somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনসিন্দুকের এককণা

২৭ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনের পর দিন বাসের জানালা দিয়ে ভোরের লালচে কুসুম রঙা সূর্যটাকে ঘুম ঘুম চোখে দেখতে দেখতে কবে যে ওর প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছি নিজেই বুঝিনি। সুর্যের নানান রুপ এখনও টানে আমাকে। কষ্ট করে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে বাস স্ট্যান্ডে দাড়ালেও সিটে বসেই একেকদিন একেক লালগোত্রীয় রঙের, ঢঙের (থালাটা ধীরে ধীরে বৃত্তের গন্ডি ছেড়ে বেরিয়ে পড়তো) সূর্যিমামাকে দেখার জন্য আহলাদের ঘুম কোথায় যে পালাতো। ছোটবেলা সকালবেলার সাধের ঘুমের দরুন কতদিন যে একটুর জন্যে স্কুলবাস মিস করে মন খারাপ করেছি তার ইয়ত্তা নাই। নাহ্‌ , পড়াশুনোর জন্য না, স্কুল শুরুর আগের সময় আর ছুটির পরের জম্পেশ আড্ডার সময়গুলো মিস করলাম এই ভাবনায়। অন্যদের আগে স্কুলে যাওয়া আর দেরি করে বাসা পৌছানো স্কুলবাসের বদৌলতেই শুধু সে সুযোগটুকু এসেছিলো, অনেকসময় বিরক্তি আনলেও তার সাথে সুখস্মৃতি জড়িয়ে আছে অগনিত।

যাওয়ার পথের অসাধারন সকালটা উপভোগ করার পাশাপাশি স্কুল কেন্টিনে বিক্রীর জন্য রাখা গল্পের বইগুলো ফ্রি'তে পড়তে পাওয়া ছিলো বোনাস, এস্যাম্বলির আগে ফেরত দেবার শর্তে কতো কতো বই যে কেন্টিনের মামু'র কল্যানে পড়েছি!! আবার সবার আগে খেলার কোর্টগুলোর দখলও নিতাম আমরা বাসওলীরা। বাস্কেটবলের কোর্টটা থাকত খাঁ খাঁ, পিটিম্যাম জোর করে না আনলে তার ধারে কাছে ঘেষতো না কেউ, যদিও হাডুডু, চি-বুড়ি, কুতকুত- এর কোর্টগুলো দখল নেয়ার জন্য কত্তো কাড়াকাড়ি পড়ত।

বাসায় ফেরার সময়টা ছিলো দুনিয়ার মজার, গোমড়া মুখে সিট আকড়ে বসে থাকা নয়, সারাটা পথ সিট ধরাধরি মারামারি লেগেই থাকত, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সিট আর মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী থাকত সবসময়। ছোটকালে খারাপ লাগত, দাড়িয়ে ঘুমাতে দারুন অপছন্দ আমার, কিন্তু ওই কাজটাই করতে হতো অগত্যা। সেই ভোর ছয়টায় উঠে সারাটা সময় হুটোপুটি (লেখাপড়া বললাম না) সেরে সাড়ে তিনটায় বাড়ি ফিরলে বাসে তো ঘুম আসাই স্বাভাবিক। অথচ এই সহজ ব্যাপারটা বুঝতো না সিনিয়র আপুগুলো, খোচাঁখুচিঁ চলত তুমুল। তাদের কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে সুন্দর মন্তব্য হলো - "এই আসছে টাট্টুঘোড়া ম্যারাথনে নামতে"। অনেক বিরক্ত হতাম, তখন কি ছাই জানতাম ঘোড়া দাড়িয়ে ঘুমাতে পারে!!! ঘুমের ঘোরে কতদিন যে আমাকে নির্দিষ্টের চেয়ে পরের স্টপেজে নামতে হয়েছে। আমাদের বাস ড্রাইভার ছিলেন বিহারী একজন, যার মুখটাকে এখন আমি মেলাই হিন্দীছবির অভিনেতা ওমপুরি'র প্রথমকালের সাথে, যখন তার মুখে দেড়'দু কেজি মাংশ অনায়াসে লাগানো যেতো দাগ পূরন করতে। অনেক কড়া ছিলেন ভালোই ধমক দিতেন আমাদের। আমার উল্টোপাল্টা কান্ডে হুমকি দিতেন অহরহই - "আব্বে! এ কল্লামপুরিয়া, থোমার নামে হামি ম্যাডোমের কাছে রাপোট করিবো", যদিও সে রিপোর্টের কার্যকারিতা দেখিনি কখনও। আমাদের রুটটাতে বাসে কোন টিচার আসতেন না, তাই উনিই আমাদের শাসনে আদরে আগলে রাখতেন, "মেয়েরা এমন করে না! এই চেচাঁমেচি বেশি হচ্ছে! ওমুক সিটের ওমুক, জানালা দিয়ে আর ঝুকবে!!!"

আস্তে আস্তে বড় হলাম, বাসায় ফিরে আসার সময়টা তখন মজাই মজা। কতো কতো দুষ্টুমি, শেষের সিটগুলো দখল করে বেসুরো গানের হুল্লোড়। আমাদের খুব ইচ্ছে করতো বাসের দরজায় দাড়িয়ে হেলপারি করার, হেলপাররুপি বুয়াটাকে একটু সাহায্য করার। কিন্তু যতবারই বলতে যেতাম ধমক অনিবার্য ছিলো। তাও তাও জিজ্ঞাসা করতাম, আশা ছিলো একবার না একবারতো হ্যা বলতেই পারেন, আর আমরাও আদমজী'র ছেলেগুলোর মতো নিজেদের বাসের দরজায় ঝুলবো, ধমাধম বাসে চাপড় দিবো। আদমজী'র বাসের সাথে কিযে অদ্ভুত দ্বন্দ ছিলো! আমাদের বাস দেখলেই তাদের স্পিড হয়ে যেত তুমুল, আর আমাদের বেরসিক ড্রাইভার দিতো আমাদের বাসের স্পিড কমিয়ে। তবে একবার জাহাঙ্গীর গেটটার কাছে জ্যামে পড়ে আমাদেরটা ছিলো সামনে আর ওরা পেছনে আর জ্যাম ছাড়তেই দেখা গেল আমাদের বাস স্টার্ট হচ্ছে না, আমাদের প্রেস্টিজের চৌদ্দটা বেজে গেল, কিছুপরেই আমাদের খুশি দেখে কে যখন বুঝলাম ছেলেরা বাস না ধাক্কা দিলে সামনে যেতে পারবে না। অনেক গাইগুই করে রাগিমুখ নিয়ে ওদের বাসধাক্কা আর পেছনের জানালা দিয়ে আমাদের মুখ ভেংচি - অনেকদিনের মজার টপিকস ছিল আমাদের।


অনেকপরে জেনেছিলাম, আমার জীবনের সবচেয়ে অন্যতম বৃষ্টি ভেজার আর বাসের হেলপারি করার (ক্লাশ টেনের শেষদিন ওই সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা) স্মৃতিময় ওই বাসের ড্রাইভার ছিলেন আমাদেরই এক ক্লাশমেটের নানা। আমাদের প্রতি তার আদরের কারনও কি তাই ছিল কিনা কে জানে, তবে এখনও মনে পড়ে ওনার আদুরে ধমক - "আব্বে! এ কল্লামপুরিয়া, থোমার নামে হামি ম্যাডোমের কাছে রাপোট করিবো"।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১১:৩১
৩২টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×