১।
মেয়েকে রুমে একা রেখে বাথরুমে গিয়েছিলাম। দুই মিনিট পরে বের হতে গিয়ে দেখি দরজা বাইরে থেকে লক। পিলে চমকে উঠে খেয়াল করলাম পকেটে তো মোবাইলও নাই। আমি গেট নক করছি আর আমার মেয়ে দরজার ঐ পাশ থেকে মিটিমিটি হাসছে। আমি কাতর কন্ঠে বললাম, মাগো, দরজাটা খোলো মা!
মেয়ে হাসতে হাসতে বলল, না বাবা! খুলব না।
আবার রিকোয়েস্ট করলাম, অনুরোধ করলাম, হুমকি দিলাম, ধমক দিলাম - কোন লাভ হলো না। সেই মুহুর্তে মনে পড়ল স্কুলে একটা ভাবসম্প্রসারন শিখেছিলাম, "কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে" সেই ভাবের এহেন সম্প্রসারন আমি কল্পনাও করি নাই।
শেষমেষ বললাম, মা, আমি কান্না করব কিন্তু।
মেয়ে চুপচাপ।
আমি আবার বললাম, আমি কিন্তু কান্না করব।
মেয়ে বলল, কিভাবে ওয়া, ওয়া করে।
মাননীয় স্পীকার হয়ে ভাবলাম কি সর্বনাশ ব্যাপার। মেয়ে আমার কান্না দেখতে চায়। মনে মনে প্রমোদ গুনলাম। বললাম, হ্যাঁ, ওয়া ওয়া করে কাঁদব।
আমি দেখব বাবা! মেয়ের কন্ঠে কিছুটা উত্তেজনা টের পেলাম।
আশার আলো দেখতে পেয়ে বললাম, তাহলে গেট খুলে দাও মা!
কিছুক্ষন নিরবতা। তারপর গেট খোলার শব্দ পেয়ে জানে পানি আসল। দরজা খুলে বের হতে না হতেই ও বেশ কৌতুহলী চোখে আমাকে জিজ্ঞেস করল, কই বাবা! ওয়া ওয়া করে কাঁদছ না কেন। দু চোখে প্রচন্ড আগ্রহ দেখে আমি হেসে ফেললাম। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম, কন্যা উহার মাতার হৃদয় পাইয়াছে। হাজার অনুনয় না করিলে চিড়ে ভিজে না।
তবে আশার কথা, 'মেয়েরা' নিষ্ঠুর হবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু কন্যারা নিষ্ঠুর হয় না। কারন ইহা প্রকৃতি বিরুদ্ধ।
২।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেলের একটা ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানের নাম Taboo (ট্যাবু)। পৃথিবীর নানারকম অস্বাভাবিক সামাজিক রীতি বা সংস্কার, মানসিক অবস্থা বা বিশেষ অভ্যাসের নাম ট্যাবু। জনৈক ব্যক্তির সাথে আড্ডার সময় খানিকটা জ্ঞান ঝাড়ার উদ্দেশ্য বেশ গম্ভীর কন্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-ভাই ট্যাবু সম্পর্কে জানেন?
তিনি সাথে সাথে উচ্চস্বিত কন্ঠে আমাকে জবাব দিলেন, আরে!! জানুম না ক্যান? হিন্দি সিনেমার খুব জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। একটা গান আছে, রাহ মে উনসে মোলাকাত হো গ্যায়ি- এই ছবিতে অভিনয় করছিল। সেই রকম মারাত্মক গান রে ভাই।
আমি কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে বললাম, বসেন ভাই, একটু পানি খেয়ে আসি।
ইহার শিক্ষা হলো - মানুষ বুঝে আপনাকে পান্ডিত্য দেখাতে হবে।
৩।
কিছুদিন আগে এক দম্পতিকে দেখলাম সাইকেলে চড়ে কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রের বিষয়টি নিশ্চিত হলাম ঝুলানো দুইটি টিফিন ক্যারিয়ার দেখে। স্বামী সাইকেল চালাচ্ছেন এবং তাকে পিছন থেকে আঁকড়ে বসে আছেন তার স্ত্রী। দেখে মনে হলো তারা কোন গার্মেন্টসে কাজ করেন।
এই খন্ড দৃশ্যের সবচেয়ে দূর্দান্ত অংশটকু হচ্ছে, ঠোঁট গোল করে শিশ দেয়ার সময় "স্বামী" লোকটির লাজুক সুখী চোখের সাথে আমার অবাক চোখের চোখাচোখি এবং আমার অবাক দৃষ্টি দেখে স্বামীর পিঠের আড়ালে স্ত্রীর হাসি গোপন করার প্রানান্ত চেষ্টা।
আমি হাসি দিয়ে হাত নাড়লাম। তারা হাসতে হাসতে চলে গেলেন। ভাবতে ভালোই লাগে এই মিথ্যে কথার ব্যস্ত যান্ত্রিক শহরে এখনও সুখদের বসবাস আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৩ রাত ১:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




