আমার এক ঘনিষ্ঠ অগ্রজ বন্ধু এবং এক সময়ের সামহোয়্যারইন ব্লগের জনপ্রিয় একজন ব্লগার সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। পোষ্টের বিষয় হচ্ছে ধর্ম আর রাজনীতির প্যারাডক্স নিয়ে। লেখাটা পড়ে মনে হলো, আমি ঠিক যা লিখতে চাচ্ছিলাম, তিনিই তাই লিখে দিয়েছেন।
এই লেখাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্যারাডক্স হচ্ছে ধর্ম আর রাজণীতি৷ উদাহরণ দেই। ভারতের সবচেয়ে নিগৃহিত সম্প্রদায় হচ্ছে দলিত। যারা ধর্মে হিন্দু কিন্ত এরাই উচ্চ বর্ণের কাছে সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত। ভারতের প্রচুর হোটেলে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের প্রবেশাধিকারও নেই। অথচ ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ব বাদের জনক প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিন্ত উচ্চ বর্ণের হিন্দু নয়৷ উনার গোত্র হচ্ছে OBC ( Other Backward Class) যারা সামাজিক ভাবে এবং শিক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা গোত্র।আবার ঐতিহাসিক ভাবে শিখ এবং হিন্দুরা পরম বন্ধু।
অথচ গত এক বছরে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW পাকিস্তান, ইউকে, কানাডায় অন্তত ৮ জন স্বাধীন খালিস্তান ভূমি দাবী করা শিখকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। সেটা এই মোদী সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্দেশে। আবার পিছনে যদি ফিরি, তাহলে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ দাবী করার সময়ে এই ভারতই ছিলো বাংলাদেশের বন্ধু এবং যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ কারী দেশ।
সৌদি আরব হচ্ছে নবীজির দেশ। ইসলামের প্রবর্তক দাবী করা সবচেয়ে অগ্রসর মান দেশ, অথচ বাংলাদেশী মহিলা গৃহ কর্মীরা একই বাসায়, একই ছাদের নীচে একই রাতে, একবার বাবার, আরেকবার ছেলের কাছে ধর্ষিতা হয় প্রতিদিন কিংবা ভোগ্যপণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় সৌদিদের ঘরে ঘরে৷ এরা শুধু যে বাংলাদেশী গৃহকর্মীদের ভোগ করে হালালত্ব কায়েম করে তা কিন্ত নয়, 'বিধর্মী' ফিলিপাইনী গৃহ কর্মীরাও কিন্ত এদের লালসার চরম শিকার৷ অথচ ইসলামে বিবাহ বহির্ভুত যৌন সংসর্গকে,মানুষ হত্যার পরে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে। দুই দিন আগে আরেকটা ভিডিওতে দেখলাম, মক্কা শরীফ তওয়াফের সময় সৌদি নৈতিকতা পুলিশ, হাজীদের গলা থেকে তাবিজ খুলে ফেলে দিয়ে বলছে এটা "শিরক" অথচ আবদ্ধ ছাদের নীচে, নির্বিচার সংগমে এদের ধর্মত্ব ক্ষুণ্ণ হয় না। গণিতে যেটা মিলেনা সেটা হলো, এই সৌদিতেই রসুল (স এর জন্ম এবং ওফাত।
এই সৌদির পূণ্য ভূমিতেই ইসলামের পাচ স্তম্ভের এক স্তম্ভ হজ করতে হয়, যেটা পালন না করলে যে কোন মুসলমান নিজেকে সাচ্চা মুসলমান দাবী করতে পারেনা। এই সৌদি কতলের শাস্তি কতল কে বলে ইসলামী শরিয়া আইন আর এই সৌদির কাবা শরীফের রক্ষক MBS ( মোহাম্মদ বিন সালমান) এর নির্দেশে, তুর্কীতে সৌদি ভিন্ন মতাবলম্বী জামাল খাশোগীকে টুকরো টুকরো করে এসিড দিয়ে গলিয়ে ফেলা হয় এবং গনতান্ত্রিক আমেরিকা আইন করে নিজ দেশে MBS এর ইন্ডেমনিটি( মানে বিচারযোগ্য নয়) ঘোষণা করে।
হিন্দু মুসলমান বাদ দিলাম, এই ভিডিও তে দেখুন, ইহুদীরা খ্রীষ্টান দের দেখে মাটিতে থুতু দিচ্ছে।
এই থুতু দেয়াটা কিন্ত মানবিক ঘৃণা নয়, এটা হাজার বছর ধরে আচরিত, খ্রীষ্টান দের দর্শনে মাটিতে থুতু ফেলতে হয়- এটা ইহুদী ধর্মীয় চর্চা।
আবার হামাস যখন ইস্রাইলকে আক্রমন করলো এটার আগেই হামাস কিন্ত জানে, ১ ইসরাইলী মারা গেলে ১০০ মুসল্মান মারা যাবে কারণ খ্রীষ্টান আর ইহুদী হলো বন্ধু ( যদিও বহুল প্রচলিত আছে, যে জেসাস ক্রাইষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিলো রোমান রা কিন্ত জেসাস কে ধরিয়ে দিয়েছিলো ইহুদীরা)। তাহলে ইসরাইল আক্রমণ করে হামাস কি পক্ষান্তরে মুসলমান দের কতল করলো না!
হামাসের আক্রমণের পর পৃথিবীর বেশীর ভাগ খ্রীষ্টান প্রধান দেশ ইসয়ারেয়েল পাশেই আছে, কেবল সমর্থন দিয়েই নয়, বরং আমেরিকা ইতিমধ্যে অত্যাধুনিক মুসল্মান মারার অস্ত্রপাতি ইসরায়েলে পাঠিয়ে দিয়েছে।
ধর্ম আর রাজণীতির এই প্যারাডক্সে আমি আর এখন বিস্মিত হই না। কারণ সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ আর সর্ব নিকৃষ্ট সৃষ্টি
কিন্ত এই মানুষই৷
পরিণত বয়সে তাই ভাবতে বাধ্য হই, " কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যের ও ভিতর "
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৮