
গত সেপ্টেম্বরে (২০২৩ সালে) বেশ ঢাক ঢোল পিটিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমনের ঘোষণা দিয়েছিলো ইউক্রেন, কিন্তু উক্ত অভিযান খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি। তখন ইউক্রেনের এক ব্যক্তির সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো আমি তাকে বলেছিলাম শীতের শুরুতে শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে ঢাক ঢোল পিটিয়ে এমন ব্যর্থ অভিযানের ঘোষণা দেয়ার মানে কি? সে বলেছিলো যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক কিছুই ঘটে যা দূর থেকে আমাদের মত সাধারণ লোকজনের আসল ঘটনা বুঝা বেশ কঠিন। মিডিয়া যখন ইউক্রেনের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রচার চালাচ্ছিলো উক্ত ব্যক্তিটি তখন আমাকে জানিয়েছিলো ইউক্রেনের মূল অভিযান নাকি এখনো শুরুই হয় নি আরও কয়েকমাস পর থেকে আসল অভিযান শুরু হবে। উক্ত সময় আমি ব্লগার সোনাগজীর পোস্টে মন্তব্য করেছিলাম যে এটা ইউক্রেনের ফলস অভিযানের ফাঁদ ছিলো মূল অভিযান আরও কয়েকমাস পর থেকে শুরু হবে। ঠিক তার মাস খানেক পর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং দ্রুতই তা বাস্তবায়নও হয়।
প্রায় এক বছর পর অবশেষে এ মাসের শুরুতে ইউক্রেন বাহিনী রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযান শুরু করে এবং গত ১২ আগষ্ট তারা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের ৩০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুঁকে পরে এবং ধীরে সামনে অগ্রসর হতে থাকে, বাধ্য হয়ে রাশিয়া উক্ত অঞ্চল থেকে কয়েক লাখ বাসিন্দাদেরকে সরিয়ে নেয় রাশিয়ায় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ আরও এক সেতু গুঁড়িয়ে দিলো ইউক্রেন এবং শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন বাহিনী পুরো কুরস্ক অঞ্চল দখলে নিয়ে নেয়, অঞ্চলটি এখন পুরোপুরি ইউক্রেনের দখলে রয়েছে। রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের দখল নিয়েছে ইউক্রেনের সেনা।

ছবি: ইউক্রেন বাহিনীর আক্রমনে লন্ডভন্ড কুরস্ক।
কুরুস্কের বাসিন্দা ম্যার্গারিটা বলেছেন: গত শুক্রবারে যখন সাইরেন বাজলো তখন মানুষ শান্ত ছিলো, তারা নিজেদের কাজ করেছে, বাজার করেছে, সবই ছিলো স্বাভাবিক।পরে সীমান্ত থেকে খরব এলো ইউক্রেনের সেনারা আক্রমণ করেছে।

ছবি: ইউক্রেন বাহিনীর আক্রমনের চিত্র।
রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা কেন এই হামলা সম্পর্কে আগাম তথ্য দিতে পারলো না তা নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ব্যপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কুরস্কের বাসিন্দা জুলিয়ান বলেছেন- কোন গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের আগাম কোন সতর্কতা জারি করতে পারেনি। শ্বেতলানা বলেছেন- কোথায় গেলো আমাদের সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছে।

ছবি: বাসিন্দাদের পালানোর হিড়িক।
কুরস্কের এক বাসিন্দা আ্যান্টোলিনা বছেন- তার বোন সুদঝাতে থাকেন কিন্তু সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে তাই তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমনের পর মানুষ যে যেভাবে পারছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

ছবি: অস্থায়ী ক্যম্পে বাসিন্দাদের আশ্রয়।
কুরুস্কের আরেক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকশা করে বলেন- আমাদের সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে। তিনি তার ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন তবে তিনি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত তার পালিত হাঁস মুরগি নিয়ে।

ছবি: অর্থ ও রেশনের প্রতিক্ষায় করুস্কের বাসিন্দা।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিন্তু বহু মানুষ এখনো রেশন পাননি, এক বাসিন্দা জানিয়েছেন এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে, ফলে তা যথেষ্ট নয়।

ছবি: রাশিয়ার সেনাবহর আক্রমনের শিকার।
করুস্কে ইউক্রেনিয় বাহিনী ঢুকে পড়ার পর তাদের প্রতিহত করতে রাশিয়ান বাহিনী চলে আসলে তারাও আক্রমণের শিকার হয়।
এদিকে ইউক্রেন বাহিনীর এ অভুতপূর্ণ সাফল্যেে তাদের সেনার প্রশংসা করেছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ''যুদ্ধে কোনো বিরতি থাকে না। কোনো ছুটি থাকে না। আমাদের সেনা চারদিক দিয়ে কুরস্কে ঢুকে পড়েছে এবার রাশিয়ান সেনাদের চরম মূল্য চুকাতে হবে। তিনি পশ্চিমা বিশ্বের পাশিপাশি দক্ষিন এবং পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কাছ থেকেও বেশি বেশি অর্থ এবং অস্ত্র সহায়তা পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




