তোলে। এই গতিটি এতটাই নিখুত ও এতটাই সুক্ষ ছিলো যে একজন পরিকল্পনাকারীর গানিতিক মাপ না থাকলে এই মহাবিশ্ব কোনভাবেই সৃষ্টি হতে পারতো না। তাহলে প্রিয় পাঠক আপনিই বলুন স্টিফেন ডব্লিউ এর এই বক্তব্যটি কতটুকু গ্রহনযোগ্য?

মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের এই নিখুত গানিতিক বিষয়টি পর্যলোকন করে অনেকেই চমকে ওঠেন! বিশিষ্ট পর্দাথবিজ্ঞানী পল ডেভিস বিগব্যাংগের পর মহাবিশ্ব যে গতিতে সম্পসারিত হচ্ছে তা নিয়ে চমকপ্রদ এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মতে সম্প্রসারনের গতিটি ১০০% পারফেক্ট ছিলো। তার হিসাব মতে সেই গতিবেগের কোটি ভাগের ১ ভাগ যদি কম বেশি হতো তবে এই (habitable universe) বাসযোগ্য বিশ্বজগত সৃষ্টি হতো না। এ প্রসঙ্গে পল ডেভিস বলেন “ সুক্ষভাবে হিসেব-নিকেশ করে দেখা যাচ্ছে যে বিগব্যাং এর পর বিশ্বজগতের সম্প্রসারনের গতির মাত্রা ছিলো ঠিক ততোটুক্ইু যে মাত্রায় সম্প্রসারিত হওয়া শুরু করলে বিশ্বজগত তার নিজস্ব মাধ্যাকর্ষন-শক্তির কবল থেকে মুক্ত হয়ে অনন্তকালের জন্য সুশৃংখলভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে। সম্প্রসারণের গতিবেগ সামান্যতম কম হলে এ বিশ্¦জগত ধ্বংশ হয়ে যেতো। আবার গতিবেগ সামান্যতম বেশি হলেও বিশ্বজগতেরর সবকিছু বহু আগেই বিশৃংখলভাবে ছড়িযে ছিটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতো।,,,,,,,, স্পষ্টতই বিগ ব্যাং কোনো সাধারণ বিস্ফোরন ছিলো না, ছিলো সুক্ষভাবে পরিকল্পিত একটি বিশাল ঘটনা - W.R.Bird, The Origin of Species Revisited, Nashville: Thomas Nelson, 1991; originally published by Philosophical Library in 1987, p.405-406) পল ডেভিসের ভাষায় “সাধারন বিস্ফোরন ছিলো না, ছিলো সুক্ষভাবে পরিকল্পিত একটি বিশাল বিস্ফোরন”। বিস্ফোরনের গতিবেগের উপর নির্ভর করেছিলো সম্প্রসারনের গতিবেগের হার। বিস্ফোরনের গতিবেগ যদি কম হতো তবে সম্প্রসারণের হার হতো কম গতিতে ফলে আইনষ্টাইনের রিলেটিভিটি সুত্র অনুযায়ী মহার্কষ আকর্ষনের কারনে বস্তু সমূহ সম্প্রসারিত হতে থাকলেও সৌরজগতের নির্মানের আগেই পুরো মহাবিশ্ব পূনরায় আবার সংকুচিত হয়ে মিশে যেতো। আর যদি বিস্ফোরনের গতিবেগ বেশি হতো তবে সমস্ত কিছু এলোপাথালি ভাবে ছড়িযে ছিটিয়ে যেতো। অতিরিক্ত সম্প্রসারণের কারনে বস্তুকনাগুলো একে অপরকে আকর্ষন করে সৌরজগত, তারকারাজি, ছায়াপথ এসব গড়ে উঠার সুযোাগ পেত না। এ্ই সকল বিভিন্ন প্রাপ্ত তথ্য থেকে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে এই সম্প্রসারনের হার ঠিক ততটুক্ইু যতটুকু হলে মহাবিশ্ব নিজের মহাকর্ষ আকর্ষন শক্তি অতিক্রম করতে পারে। এই কারনেই পল ডেভিস এটিকে একটি পরিকল্পনার ফসল বলে অভিহিত করেছেন। তার ধারনা এটাকে সৃষ্টি করা হয়েছে হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার ফল নয়। পল ডেভিস বলছেন: “এমন ধারণা মনে স্থান দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা খুবই কঠিন যে, বিশ্বজগতের বিদ্যমান কাঠামো যা কিনা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনের ব্যাপারের স্পর্শকাতর যত্নের সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করেই অস্তিত্বে আনা হয়েছে।”-(Paul Davies, God and the New Physics, New York: Simon & Schuster, 1983, p.189)



একই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে দেখা যায় জর্জ গ্রিনস্টেইনকেও (George Greenstein)। আমেরিকার এই জ্যোতির্বিদ প্রফেসর তার The Symbiotic Universe নামক গ্রন্থে বলছেন: “(বিশ্বজগতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা) বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করবার পর, তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মনে যে-চিন্তার উদয় হয় তা হচ্ছে: (বিশ্বজগত সৃষ্টির পেছনে) নিশ্চয়ই কিছু অতিপ্রাকৃতিক এজেন্সির(some supernatural agencies) হাত আছে।”-(দেখুন: Hugh Ross, The Fingerprint of God, 2nd ed., Orange, CA: Promise Publishing Co., 1991, p.114-115)

পাঠক, এই মহাবিশ্ব এত বিশাল কেনো? তার উত্তরে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আন্দ্রে লিন্ডে বলেন একটি আদেশ মহাবিশ্বকে সকল দিক থেকে সমানভাবে সম্প্রসারিত করে তোলে। আন্দ্রে লিন্দের এই প্রশ্ন আমাদের নতুন এক চিন্তার সম্মুখিন করে তোলে। মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য ও সুক্ষ সমন্ময় এর জন্য প্রয়োজন ছিলো একটি আদেশ। তাহলে কে করলো সেই আদেশ? “সেই মহান সত্ত্বা আকাশসমূহ ও পৃথিবী সমূহকে সৃষ্টি করিয়াছেন অতি সুক্ষ সমতায়। তিনি যখন আদেশ করেন হও, অমনি হয়ে যায়।(৬.৭৩-আল কোরআন) লক্ষ্য করুন আল কোরআন আমাদের সেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আল কোরআন বলছে একজন মহান সত্ত্বা সুক্ষ সমতায় মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছে। সৃষ্টি করতে তিনি যখন হও বলে আদেশ করেন তখন সৃষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন থাকে সৃষ্টির শুরুতে যে বিস্ফোরনের প্রয়োজন হয় সেই বিস্ফোরনের জন্য দরকার পড়েছিলো বিশাল এক শক্তির যে শক্তি সঠিক সুক্ষ সমতায় এই মহাবিশ্বকে সম্প্রসারিত করে। আল কোরআন প্রকাশ্যে ঘোষনা করছে “আমি আকাশমন্ডল সৃষ্টি করেছি আমার শক্তি বলে এবং আমিই মহাসম্প্রসারণকারী।” (৫১:৪৭ আল কোরআন) অতএব শক্তি কোথা থেকে এলো এই প্রশ্নেরও একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাক্ষা আছে আল কোরআনেই। অতএব একটি কমান্ডিং প্রক্রিয়া এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির মূল কারন। যদি কমান্ডিং প্রক্রিয়ার কথা ভাবতে হয় সেক্ষেত্রে মহাবিশ্ব এর বাইরে অবস্থিত বিশাল শুন্যতায় মাঝে অতিলৌকিকিক কোন চেতনার উপস্থিতি আমাদের স্বীকার করতে হবে। হয়তো আমরা সেই চেতন সত্ত্বাকে উপলদ্ধি করতে পারছি না বলেই তার অস্তিত্ব স্বীকার করি না।

“তাহারা যে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে নাই –তাহা অস্বীকার করে”( আল কোরআন ১০:৩৯)।

(চলবে)

পর্ব-1
পর্ব-2
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৫৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×