
যা ঘটেছিল সেদিন
বুধবার রাতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা থানায় মামলা করতে যান। সেখানে এই প্রতিবেদকও উপস্থিত ছিলেন। থানায় ভুক্তভোগী শারমিন, তাঁর জা আকলিমা ও স্বপনের ভাবি সোনিয়া খাতুন এই প্রতিবেদকের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দেন। শারমিন বলেন, প্রতিবেশী শাহিনের অটোরিকশা গ্যারেজের শব্দদূষণ নিয়ে তাঁর সঙ্গে ঘটনার দিন সকালে একটা ঝামেলা হয়। তারপর তারা ওই ছাত্রদের নিয়ে এসে তাঁদের বাড়িতে হামলা করে।
শারমিন বলেন, ‘ছাত্ররা এসে আমাদের বাইরে যেতে বলে। বলে, “ক্ষমতায় এখন আমরা।” ভয়ে আমি আমার জাকে (আকলিমা) মানুষ ডাকতে বলি। শুনে ওরা বলে, “মানুষ ডাইকি কী করবে, শেখ হাসিনাকেই আমরা গদি থেকে নামাইছি। তোর জা মানুষ ডাইকে কী করবে, ছাত্রদের কিছু করতে পারবে? তোর কোন বাপ আছে নিয়ে আয়।’ আমি বললাম, ‘তোমরা না ছাত্র। আমি তোমাদের মায়ের মতো। তখন ধমক দিয়ে বলল, “এই চুপ”! সানিয়া ভাবি ওদের অনুরোধ করে বললেন, “তোমরা একটু থামো বাবা, ওরা বাচ্চাদের একটু খাওয়াচ্ছে।” ওরা বলল, “খাওয়াচ্ছে? এক মিনিট সময় দিলাম। এক মিনিটের মধ্যে বের না হলে আমরা ভাঙচুর করব। ওদের মারধর করব।” তখন আমরা ভাবিকে বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। ওরা ভাবিকে মাটিতে ফেলে নির্যাতন করে। এক মিনিট পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা ভেঙে আমাদের দুজনকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে বের করে বিদ্যুতের খাম্বার সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগল।’
শারমিন আরও বলেন, ‘কিশোরী মেয়ে এসে দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দিল। তার মা হাতে তালি দিতে লাগল। মারের দৃশ্য ভিডিও করতে করতে বলল, “নেটে ছেড়ে দিব।” ছাত্রদের দলে একজন মেয়ে ছিল, মেয়েটি দূর থেকে এসে আমার পেটের ওপরে জোরে লাথি মারল। আমার তিনটা বাচ্চা অপারেশন করে হয়েছে। সেই পেটে লাথি মারল।’ বলেই শারমিন কাঁদতে লাগলেন। বললেন, ‘খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এলে ওরা পালিয়ে যায়।’
মীমাংসার অজুহাতে মামলায় ঢিলেমি
বাড়ির মালিক স্বপন হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাতে থানায় মামলা করার সময় ওলিউল্লাহ নামের একজন ছাত্র পরিচয় দিয়ে আবার মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে মামলা না করার অনুরোধ করেন। তাঁর কথামতো ওই রাতে মামলা না করে বাদী রফিকুল ইসলাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে চলে আসেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর হামলাকারী দুজনকে নিয়ে আসাম কলোনির ওই বাসায় আসেন ওলিউল্লাহ। ওই দুজন হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র শুয়াইব আহমেদ। বাড়ি নগরের বিনোদপুর এলাকায়। অন্যজন হলেন শাহ মখদুম নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী কোয়েল আক্তার মনিক। তাঁর বাড়ি নগরের চণ্ডীপুর ভাটাপাড়া এলাকায়। এ সময় হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া শুয়াইব আহমেদের সঙ্গে বাসার ভেতরে কথা হয়। তিনি বলেন, তাঁদের ভুল বুঝিয়ে ডেকে আনা হয়েছিল। তাঁদের ভুল হয়েছে।
মীমাংসার সময় মহল্লার উত্তেজিত লোকজন বাসা ঘেরাও করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে রাত নয়টার দিকে ছাত্রদের কৌশলে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় ওয়ালিউল্লাহ একটি সাদা কাগজে লিখে যান, ‘কেউ যদি বাড়ির ক্ষতিপূরণ না দেয়, আমি ওয়ালিউল্লাহ নিজেই দিব।’ তবে আজ শনিবার সকালে ওয়ালিউল্লাহর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
প্রথম আলো থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



