বিগত যৌবনা শীতের এই মধ্য দুপুরে আপনি হয়ত এক রাশ আদুরে আলসেমীতে ভর করে ব্লগের পাতায় চোখ বুলাচ্ছিলেন, হঠাৎ এই শিরোনামটি চোখে পড়ায় আপনি কিছুটা চমকে গেলেন বা আগ্রহবোধ করলেন। লিংকটিকে ক্লিক করে পোস্টটি পড়া শুরু করলেন। আর যদি এই কাজটি আপনি করে থাকেন, তাহলে আপনি আমার টি জি - অর্থাৎ টার্গেট অডিয়েন্স বা এই লেখাটি যাদের জন্য লিখেছি, আপনি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত।
এবার আসুন দেখি, কিভাবে আপনি এই দলের ভেতর অন্তর্ভুক্ত হলেন?
আমি আমার লেখার টার্গেট অডিয়েন্স বা পাঠকদের কিছু নির্দিষ্ট প্যারামিটার যেমন বয়স, লিঙ্গ, পড়াশোনা, কোথায় বাস করছেন, পেশা, আয় সহ আরো বেশ কিছু মাধ্যমে নির্ধারন করেছি। যেমন, আমি যাদের জন্য এই লেখাটি লিখেছি, তাদের আনুমানিক বয়সের ধাপ নির্ধারন করছি ২২ - ৩৫ বছর। এর বাইরেও আরেকটা টার্গেট গ্রুপ আছে, তারা মুল টার্গেট গ্রুপ না হলেও, তারাও এই লেখাটি আগ্রহ নিয়ে পড়তে পারে। এই গ্রুপের বয়স নির্ধারন করেছি ৫৫ - ৬৫ বছর।
১৮ - ৩৫ নির্ধারন করার কারন হচ্ছে এই গ্রুপের বয়সের মানুষজন সদ্য পড়াশোনা শেষ করছে বা পড়াশোনার মধ্যের আছে বা যাদের পড়াশোনা সম্পন হয় নি তারাও এই গ্রুপে আছে। এই গ্রুপের বয়সের মানুষ বেকারত্বে ভুগতে পারে, নতুন চাকরির সন্ধান করতে পারে, ভালো যোগ্যতা না থাকার অভাবে ভুগতে পারে। আর ৫৫ - ৬৫ হচ্ছে সর্বভুক পর্যায়। এই বয়সের মানুষদের অধিকাংশই অবসর জীবন যাপন করছেন, অনেকে সময় কাটাতে নতুন কিছু করতে চাইছেন, তাই তারাও এই লেখাটির শিরোনাম দেখে আগ্রহ বোধ করবেন।
এর পর চলুন ব্যাখ্যা করি আয়ের প্যারামিটার। এই বিষয়টা বেশ জটিল। বিভিন্ন বয়স এবং আয়ের অনুপাতকে সঠিকভাবে অ্যানালাইসিস করে তারপর আয়ের টার্গেট গ্রুপ নির্ধারন করতে হয়। যেমন এই লেখার জন্য আমার আয়ের টার্গেট রেঞ্জ হচ্ছে তিনটি।
১৮ - ২২ বছর - আয় ০ - ১২ হাজার টাকা।
২২ - ২৮ বছর - আয় ১২ - হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা
২৮ - ৩৫ বছর - আয় ২৫ হাজার - ২৫ হাজার টাকা।
একই ছকে আরো একটি গ্রুপ পড়ে যায়, যার জন্য আমাকে কোন বাড়তি এফোর্ট দিতে হয় নি, তাঁরা হচ্ছে
বয়স - ৪৫ - ৬৫ বছর । আয় ০ - ৩০,০০০ টাকা ( অবসর জীবন যাপন করছেন, পেনসন পাচ্ছেন)।
এইভাবে বিভিন্ন প্যারামিটার অন্যালাইসিস করে তারপর আমার লেখাটি প্রস্তুত এবং প্রয়োজনীয় শিরোনাম নির্ধারন করা হয়েছে। আর এই কাজটির অন্যতম নাম কপি রাইটিং। কপি রাইটিং করার সময় আপনাকে এই সকল বিষয়ের পাশাপাশি আরো বেশ কিছু বিষয়ে পর্যবেক্ষন ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর আপনার লেখাটি লিখতে হবে। কপি রাইটিং এর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার চাইতে বেশি মুল্যায়ন করা হয়, সঠিক লেখার। অর্থাৎ আপনার লেখার মাধ্যমে যদি নির্ধারিত টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে বেশি পৌঁছানো যায়, তাহলে আপনিই সই। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কপি রাইটিং শিখে আসার পর যদি আপনার লেখা সঠিক ক্লায়েন্টের কাজে না পৌঁছায় তাহলে সেটার কোন মুল্য নেই।
আসুন দেখি আমার মুল লেখার কন্টেন্ট কি ছিলো? আমার মুল লেখাটি হচ্ছে -
"কপি রাইটিং কি এবং কপি রাইটিং শিখে আপনি কিভাবে সাবলম্বী হতে পারে।"
আমি এই বিষয়ে পরবর্তীতে লিখব। যদি ব্লগারদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায় তাহলে এই বিষয়ে একটি সিরিজ পোস্ট লিখব। চলুন তার আগে জানি, কপি রাইটিং কি?
খুব সহজ ভাবে বলছি, যে লেখার মাধ্যমে কোন পন্য বা সেবার প্রতি কারো আগ্রহ বৃদ্ধি পায় সেটাকেই কপি রাইটিং বলে। কপি রাইটিং সরাসরি পন্যের বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিং এর সাথে জড়িত। ভালো কপি রাইটিং না হলে আপনার প্রডাক্ট বা সার্ভিস মানুষের কাছে পৌঁছাবে না।
যেমন ব্লগারদের বলা হয়েছিলো ব্লগারদের কপি রাইটিং স্কিল দেখতে চাই। ব্লগাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে লিখছেন। তবে অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে বা এই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধারনা না থাকার কারনে অধিকাংশ লেখাই কপি হিসাবে ভীষন দুর্বল। তবে কপি রাইটিং সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকা স্বত্তেও ব্লগারদের এই লেখার চেষ্টার জন্য আশা করি কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সাধুবাদ জানাবেন।
কপি রাইটিং করতে হলে আপনাকে জানতে হবে, আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ইউএসপি বা ইউনিক সেলিং পয়েন্ট গুলো কি? আপনি কি সেল করতে চাচ্ছেন? কাদেরকে আছে সেল করবেন?
আসুন সামহোয়্যারইন ব্লগের ইউএসপি গুলো কি কি?
১) এটা মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের একটি উন্মুক্ত মঞ্চ।
২) এটা কমিউনিটি ব্লগ, অর্থাৎ এখানে যে কেউ তার মত প্রকাশ করতে পারেন।
৩) এটা বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাংলা ব্লগ
৪) সৃজনশীলতা চর্চার শ্রেষ্ঠতম স্থান
৪) লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিকের হাতে খড়ির স্থান।
৫) মানবিক উদ্যোগে অংশগ্রহন করার সুযোগ।
৬) সমাজের নানান স্তরের মানুষের মানসিকতা সম্পর্কে জানার সুযোগ।
এবার দেখে নি, সামহোয়্যারইন ব্লগের টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কিত কিছু তথ্য।
১। এই ব্লগে পুরুষদের উপস্থিতি শতকরা প্রায় ৮২ ভাগ এবং নারী ব্লগারদের উপস্থিতি ১৮ ভাগ।
২। ২৫ - ৩৪ বছরের অধিকাংশ মানুষ ব্লগের প্রতি বেশ আগ্রহী।
৩। যে সকল লোকেশনে ব্লগারদের সংখ্যা বেশি, ঢাকা চট্রগ্রাম, খুলনা।
৪। বিদেশে সৌদি আরব, আমেরিকা, ভারত, ওমান, কাতার, দুবাই এবং সুইডেন।
৫। সামহোয়্যারইন ব্লগের সম্ভাব্য পাঠক বা মার্কেট সাইজ ৩৪,২০০,০০/- থেকে ৪০,৩০০,০০০/- জন
৬। বর্তমানে এক্টিভ আছে ১,৩৯,৫৮৩ জন।
আমি মানুষের জ্ঞান চর্চা বা জানার আগ্রহকে সম্মান করি। তবে অনেকেই আছেন বর্তমানে কোন জিনিস নতুন করে জানতে চান না। এবং সেটা কেউ করলে তা নিয়ে তারা অভিযোগ করেন, ব্যাঙ্গ করেন। তেমন ব্লগে দেখলাম দুই একজন ব্লগার ব্লগারদের এই কপি লেখার উদ্যোগকে নেতিবাচকভাবে দেখছে।
আগে একটা সময় অভিযোগ করতাম, এখন আর করি না। কারন বাংলা ব্লগ আমাকে অসীম ধৈর্য্য শিখিয়েছে। ফলে, মানুষরুপী কারো ছাগলামী দেখে আগে আমি বিরক্ত হতাম, এখন তাকে ছাগল ভেবে সান্তনা পাই। কারন মানুষ ছাগলামী করলে মানা যায় না, কিন্তু ছাগল ছাগলামী করবে এটাই তো সহজাত বৈশিষ্ট্য। অবশ্য এই হিসাবে ব্লগ আপনার ধৈর্য্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে - এটাই একটা ইউনিক সেলস পয়েন্ট হতে পারে।
যাইহোক, আসুন কিছু স্যাম্পল 'কপি' লেখার চেষ্টা করি -
১। 'গঠনমুলক সমালোচনায় নিজের লেখাকে পরিশুদ্ধ করুন' ।
পাঠক প্রিয়তা যাচাই এবং নিজের লেখা সম্পর্কে সঠিক মতামত জানার জন্য ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের চাইতে ব্লগ অনেক বেশি কার্যকর।
২। 'মত প্রকাশের স্বাধীন মঞ্চে আপনাকে স্বাগতম'
ব্লগে মত প্রকাশের সুবিধা হলো আলোচনা এবং যৌক্তিক বিতর্কের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানকে আরো বেশি পোক্ত করে নেয়া যায়।
৩। 'বাংলা ব্লগে ইউনিক কন্টেন্ট লেখার চর্চার মাধ্যমে উম্মোচিত হোক আপনার সুপ্ত প্রতিভা।
সারা বিশ্বে দিন দিন কন্টেন্ট রাইটারদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও বাংলা কন্টেন্ট রাইটারদের দারুন চাহিদা। শুধুমাত্র বাংলা ব্লগে কন্টেন্ট লেখার মাধ্যমে আপনি এই সেক্টরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন।
এখানে সঠিক ছবি, লোগো এবং প্রয়োজনে কিছু ইনফো গ্রাফিক্স ব্যবহার করে সামহোয়্যারইন ব্লগের পেইজে শেয়ার করলে আশা করি বেশ ভালো অর্গানিক রিচ পাওয়া যাবে। যদি বিজ্ঞাপন করি তাহলে টিজির বিভিন্ন প্যারামিটার সেট করলে দিলে আরো বেশি পেইড রিচ পাওয়া যাবে।
মনে রাখবেন, কপি রাইটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি গুরুত্বপুর্ন অংশ। আমি খুব সহজভাবে আপনাদেরকে এই বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১:০০