এক নব বিবাহীতা মেয়ে প্রথম শ্বশুর বাড়ি থেকে তার বাপের বাড়িতে আসে । তখন তার মা খুব আগ্রহ ভরে জানতে চায় যে ঐ বাড়িতে তার কেমন লেগেছে ?
.
তখন মেয়ে বলেঃ ভালো। তবে মানুষগুলো কেমন যেন। পরিবেশটাও কেমন কেমন । আমার ভাল লাগে না ।
মেয়ের ভেতর একধরনের হতাশা দেখতে পায় তার মা।
.
ঐ মা মেয়েকে আর কিছু বলল না । মেয়ে মনের আনন্দে বাপের বাড়ি বেড়াতে লাগল । বিয়ের পর মেয়েটি এখানে এসে দেখতে পেল অন্যরকম এক ভালবাসা । যা আগে কখনও পায়নি । সবাই ওকে খুব স্নেহ করে ভালবাসে । ও যখন যা চাইছে তাই হাজির হয়ে যাছ্ছে । সে যেন তার চির চেনা বাবার বাড়িতে মহামান্য অতিথি । সবার স্নেহ আর ভালোবাসা ওর জন্য উপচে পড়ছে । এই সময় শ্বশুর বাড়ির কথা মনে হলে মনটা আনমনে ভারাক্রান্ত হয়ে যায় । এখানে ( বাপের বাড়ি ) কত চেনা মধুর পরিবেশ আর ওখানে ( শ্বশুর বাড়ি ) সবাই অচেনা সবাই কতৃত্ব পরায়ন। দু একজন আছে খুবই স্নেহশীল । তারপরও কেমন যেন পর পর ।
.
দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। মেয়ের চলে যাবার সময় চলে আসে। চলে যাবার ঠিক আগের দিন মা তার মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করেন। মা চুলায় আগুন জ্বালিয়ে পানি ভর্তি একটা হাড়ি তুলে দেন এবং তা গরম করতে থাকেন। একসময় যখন হাড়ির পানি ফুটতে শুরু করল, তখন মা হাড়িতে গাজর, ডিম আর কফির বিন দেন। এভাবে প্রায় পনের বিশ মিনিট জ্বাল দেন । তারপর মা আগুন নিভিয়ে চুলা থেকে হাড়িটা নামান। এরপর হাড়িতে জ্বাল দিয়ে সিদ্ধ করা গাজর, ডিম এবং কফির বিন ঢেলে একটি বাটিতে রাখেন।
.
এবার তিনি মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন
.
ঃতুমি এখান থেকে কি বুঝতে পারলে আমাকে বল” ?
.
মেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে-
.
ঃআমি দেখলাম তুমি গাজর, ডিম আর কফির বিন সিদ্ধ করে একটা বাটিতে নিয়েছ।
.
মেয়ের কথা শুনে মা বললেন-
.
ঃহ্যাঁ, তুমি ঠিকই দেখেছ। তবে এতে তোমার জন্য একটা উপদেশ আছে । যা বোঝানোর জন্য আমি এগুলো নিয়েছি। “ আমি তোমাকে এখন যে কথাগুলি বলব, আমার মাও ঠিক এইভাবেই আমাকে এ কথাগুলি বলেছিল। আমি জানিনা কথাগুলি তোমার কতটুকু উপকারে আসবে, তবে আমার জীবনকে অনেক প্রভাবিত করেছিল”।
.
এবার আমার কথা গুলো খুব খেয়াল করে শুন। কেননা এই উপদেশই হয়ত তোমার নতুন জীবনের পথ চলাতে পাথেয় হবে । আর এই পাথেয় তোমাকে করবে স্বনির্ভর ,আত্মবিশ্বাসী।
.
বাটিটার দিকে দেখ এখানে রাখা জিনিসগুলো তাদের পূর্বের স্বকিয়তা হারিয়ে অন্য রকম হয়ে গেছে। সিদ্ধ করার আগে গাজর ছিল মোটামুটি শক্ত ধরনের, ডিম ছিল খুব হালকা যার ভিতরটা তরল , আর কফির বিন ছিল খুবই শক্ত। কিন্তু যখন এগুলিকে সিদ্ধ করা হল তখন তিনটি জিনিসের তিন রকম হয়ে গেল। গাজর খুব নরম হয়ে গেল, আর ডিমের তরল অংশটা শক্ত হয়ে গেল আর কফির বিন পানিতে মিশে সুন্দর ঘ্রান আর মিষ্টি স্বাদে পরিনত হল।
.
মা কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে বলতে লাগলেন-
.
“তুমি যদি তোমার স্বামীর বাড়িতে নিজেকে কঠিনভাবে অর্থাৎ কাচা গাজরের মত উপস্থাপন কর, তবে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে তোমার সংঘর্ষ হবে তখন তোমার কাঠিন্যর কারনে সবাই তোমাকে মানসিক ও কেউ কেউ শাররিক ভাবে আক্রমন করে তোমাকে দুর্বল করে ঠিক সিদ্ধ গাজরের মতই নরম করে ফেলবে। এতে তোমার ব্যক্তিত্ব হারিয়ে যাবে ।
.
যদি তুমি নিজেকে নরম-ভঙ্গুর করে উপস্থাপন কর অর্থাৎ কাচা ডিমের মত। তবে সবাই অসহায় ও দুর্বল ভেবে তোমাকে কব্জা করে ফেলবে , এরপর আঘাতের পর আঘাত করে তোমার হৃদয়কে একসময় কঠিন করে ফেলবে ঠিক ডিমের মত।
.
কিন্তু তুমি যদি তোমার ভালবাসা দিয়ে নিজেকে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মিশিয়ে দিয়ে তার অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পার তবে পরিবেশ সুন্দর হয়ে উঠবে ঠিক যেমন কফির বিন গরম পানির সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে পানিকে সুস্বাদু আর চারপাশকে মিষ্টি ঘ্রানে ভরিয়ে দিয়েছে ।
.
এভাবে যদি তুমি নিজেকে শ্বশুর বাড়িতে মিশাতে পার তাহলে এই বাপের বাড়ির চেয়ে তোমার শ্বশুর বাড়িকে বেশি আপন মনে হবে। ওখানে সবার স্নেহ ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় তুমি হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি বিবাহীত নারী ।
.
গল্প থেকে শিক্ষাঃ
.
সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে কফির বিন হও, ভুলেও গাজর অথবা ডিম হওয়ার চেষ্টা করো না। তবেই ভালো থাকবে তুমি বিশ্বের যেকোনো জায়গায়, যেকোনো মানুষের কাছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


