আমার মেয়ে হঠাৎ করে কাছে এসে বললো, বাবা, আমি 'মুসলিম'।
আমি চমকে উঠে ভাবতে লাগলাম, আমার বাচ্চা এটা কিভাবে শিখলো?
মনে মনে সত্যি কিছুটা বিরক্ত হলেও ওর পিঠে হাত রেখে বললাম, না বাবা। ছোট বাবুদের কোন হিন্দু মুসলিম নেই। বাবুরা শুধুই বাবু।
আমার মেয়ে আমার দিকে কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর সরে গেলো। কিছুক্ষন খেলার পর দেখলাম ও খেলনা ফোন হাতে নিয়ে বলছে, হ্যালো ম্যাডা্ম...... ইরিবিরিকিরি....... (বাচ্চাদের ভাষায় কি যেন বলল) এসেছে, বাসায় আসতে দিবো?
আমি বেশ কৌতুহল নিয়ে ব্যাপারটা দুর থেকে লক্ষ্য করছিলাম। তারপর দেখলাম ও খেলনার একটা অংশকে পাইপের মত সামনে ধরে এদিক সেদিক নাড়ছে আর মুখ দিয়ে কেমন যেন একটা ফিসফিস শব্দ করছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি করছ মা?
মেয়ে বলল, আমি ছাদের গাছে পানি দিচ্ছি বাবা।
সাথে সাথে মুসলিম তত্বের ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
মুল ব্যাপারটা হলো - আমাদের বাসার কেয়ারটেকারের নাম মুসলিম। বাসায় কেউ আসলে বা বিভিন্ন সময়ে নানান প্রয়োজনে তিনি বাসায় ফোন করেন এবং আমাদেরও কিছু প্রয়োজন হলে তাঁকে ফোন করি। আম্মার অনেক কাজ তিনি সম্পাদন করেন। বাচ্চারা সাধারনত ক্ষমতাবান কারো চরিত্র সেজে খেলতে পছন্দ করে। সম্ভবত আমার মেয়ের চোখে আমার বাসার কেয়ারটেকারকে বেশ ক্ষমতাবান বলে মনে হয়েছে। তাই খেলার সময় এই চরিত্র ধারন করে খেলছে। দিন শেষে বুঝলাম, বাচ্চাদের সাইকোলজি খুবই ইন্টারেস্টিং একটি বিষয়।
আমি এই বিষয়টি ফেসবুকে শেয়ার করার পর নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। অধিকাংশ মানুষ ব্যাপারটার বেশ ইতিবাচকভাবে গ্রহন করলেও কেউ কেউ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখেন নি এবং অপ্রসাঙ্গিকভাবে এখানে ধর্মীয় পরিচয়ের বিষয়টি টেনে এনে শুধু 'মুসলিম' বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
আমার কাছে ছোট শিশুদের মাঝে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করা বা এই সম্পর্কিত ধারনা দেয়াটা আমার কাছে খুব অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। আমাদের ধর্মীয় শো অফের বলি শিশুরা হবে - এটা আমি মানতে পারি না। আমাদের মধ্যে একটি শ্রেণী আছে, যারা ধর্মকে কেন্দ্র করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বা সেরা হিসাবে প্রমান করতে চায়। এই শ্রেণী খুব সহজকেই অন্যকে অধার্মিক বা ধর্মহীন বলে তকমা দেয়, অন্যকে যে কোন বিষয়ে নসিহত প্রদান করেন। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের সামান্য অভিজ্ঞতায় লক্ষ্য করেছি, যাদের নিজস্ব ব্যক্তি স্বত্তা পরাধীন ও নিজস্ব মুল্যবোধ কোন কারনে অন্যের মাধ্যমে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত এবং নিষ্পেষিত তারা সহজেই মানুষকে তাদের নিজস্ব বিচার কাঠামোর মধ্যে ফেলে বিচার করে এবং অন্যের স্বাভাবিক জীবন আচরনের সাথে নিজের নিষ্পেসিত জীবন আচরন একটি অনাকাংখিত ডিলেমা সৃষ্টি করে। যার ফলে মানুষ নানান ধরনের শো অফ করে সান্তনা খুঁজে।
যাইহোক, ফেসবুকে প্রকাশিত পুরো লেখা পড়ে আমাদের এক ব্লগার আপা বলেছেন, 'মুসলিম তো মুসলিমই ঠিকই বলেছে'।
আমি জবাবে বলেছি, আপনি সম্ভবত কোন লেখা আপা পুরো পড়েন না এবং ধর্ম নিয়ে আপনার কিছু দৃষ্টিকটু পর্যায়ের শো অফ আছে। আমি চাই আমার বাচ্চা যেন এই ধরনের দৃষ্টিকটু পর্যায়ের সকল ধর্মীয় শো অফ করা থেকে বিরত থাকে। ধর্ম একটি ব্যক্তিগত চর্চা ও বিশ্বাসের বিষয়। আমার বাচ্চা মুসলিম অবশ্যই কিন্তু আমি ছোট বাচ্চাদের মধ্যে ধর্মীয় ভেদাভেদের যে বিষয়টা আনতে চাই না। এটা প্রয়োজনীয় এবং জরুরী শিক্ষা। আপনি যদি ধর্মের কথাও বলেন, তাহলে ধর্মে ৭ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে ছাড় দিতে বলা হয়েছে। ফলে আপনি যে কথাটি বললেন, সেটা কোনভাবেই গৌরবের নয়।
বিষয়টা এখানে শেয়ার করলাম কারন কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত কচলাকচলি করলে, স্বাভাবিক কৌতুকবোধ থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২৩ রাত ১:৫১