somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাকী কথন . . . .

১৩ ই জুন, ২০০৯ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হু হু করে বাস চলছে। পাশের সিটে বসে আছে উকিলের মুহুরীসাব। আচঁলের খুটঁটা সতর্কতার সাথে বুকের কাছে ধরে মুমিনা বেগম ভাবছে সামনের দিনগুলোর কথা। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে, মুখে কোন শব্দ নাই। এই টাকা ক'টা ঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হবে, জানতে পেরেছে বাড়ি গেলে উকিলসাব আরো পন্চাশ হাজার দিবেন। এই দিয়ে শুরু করতে হবে আগামীর পথচলা। চরে এখন বাদাম, সয়াবিনের খন্দ চলছে সেগুলোতে কিছু টাকা লাগাতে হবে, আর সাথে কিছু জমি বন্ধক নিতে পারলে আসছে ধানের মৌসুমটাতে কিছু লাভের মুখ দেখবে, নিজের তো জমি-জিরাত কিছুই নাই। এসব করার পর চেষ্টা করবে বাছুর কেনার। এই করেই গড়তে হবে নাতিটার আসছে ভবিষ্যতের পথ। এখন ও পড়ছে কেলাস থ্রিতে, ইচ্ছা আছে ফাইপ পাস করানোর, তারপর একবেলা গন্জ্ঞের চা-দোকানে কাজে দেয়ার। কত কিসিমের লোকজন আসে ওখানে, দিন-দুনিয়ার চাল শিখবে, অন্যবেলা লেখা পড়া করলে করুক।

আচমকা বাস ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যেতেই মমিনার চলমান ভবিষ্যত ভাবনা থেকে বর্তমানে ফিরে আসে। এলাকার সবাই সবসময় বলে, "মমিনা এক ঘরে পা রাখলেই সেখানকার কড়িকাঠও গোনা বাদ রাখে না আর কোনটা কি কাজে আসবে তাও ঠিক করে ফেলে মূহুর্তেই"। সেই এখন ভীষন পরিস্হিতির মধ্যেও এমনসব পরিকল্পনা করছে কি ঠান্ডা মাথায়। গত ভোররাতে দারুন সুনিশ্চিত সুখের চিন্তায় বিভোর হয়ে বাসে চেপেছিলো ও আর এখন . . . . .

বছর দু'য়েক পর মেয়েকে দেখবে বিয়ের সাজে, বাদ্যবাজনা না হোক একটু বিয়ে আমেজে থাকে বাড়ি, কত খুশির এই ছবিটা ছোখে ভাসছিলো সারাটা পথ। যৌতুকের কারনে ছাড়ান পাওয়া মেয়েটা কপালে যে আবার ভালো বিয়ে আছে ভাবেই নাই। উকিলসাবের বৌ যখন খবরটা দিয়ে বললেন, "জলদি ঢাকা যা, তোর মেয়ের কাল বিয়া", লাগল যে আল্লাহ এবার গতি করলো ওর। তারপর থেকে কত দ্রুত সময় কাটলো বুঝেই নাই। এতসব কাজ যে এতো জলদি সমাধা করা সম্ভব জানতোই না। বাড়ি ফেরার ফিরতি বাসে উঠার জন্য আসার পথে এই ভ্যাপসা গরমের কালে হিমশীতল গাড়ীর ভেতরের পিছনের সিটে বসা কপাল বেয়ে ঘাম চুইয়েঁ পড়া খালাম্মার মুখ জুড়ে দুশ্চিন্তার ছাপ ফ্যাল ফ্যাল করে দেখতে দেখতে ভাবছিল মমিনা, - কেন ওনাদের দুশ্চিন্তা, এতো আশংকা, সবই তো হাতের মুঠোয় তাদের, সব, এমনকি মমিনাও।

দারোয়ান, ড্রাইভার যারা হাসপাতাল নিয়ে গেছে, ওখানকার ডাক্তারসাব যিনি গায়ে কাটা/ছেড়াঁ/থ্যাতলানো/মাথা ফাটা না দেখেও বলে দিলেন ছ'তলা থেকে পড়া লাশ, কিংবা সেই দারোগা যিনি খালুজানের আত্নীয় উকিলসাবের নাম শুনেই বললেন, "আরে, উনি তো আমার বড়ভাইয়ে মতোন, একই স্কুলের ছিলাম আমরা। কোন চিন্তা করবেন না" - সবার চেয়ে সুস্হির আছে মমিনা। অন্যরা কিভাবে চুপ আছে জানেনা, তবে খালাম্মা ওর কাধেঁ হাত দিয়ে বলল, "কি মেয়ে যে কাজে দিছো, কিছুদিন বাড়ি যায় না তাতেই উতলা হয়ে পড়ে বাড়ি থেকে পালাতে গেছে। তাই বলে কি ছ'তলা থেকে শাড়ি বেধেঁ লাফ দিবি নাকি? এখন পড়ে মরে কি ঝামেলায় ফেললো আমাদের! সবাই জেনেছে, তাও হাসপাতাল থেকে আত্নীয় ছাড়া লাশ ছাড়ছে না, তাই তোমাকে আনানো। তোমার অবস্হা তো আমি জানিই, চিন্তা করো না দাফন-কাফনের কাজ সমাধা করবো আমরাই, তোমার ভবিষ্যতের জন্য ব্যবস্হা ও করবো। এখন তোমার করণীয় কি বলো?"


দারোগার আর খালুজানের সাথে করে হাসপাতার থেকে মেয়েকে নিয়ে রাতে গোরস্তানে মাটি দেয়া পর্যন্ত শুধু একবার মেয়ের লাশটাকে বুকের মধ্যে ভরে - "ও মনা রে" বলে চিৎকার দিয়ে কেদেঁ উঠেছিলো মমিনা।



পত্রিকায় অহরহ গৃহকর্মীর মৃত্যুর খবর পড়ি, যার কোনই কুল-কিনারা হয়না পরবর্তীতে। Click This Link এমনি রিপোর্টটি পড়ে গল্পটা লেখা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৫
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×