somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্দর্ভ ১ ।। পৃথিবীর এই সব গল্প

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাপী হাসান একবার ব্লগে terribly horrible পদের বাংলা করেছিলেন 'বীভৎসয়ংকর'। কাছের মানুষজন আমার ঘুমের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে, দূরের মানুষগুলিকে দ্রুত বোঝাতে গেলে বাপীদা'র আবিষ্কৃত এই শব্দ ছাড়া আসলে অন্য কোন গতি নেই। আমার ঘুম প্রকৃত অর্থেই বীভৎসয়ংকর। টানা দু-তিন দিন বিরামহীন ঘুম আমার পক্ষে সম্ভব। খুবই সম্ভব।

একবার হল কি, দুপুর-দুপুর সময়ে আমাদের ষোল তলা ভবনের ওপরের দিকের একটি ফ্ল্যাটে আগুন লেগে গেল। আগুন লাগলে বেশীরভাগ সময় কোন এক অজ্ঞাত কারনে বিল্ডিং-এর সব ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলি একসঙ্গে অকেজো হয়ে যায় অথবা উধাও হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হল। দালানে আগুনের চাইতেও দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ল আগুন লাগার খবর। সেই খবর শুনে সব ফ্ল্যাটের লোকজন তীব্র ভয় এবং আতংক নিয়ে হুড়মুড় করে সিঁড়ি ভেঙে নীচে নেমে এল।

আমাদের বাসার বুয়া যখন হাঁপাতে হাঁপাতে নীচে নেমে এসেছে তখন জানা গেল আগুন-টাগুন কিছু লাগে নি। 'ফলস এলার্ম' ছিল। আমি তখনও ১৩ তলার ফ্ল্যাটে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছি। আমার খোঁজ পড়ার পর বুয়া জিভ কাটল, 'তারে তো উঠাই নাই'। কেন উঠাও নি -এই প্রশ্নের উত্তরে সে যা বলল তার মর্মার্থ হচ্ছেঃ কোন এক পুরাকালে আমার শিবনিদ্রা ভাঙানোর কারনে তাকে আমি ঝাড়তে ঝাড়তে বলেছিলাম, "যদি দ্যাখেন রোজ কেয়ামত- ভূমিকম্প হচ্ছে- তখনও আমার ঘুম ভাঙাতে আসবেন না।"

বুয়ার স্মৃতিশক্তি দেখা গেল মাশাল্লাহ ভাল। সে আমার মুখের ঐ আপ্তবাক্য মনে করে রেখেছে এবং সুযোগ বুঝে আমাকে শিক্ষা দেয়ার ধূর্তচেষ্টা করেছে। বিকেলবেলা ঘুম থেকে উঠে আমি শুনি অগ্নিকান্ডের খবর। ফলস এলার্মের কারনে আমি এখনও টিকে আছি -এটা একটা আনন্দময় ঘটনা ! এলার্ম আসল হলে ইতোমধ্যে আমার ভবলীলা সাঙ্গ হত। কবি দেবী রায়ের ভাষায়ঃ

সাঙ্গ হল ভবলীলা
তাতে কার
কি-ই বা এসে যায়!

এবারের ভূমিকম্পগুলিও বাংলাদেশের জন্য 'ফলস এলার্ম' ছিল। তাও একবার না, দু-দুবার। দানে দানে তিন দান হওয়া বাকী। সেই মিথ্যা ঘন্টাও অবশ্যি ভালভাবেই রাজধানী শহরের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছে। শহরের চার-পাঁচটা ভবন নাকি হেলে পড়েছে। পাঁচ-ছ'জন মারা পড়েছে। ভূমিকম্পের আসল উৎপত্তিস্থল নেপালে অবস্থা সবচে করুণ, ধরণী-মা ক্ষেপে উঠেছেন। ভূত্বকের টেকটনিক প্লেটগুলি উন্মত্তের মত পা ঠুকেছে। মোমেন্ট ম্যাগনিচিউড এক-দুই-তিন করে বাড়িয়ে গেছে ক্রমশঃ। অল্প সময়ের মধ্যেই নেপালের সেইসব সাবডাকশন জোন হয়ে উঠেছে মৃত্যুকূপ। শেষ খবরে দেখলাম সেখানে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।

খবরটি নিতান্তই দুঃখজনক। কিন্তু আমরা জাতী হিসেবে ব্ল্যাক হিউমারে বেশ পারদর্শী। আমরা ভয়াবহ ঘটনাগুলিকে নিয়েও নির্বিকার রসিকতা করতে পারি। তাই ফেসবুকে ফলস এলার্ম নিয়ে প্রথমদিন বেশ একটা হাস্যরসের অবতারণা হয়ে গেল। 'অচিনপুর' উপন্যাসে পড়েছিলাম, দুঃখের দিনে নাকি হো-হো করে হাসতে হয়- সৃষ্টিকর্তাও যাতে বিরক্ত হয়ে বলেন, এ ব্যাটাকে দুঃখ দিয়ে কোন লাভ নেই- এর কোন ভাবালেশ নেই ! হাজার রকম দুঃখ, দারিদ্র্য, শোষনের মধ্যে নিষ্পেষিত বাঙালী বোধহয় এইজন্যেই এখনও সার্ভাইভ করে আছে।

স্বভাবরসিক বাঙালির কিছু অংশ আবার অস্বাভাবিক রকম সিরিয়াস। দ্বিতীয় ভূমিকম্পের পর এরা দ্রুত একটা দল বানিয়ে ফেলল, যে দলের লোকগুলির কাজ হচ্ছে পরিবারের বৃদ্ধ জ্ঞানী সদস্যটির মত মাথা নাড়তে নাড়তে ক্ষুব্ধ ভঙ্গিতে বলাঃ সবকিছু নিয়ে হাসি-তামাশা করা ঠিক না। বাসে এবং চা-খানায় এই ধরনের মানুষের সংখ্যা বেশী।

এই দুই দল বাদেও আরো দুটি দল আছে। প্রথম দল ভূমিকম্পের সাথে জড়ায় ধর্মকে, দ্বিতীয় দল রাজনীতিকে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় কি করছে এই নিয়ে তাদের তুমুল মাথাব্যথা। অথচ এবছর দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৫৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে, ত্রাণ তৎপরতা চালাতে সরকার ৫৫০ কোটি টাকা খরচ করে চারটি হেলিকপ্টার কিনছে -এইসব বিষয়ে এদের যৎসামান্য ধারনা নেই। সরকারের গুনগান (?) এরা নির্বিঘ্নে মনভরে গেয়ে যাচ্ছে।

এই চার দলের মধ্যে আমি কোন দলে? খুব সম্ভবতঃ প্রথম দলে। আমি নিজে কখনোই সিরিয়াস মানুষ না। আমি মুজতবা আলী পন্থী। তার মত সরস চিন্তা করে আনন্দ পাই-

"কিন্তু পাঠক, তোমার মস্তিষ্কে, হৃদয়ে যে প্রশ্ন আমারো তাই। কী দরকার সেই মহাপ্রলয় ঠেকিয়ে? যেখানে পৌঁচেছি, চাল নেই, তেল নেই, মাছ নেই- "

আমারও ঐ ধারা। পৃথিবীর বয়েস নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই- কে সারা সারা। তারপরও মাঝেমাঝে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, আমাদের এই দেশের বয়েস আর কত যুগ? ইতালির পম্পেই শহরের মত যদি কোন একটা শক্তিশালী দুর্যোগ হঠাৎ করে এসে পুরো দেশকে মাটিচাপা দিয়ে যায়? দুবার দুষ্ট রাখালের 'বাঘ-বাঘ' চিৎকার শোনা হয়ে গেছে। সত্যি সত্যি বাঘ এলে ভয়াবহতাটা কেমন হবে কল্পনা করলে শিউরে উঠতে হয়। প্রথমেই তাসের ঘরের মত পুরোনো ঢাকা ধ্বসে পড়বে। এরপর বাকী সব পুরোনো বাড়ি। ধুলোয় একাকার হয়ে যাবে এখানকার নীল আকাশ। আমাদের যত দুঃখ-ব্যথা-বেদনার গল্প চাপা পড়ে থাকবে সেই ধুলোর নীচে।

আচ্ছা, এটুকুই কি সান্তনার কথা নয়? আমাদের সত্যিকার অর্থে যা ছিল, আছে -সে তো এই গল্পগুলিই !

"...পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল;-
এশিরিয়া ধুলো আজ, বেবিলন ছাই হয়ে আছে।"

===============
২৭ এপ্রিল, ২০১৫
সোমবার
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৩:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×