তানিয়া হবে নাকি কিছু? সাথে সাথে শর্মিলা ফুঁসে উঠলো, ওরে বাব্বা, এ যে পুরোদস্তুর ......
তানিয়া, এখানে কিস্যু পাবো না, চলো ডার্লিং আমরা বের হই।
চলো ডার্লিং।
বাইরে প্রবল বৃষ্টিতে আমি আর তানিয়া বেরিয়ে পড়লাম। সোবহান মিয়া, তানিয়াদের রিক্সাওয়ালা আমাদের নিয়ে চলতে থাকলো। বৃষ্টি! আহ্! সম্রাটের ব্যাগ থেকে বোতলটা নিয়ে এসেছি। একটু খেলাম।
ফুয়াদ, সিনেমা বানাচিছস কেন?
তো কী করব? তোর মত কবিতা লিখব?
অন্য কিছুও তো করতে পারিস।
পারি। কিন্তু এটা মনে হয় সবচেয়ে ভাল পারব।
তুই এটা করবি না।
করতে হবেই। আমি সাইফের মতো মিশিগান যেতে পারবো না। আমাকে এখানেই থাকতে হবে। I have to fight! আমার ভেতরে যেটুকু ক্রিয়েটিভিটি আছে তা দিয়ে নিদেন পক্ষে দেশের মুভি ইন্ডাস্ট্রিকে নাড়া দিতে পারবোই। হয়তো আমি সত্যজিৎ, গৌতম বা মৃণাল হতে পারবো না। হয়তো কেন, কোন দিনই আমি রোমান পোলানস্কি হতে পারব না। কিন্তু ঐ যে আছে না, শ্যাম বেনেগাল, খান আতা, এদের সমকক্ষ অন্তত হতে পারব। দেখ তানিয়া, আমার সামর্থ্য কম, কিন্তু ইচ্ছে প্রচুর। স্বপ্নটা আমার সবসময়ই হাতের মুঠোয় থাকে। আশাকে কখনই কাছ ছাড়া করি না, আকাঙখার কখনই বিশ্রাম নেই আমার কাছে।
আর স্বপ্ন ভেঙে গেলে?
আশা থাকবে। তানিয়া থাকবে। নতুন করে স্বপ্ন গড়বো।
বোতলটা ফেলে দে, নেশাটা বেশী হয়েছে, এর জন্যই দেশের ফিল্মের এ অবস্থা, খালি বোতল আর বোতল। এটাই নাকি ক্রিয়েটিভিটি!
কিছু না বলে রিকশা থেকে নেমে পড়লাম। বৃষ্টিতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কিছুই দেখছি না প্রায়, মনে হচেছ স্বপ্নটা ভেঙে পড়ছে। নিজেকে অˉি—ত্বহীন লাগছে, বহুদিন আগে, যখন সূচীর মামা আমাকে প্রায় খোঁড়া করে দিয়েছিল তখনও এত অসহায় হইনি। জানিনা কী হবে----------। ‘আকাস্খার কোন বিশ্রাম নেই‘ চেচিয়ে উঠলাম। সোডিয়ামের আলো আরো ঝাপসা হচেছ। বৃষ্টি কী বাড়ল নাকি? অন্ধকার কেন চারদিকে?
প্রায় সাতদিন পরে জ্ঞান ফিরলো আমার, নার্ভাস ব্রেক ডাউন, মদ, জ্বর-সব মিলিয়ে বিশ্রী অবস্থা শরীরের। সুমিত আর শর্মিলী সকালে ছিলো। সুমিতকে বললাম দোস্ত মাফ কর। আর তোরে জেলাস করমু না। সুমিত তার সেই মুচকি হাসিটা ছিল।
------তানিয়া-----
একটু আগে স্বপ্নটা আবার দেখলাম, সাদা ফুলে ভরে আছে কফিন, শুধু মুখটা বেরিয়ে আছে মুখটা চিনতে পারছি না কার। কয়েকটা ফুল লাশের রক্তে ঘেমো লাল হয়ে যাচ্ছে। কী দুর্বিসহ এই---- আহ্ প্রচন্ড তেষ্টা পাচেছ আমার শুধুই মনে হচেছ যে একটা ভুল করতে যাচিছ। নাহ্ : পানি খেতে হবে। এই হয়েছে এক সমস্যা আমার। পিরিয়ডের সময়টাতেই এই আজগুবি স্বপ্নগুলো দেখি। সাইফের সাথেও বহুদিন দেখা হচেছ না। মনে পড়ছে স্কুলে থাকতেই সিগারেট ওকে ধরেছিলো। খক করে কাশতো আর সিগারেটে টান দিতো, আবার কাশতো। হঠাৎ হঠাৎ কী পাগলামি উঠতো, বলতো নে দুইটা টান দে। পাগল! খিলগাঁতে ওরা আর আমরা পাশাপাশি থাকতাম। সে সময়, অর্থাৎ ক্লাস এইটে থাকতেই ও কবিতা লিখত। পরে দেখে দেখে আমিও চেষ্টা করলাম। মাঝেমাঝে ওর, আমার আর মেহেদীর লেখা একই পেপারে ছাপা হয়। ওরা যে কী লেখে তা বুঝি না। ওদের মতো দুর্বোধ্য লেখা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভবও না। মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম ওরা যে লেখে তাতে কী হবে? ম্যাট্রিকের সময় টেষ্টের পর পরই আমি আর সাইফ একসাথে পড়ালেখা করতাম, তখনও অবশ্য বাবা বেচে ছিলেন। হঠাৎই মনে পড়ল মায়ের কথা, মাকে ছোট বেলা থেকেই দেখছি শয্যাশায়ী। অবশ্য বাবার পরই মা মারা যান। তা-ও তো দু'বছর হয়ে গেল। অনার্সের পরীক্ষাটা দিলাম, তার পরপরই।